ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বই নিত্য দিনের সঙ্গী

প্রকাশিত: ১৯:২৭, ৭ জুন ২০২১

বই নিত্য দিনের সঙ্গী

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বই পড়া মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে চিন্তা ও বোধশক্তি বাড়ে বলে মানুষের যুক্তিনির্ভর ভাবনাগুলো বিকশিত হতে থাকে। আর বই পড়লে মানুষের আলঝেইমার বা স্মৃতিশক্তি লোপ নামক মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় বৈশ্বিক মহামারীর এই কঠিন সময়ে মানুষকে পরম প্রশান্তির ছোঁয়া দিতে পারে বইয়ের পাতার কালো অক্ষরগুলো। তাই বইকে আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী করে আমরা কাটিয়ে দিতে পারি কঠোর লকডাউনের একাকী সময়গুলো। পৃথিবীব্যাপি অনেক মানুষ কিন্তু এখন তা করছে। বাংলা সাহিত্যের একজন কালজয়ী লেখক হচ্ছেন শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়। তাঁর অনন্যসাধারণ সৃষ্টি ব্যোমকেশ ‘বক্সী’-এর নাম অনেকেরই জানা আছে। কিন্তু ‘ছায়াপথিক’ নামের তাঁর যে অত্যন্ত উঁচু মানের একটি উপন্যাস আছে তা এই করোনাকালে ইউটিউবে অডিও বুক আঁতিপাঁতি করে না খুঁজলে হয়ত কখনও জানা হতো না। আপনি হয়ত মহামারীর নিত্যনতুন খবরে বিচলিত, জীবন নিয়ে কিছুটা হতাশ, সামাজিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন, কোভিড-১৯ আপনার পরিবারে কখন হানা দেয় এ নিয়েও বেশ দুশ্চিতায় দিন কাটাচ্ছেন, এ রকম একটি কঠিন সময়ে আপনি চোখ বন্ধ করে শোবার ঘরের আলো নিভিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিপিনের সংসার’-এর অডিও বুক শুনুন, দেখবেন কালজয়ী এই ঔপন্যাসিক মানুষের জীবনকে বিশ্লেষণ করার যে অসাধারণ নৈপুণ্যতা দেখিয়েছেন তা আপনাকে বিস্মিত করবে। সাহিত্যরসের নান্দনিক ছোঁয়া আপনার দুঃখবোধ ও ক্লান্তি দূর করে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে। বিশ্বসাহিত্যের অনেক ক্লাসিক বই আপনি পড়বেন বলে ঠিক করেছেন বেশ আগেই কিন্তু পেশাগত, সাংসারিক কিংবা সামাজিক ব্যস্ততার কারণে সেগুলো আর পড়া হয়ে ওঠেনি। তাই অখণ্ড অবসরের এই সময়ে অনলাইনে বইগুলো সংগ্রহ করে পড়ে ফেলতে পারেন। ডাক্তার জেবুন্নেসা নাসরীন আলম ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সের একজন চিকিৎসক। পেশাগত ব্যস্ততা ও পারিবারিক দায়িত্ব পালনের মাঝখানেও তিনি বই পড়ার সময় বের করে নেন। ছোটবেলায় বাবা-মা হাতে বই ধরিয়ে দিয়ে যে প্রচণ্ড নেশার সৃষ্টি করেছিলেন সে টানে তিনি এখনও বইয়ের জগতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন-কখনও কাজে যাওয়ার সময় গাড়িতে, কখনও খাবার খেতে খেতে আবার কখনও ঘুমাবার সময় তিনি বই পড়েন। এমনও রাত গেছে যখন পড়তে পড়তে ভোরের আলো ফুটে উঠেছে। তিনি মনে করেন, তাঁর পেশাগত কাজের যে রকম চাপ তাতে তিনি প্রচণ্ড মানসিক ক্লান্তিতে ভোগেন, বই পড়ার অভ্যাস তাঁর ক্লান্তি দূর করে ও তাঁকে মানসিক চাপমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। মূলত তিনি গল্প-উপন্যাস পড়ে থাকেন। হুমায়ূন আহমেদ, কাজী আনোয়ার হোসেন ও সত্যজিত রায় তাঁর পছন্দের লেখকদের মধ্যে অন্যতম। গত এক বছরে তিনি প্রায় এক শ’ বই অনলাইনে অর্ডার করে কিনেছেন। সদ্য স্নাতক করা সিমরান নোভা নিজের পেশাগত কাজের ফাঁকে বই পড়তে ভীষণ ভালবাসে। অনলাইনে কাজ করার কারণে তার হাতে অনেক সময় থাকে। এখন যেহেতু কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া হয় না, বন্ধুদের সঙ্গেও ঘুরতে বের হওয়া হয় না তাই এ সময়ে এক রকম অখণ্ড অবসরে দিন কাটছে। তাই প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে সে নিয়মিত বই পড়ছে। বুকশপে গিয়ে বই কেনার সুযোগ কম থাকায় সে মোবাইল ডিভাইসে ই-বুক পড়ছে। এই করোনাকালে অডিও বুকের কথা নতুন করে জেনেছে। অডিও বুকে বাংলা গল্প – উপন্যাস শোনা হচ্ছে বেশি। ঋতুপর্ণ ঘোষের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘স্ত্রীর পত্র’ শুনে, এর নাটকীয় উপস্থাপনায় ভীষণ মুগ্ধ হয়েছে সে। শাহাদুজ্জামানের ‘ক্রাচের কর্নেল’ শুনতে শুরু“ করেছে। অনেক ছোটগল্প ও উপন্যাসের বিশ্লেষণ ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে যা সেগুলো ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করছে। বিভিন্ন সময়ে সে অনেক বই সংগ্রহ করেছে কিন্তু একাডেমিক পড়াশোনার ব্যস্ততায় সেগুলো পড়া হয়ে ওঠেনি। এখন সেগুলো সে পড়তে শুরু করেছে। লিও টলস্টয়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘আনা কারেনিনা’ এর মধ্যে অর্ধেক শেষ করেছে। ডোনা টার্টের একটি বড় উপন্যাস ‘দ্য সিক্রেট হিস্ট্রি’ পড়া শেষ করেছে। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে আর সে ঘরে পাটি বিছিয়ে চা-মুড়ি খেতে খেতে প্রিয় কোন উপন্যাসের পাতা উল্টাচ্ছে-এ রকম একটা দৃশ্য কল্পনা করতেই নোভার মন আনন্দে নেচে ওঠে। সামনে বর্ষাকাল তাই এ রকম দৃশ্য বাস্তবে ধরা দেবে বলে তার বিশ্বাস। ফারসী ভাষার কবি ও দার্শনিক ওমর খৈয়ামের মতো তার বলতে ইচ্ছে করে-রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে কিন্তু একখানা বই অনন্ত-যৌবনা যদি তেমন বই হয়।
×