ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে ৩৫টির

মদ-জুয়ার বিরুদ্ধে চলছে অভিযান, ৫৫ মামলা

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২২ জুন ২০২১

মদ-জুয়ার বিরুদ্ধে চলছে অভিযান, ৫৫ মামলা

শংকর কুমার দে ॥ ক্যাসিনো কাণ্ডের পর মদ ও জুয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব অভিযানে এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৫৫টি। এর মধ্যে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করা হয়েছে ৩৫ মামলার। বাদবাকি ২০ মামলার তদন্ত চলছে। এসব অভিযানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী এবং জনপ্রতিনিধি ধরা পড়েছিলেন ১৪ জন। জুয়ার আসর ক্যাসিনো, অস্ত্র, মাদক, বিশেষ ক্ষমতা আইন, মানি লন্ডারিং আইন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এসব মামলা দায়ের করেছে র‌্যাব, সিআইডি ও দুদক। কয়েক বছর আগেই মদ-জুয়ার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সেভাবেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চলছে বিশেষ অভিযান। কোন ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছাড় পাচ্ছে না সরকারী দলের নেতাকর্মীরাও। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্য মদ, জুয়ার মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, মাদক, বিশেষ ক্ষমতা আইন, মানি লন্ডারিং আইন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে যে ৫৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে তার মধ্যে ৩২টি করে র‌্যাব ও সিআইডি। ক্যাসিনো, অস্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা এবং মানি লন্ডারিং আইনে এসব মামলা করা হয়। অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়ে গ্রেফতার হওয়া ১৩ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাজধানীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় কয়েকজন নেপালী নাগরিককে পালিয়ে যেতে সাহায্য করায় পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এএসআই) পদাবনতি ও এক কনস্টেবলের ১০ বছরের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। পদাবনতি হয়ে এএসআই গোলাম হোসেন মিঠুর পদবি এখন নায়েক। ১০ বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে কনস্টেবল দীপঙ্কর চাকমার। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফকিরাপুলের একটি ক্লাবে র‌্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় ১৫ জন নেপালী নাগরিককে সেগুনবাগিচা থেকে পালাতে সহায়তা করেন এই দুই পুলিশ সদস্য। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে এএসআই মিঠু ও দীপঙ্করকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই নেপালী নাগরিকরা ক্লাবটিতে কাজ করতেন। সেগুনবাগিচায় একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুই পুলিশ সদস্য ও একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাদের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসার পরে নেপালীরা পালিয়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যও শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন। আধুনিক বৈদ্যুতিক জুয়ার বোর্ড চালাতে নেপাল থেকে দক্ষ পেশাদারদের ঢাকার ক্যাসিনোতে আনা হয়। ক্যাসিনোকাণ্ডে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তাঁর সহযোগী আরমান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, প্রভাবশালী ঠিকাদার যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম, কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম (ফিরোজ), মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা সেলিম প্রধান, দুই সহোদর এনামুল হক ভূঁইয়া (এনু) ও রুপন ভূঁইয়া, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান), তারেকুজ্জামান রাজীব ও ময়নুল হক (মনজু)। এঁদের বিরুদ্ধে র‌্যাব ১৮টি মামলা করে। অপরাধলব্ধ আয় ও দেশের বাইরে অবৈধ অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে ১৪টি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আর অবৈধ সম্পদ অর্জন করার অভিযোগে ২৩টি মামলা করে দুদক। মানি লন্ডারিং আইনে হওয়া ১৪ মামলার মধ্যে ১০টির অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। সম্রাটের বিরুদ্ধে দায়ের করা অর্থ পাচার মামরাটি অর্থের বিষয়ে তথ্য চেয়ে গত বছরের ২৫ অক্টোবর সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠির জবাব না পাওয়ায় মামলার অভিযোগপত্র আটকে আছে। আরমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানি লন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ পাচার অর্জনের মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক। মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সিআইডির মামলা তদন্তাধীন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে, ক্যাসিনোকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব ১৩টি ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ৫টি মামলার তদন্তভার পায়। তদন্ত শেষে ১৩টি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে র‌্যাব। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হকের বিরুদ্ধে করা চাঁদাবাজির মামলা ও দুই সহোদর এনু-রুপনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা তিনটির তদন্ত করা হচ্ছে। আর মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে ডিবি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে মামলার তদন্ত শেষ করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। মানি লন্ডারিং আইনে হওয়া বেশির ভাগ মামলার অভিযোগপত্র ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। আরেকটি অভিযোগপত্র চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর তদন্ত দ্রæত শেষ করে অভিযোগপত্র দেয়া হবে। মামলাগুলোর তদন্ত কাজ প্রায় গুটিয়ে এনেছেন বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি। জিরো টলারেন্স নীতিতে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ অভিযান পরিচালনা কওে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯-এর মধ্যেও ২০২০ সালে ৮৫ হাজার ৭১৮টি মামলা দায়ের করেছে। এতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৩ জন অবৈধ মাদক চোরাকারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৭৭৪ জন অবৈধ মাদক কারবারির বিরুদ্ধে ৩০ হাজার ৫৮৮টি মামলা হয়েছে। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে মাদক নির্মূল করতে হলে নিয়মিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে। সরকার ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
×