ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বর্ষায় রোপণের মৌসুম শুরু

শ্বাসকষ্টের কালে আদিপ্রাণ বৃক্ষ বন্দনা

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১৭ জুন ২০২১

শ্বাসকষ্টের কালে আদিপ্রাণ বৃক্ষ বন্দনা

মোরসালিন মিজান ॥ অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান/প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদিপ্রাণ...। সেই আদিপ্রাণ বৃক্ষের বন্দনা এখন চারদিকে। গাছ যে বড় প্রয়োজন দেশের মানুষ এখন তা বেশ উপলব্ধি করছে। সবুজ নিঃশেষ হতে দেখলে ফেটে পড়ছে প্রতিবাদে। এভাবে নানা ভাব ও ভাষায় বৃক্ষপ্রেম প্রকাশিত হচ্ছে। তবে রোপণের মাধ্যমেই হতে পারে প্রকৃত বৃক্ষ বন্দনা। আর সে বন্দনার মূল সময়টা এখন। সারাবছরই গাছ লাগানো যায়। লাগানো হয়ও বটে। এখন এই বর্ষার মৌসুম সবচেয়ে উপযোগী। কারণটি কারও অজানা নয়। বর্ষা মানেই বৃষ্টি। নিয়মিত বর্ষণে ভূমিভাগ সিক্ত হয়। নরম ও উর্বর হয়। আর এবার তো আষাঢ়ের আগে থেকেই টানা বর্ষণ। মাটি তাই প্রস্তুত। কোন রকমে চারা পুঁতে দিলেই হলো, টিকে যাবে। বীজও খুব সহজলভ্য এখন। ফলের বীজ তো ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। মধুমাসের ফলে বাজার ভর্তি। প্রচুর খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে। পাকা আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, জাম-জামরুল আরও কত কী! সুমিষ্ট ফলের স্বাদ গ্রহণ করার পাশাপাশি এ থেকে পাওয়া যাচ্ছে বীচিও। আম খেয়ে আঁটিটি কোথাও ছুঁড়ে মারলেই হলো, মাটি তা যতেœর সঙ্গে গ্রহণ করবে। অযত্নে পড়ে থাকা আঁটি থেকে, একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন, চারা গজাচ্ছে। কাঁঠালের বীচি তো মাটিতে পড়ার আগেই চারার রূপ ধারণ করছে। এমনকি আনারসের উপরিভাগ গোল করে কেটে পাতাসুদ্ধ ফেলে দিলে সেখান থেকে জন্ম নিচ্ছে গাছ। আর একটু পরিকল্পনা করে এগোনো গেলে তো কথাই নেই। সবুজে ভরে উঠবে চারপাশ। সব বিবেচনায় বর্ষায় নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে বৃক্ষ রোপণ। এ কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক শুরুটা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্ষার প্রথম দিনে গত মঙ্গলবার গণভবন থেকে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় সবাইকে তিনটি করে চারা রোপণেরও আহ্বান জানান। তাঁর ভাষায়, ‘একটা হচ্ছে বনজ, একটা ফলদ, একটা ভেষজ।’ সরকারীভাবে এমন বৃক্ষ বন্দনা ও আহ্বান জানানোর পর ইস্যুটি বেশ আদরনীয় হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে আসায় আহ্বানটি কানে তুলেছেন প্রকৃতির প্রতি উদাসীন মানুষরাও। তদুপরি বৃক্ষ বন্দনা অনিবার্য করে তুলেছে করোনার কাল। সেই কবে শুরু হয়েছিল কোভিড-১৯ সংক্রমণ, এখনও বিদায় নেয়ার নাম নেই। এরই মাঝে কত মানুষ, কত প্রিয়জন শ্বাসকষ্ট নিয়ে মৃত্যুবরণ করল। আহা রে, কী কষ্টের মৃত্যু! অক্সিজেনের অভাব কী, কত তীব্র তারা জীবন দিয়ে বুঝে গেছেন। যারা জীবিত তারাও কম-বেশি শিক্ষা নিয়েছেন। গাছ অক্সিজেন দেয়। গাছকে অনেকে তাই অক্সিজেন সিলিন্ডার মেনে রোপণে মন দিয়েছেন। নিসর্গবিদরাও বলছেন, বাড়ির চারপাশে, পুকুরপাড়ে, রাস্তার ধারে জায়গা খুঁজে নিয়ে বৃক্ষ রোপণ করুন। বনজ, ফলদ ঔষধি সব ধরনের বৃক্ষ জেনে-বুঝে লাগানো গেলে বেশি উপকার। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বৃক্ষ রোপণকে অভ্যাসে পরিণত করেছেন। শহরে, বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকায় এর ঘাটতি আছে। এখানে জায়গা কম। সীমিত পরিসর। তাতে কী? বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, টবে গাছ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন উদ্ভিদবিদরা। বলছেন, ফুল নয় শুধু, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো যেতে পারে। ছাদেই হতে পারে আম, পেয়ারা, আঙ্গুর, ডালিম, জাম্বুরা, মালটা, করমচা, জামরুল, আমলকীসহ নানা ফলমূল। যার যেমন পছন্দ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। বর্ষা মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় চারা উৎপাদনও বাড়িয়ে দিয়েছে ঢাকার নার্সারিগুলো। আগারগাঁও ও হাইকোর্ট এলাকার কয়েকটি নার্সারি ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে নানা জাতের চারা মজুদ করা হয়েছে। বিক্রিও বেশ ভাল বলে জানা গেল। আগারগাঁওয়ের দোকানি হামিদ বলছিলেন, কিছুদিন আগেও শুধু ফুল গাছ, পাতাবাহার বা অর্কিড বিক্রি করেছি আমরা। এখন যে গাছই চাইবেন, দিতে পারব। সব ধরনের গাছের চারা তৈরি আছে। গত কদিনে ক্রেতাও অনেক বেড়েছে বলে জানান তিনি। বৃক্ষ রোপণের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন কেএম সবুজ। তরুণ নার্সারি মালিকের কথাটি বেশ প্রণিধানযোগ্য। বলছিলেন, গাছের প্রতি মানুষের ভালবাসা দিন দিন বাড়ছে। এ ভালবাসা আসলে নিজেকে ভালবাসার অনুরূপ। আসুন তবে নিজেকে ভালবাসি। নিজের প্রয়োজনেই হোক বৃক্ষ বন্দনা।
×