ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে আর কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

দেশে আর কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না ॥ কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশে আর কখনও নিরপেক্ষ সরকার হবে না, কোন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। বাংলাদেশে হবে সাংবিধানিক সরকার। সংবিধানের আলোকে আগামীর সকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচন কমিশনের ওপর কোন সরকারের, প্রধানমন্ত্রীর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা নাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সামরিক বাহিনী সকল কিছু স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং সুন্দর, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হবে। বিএনপিকে বলব- আন্দোলনের ভয় আমাদের দেখাবেন না, আন্দোলনে আমরা ভয় পাই না। বিগত ২০১৩ ও ১৫ সালে আন্দোলন মোকাবেলা করেছি, হেফাজতকে মোকাবেলা করেছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন অনেক শক্তিশালী। শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইল জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের আয়োজনে শ্রমিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুস সবুর খান বীরবিক্রমের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের এখনও প্রায় আড়াই বছর আছে। সেই নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপি আবারও আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। এর আগেও কয়েকবার আন্দোলনের নামে তারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। বিগত ২০০১ সাল থেকে বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দেশকে ধ্বংস করেছে। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের দেশে রূপান্তরিত করেছিল। তাই এখন তাদের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। তাদের সঙ্গে জনগণ নাই। তারা আন্দোলনের ডাক দেয়। কিন্তু কোন মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দেয় না। আবার আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে তারা। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এমন কোন শহর, গ্রাম, পাড়া ও বাড়ি নাই যেখানে একজন আওয়ামী লীগের কর্মী নাই। বড় বাড়ি হলে ছোটখাটো সমস্যা হয়। কিন্তু দল মূল নেতাদের হাতেই রয়েছে। আওয়ামী লীগ চলে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে, সংবিধান ও ঘোষণাপত্র অনুযায়ী। ’৪৯ সালে যেদিন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেদিন যে আদর্শের কথা বলেছিলাম এখনও সেই আদর্শেই আছি। চুরি করে বা অবৈধ পথে আওয়ামী লীগ কখনও ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে সবসময় জনগণের ভোটে। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। এর ভিত্তিই জনগণ ও সংবিধান। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তারপর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তিলে তিলে ধ্বংস করা হয়েছে। একদম সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এটা করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের একটিই লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছিল। এখন কিভাবে তারা দেশটাকে পাকিস্তানের একটি অঙ্গরাজ্য বানানো যায়, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করতে পারে। এবং তারা যেন বলতে পারে- বাংলাদেশ কখনও একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে টিকে থাকতে পারবে না। এই চেতনা ও লক্ষ্য নিয়ে তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। দীর্ঘ ২১ বছর একটানা এই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কখনও গণতন্ত্রের নামে, কখনও সামরিক শাসন জারি করে, সামরিক আইন দিয়ে দেশ পরিচালনা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য ছিল ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র মুক্ত, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। এই ২১ বছরে এই ধারা পিছিয়ে গিয়েছিল। ’৯৬ সালে আমরা প্রথম ক্ষমতায় এসেছিলাম। তারপর ২০০৮ সালে আবার আমরা সরকার গঠন করে উন্নয়নের দিকে একটা নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে, ভৌত অবকাঠামো, পদ্মা সেতু, আইসিটি, বিদ্যুত, কৃষি, শিক্ষা ও শিল্প প্রতিটি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশে আজ খাদ্যের কষ্ট নাই, খাদ্য নিয়ে হাহাকার নাই। এই করোনা মহামারীতে উন্নত দেশের মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। তারা চরম আতঙ্কে ও দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। জীবন ও জীবিকাকে সমন্বয় করে প্রধানমন্ত্রী দেশকে একটা ভাল অবস্থায় রেখেছেন। এরমধ্যে বিএনপি বারবার আন্দোলন করেছে। ট্রেনে আগুন দিয়েছে, ট্রেন লাইন তুলেছে, বিদ্যুতের লাইন কেটেছে, জীবন্ত মানুষকে গাড়ির মধ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। ২০১৫ সালে আবার ৯০ দিন হরতাল দিয়ে অবরোধের নামে ৫০০ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এরচেয়ে বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা আর কি হতে পারে। শত শত গাড়ি পুড়িয়েছে, ৯০ দিন দেশকে অচল করেছিল। এ সকল ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ আজ বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। আজকে আমরা একটা অহঙ্কারের জাতি, গৌরবের জাতি। আমরা এখন মাথা উঁচু করে কথা বলি। টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় টাঙ্গাইল জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বালা মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি, জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের এমপি, তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোঃ এনায়েত করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক, যুগ্ম-সম্পাদক নাহার আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন প্রমুখ।
×