ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কর প্রণোদনা পাচ্ছে দেশীয় শিল্প

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ২৭ মে ২০২১

কর প্রণোদনা পাচ্ছে দেশীয় শিল্প

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনায় বিপর্যস্ত স্থানীয় শিল্প খাতকে চাঙ্গা করতে কর প্রণোদনা আগামী বাজেটেও অব্যাহত থাকছে। বিশেষ করে ফ্রিজ, টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশনসহ অন্যান্য উৎপাদনমুখী শিল্পে এ সুবধিা বহাল রাখা হচ্ছে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে। বর্তমানে এসব পণ্যসহ দেশীয় ইলেকট্রনিক্স শিল্প মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ জুন ২০২১ সালে। এসব খাতে উৎপাদিত পণ্যের বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয় না। অর্থাৎ উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে। এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী বাজেটেও এ সুবিধা আরও তিন বছরের জন্য বহাল রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। অর্থাৎ উৎপাদনমুখী এসব শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। এনবিআরের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া। করোনায় অনেক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি পোষাতে ও কর্মসংস্থান ধরে রাখতে উৎপাদনমুখী এসব শিল্পে বিদ্যমান কর প্রণোদনা আরও তিন বছর দেয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদেরে শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর সহ-সভাপতি ও মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘এ খাতে কর সুবিধা অব্যাহত রাখলে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।’ তিনি মনে করেন, শুধু ভ্যাট সুবিধা অব্যাহত রাখলেই হবে না। পাশাপাশি বিদেশী টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বর্তমানের চেয়ে আরও বেশি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন তিনি। আরও কিছু পণ্য কর প্রণোদনা পাচ্ছে : আসন্ন বাজেটে ইলেকট্রনিক্স খাতের আরও বেশকিছু পণ্য ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : রাইস কুকার, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার মেশিন ইত্যাদি। এসব পণ্য উৎপাদন করলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে না। এছাড়া যারা এসব কারখানা স্থানীয়ভাবে স্থাপন করবেন, তাদের জন্য ১০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা (ট্যাক্স হলিডে) দেয়ার প্রস্তাব থাকছে আগামী বাজেটে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, স্থানীয় শিল্প স্থাপনকে উৎসাহিত করতে এসব কর প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। উৎপাদনমুখী শিল্পে আগাম কর কমছে : এখন যে নতুন ভ্যাট আইন চালু আছে, তাতে আগাম কর আদায়ের নিয়ম রয়েছে। একে এ্যাডভান্সড ট্রেড ভ্যাটও বলা হয়। আমদানি পর্যায়ে প্রত্যেক পণ্যের বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে এই কর আহরণ বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে মাসিক ভ্যাট রিটার্ন জমার সময় আগাম কর ফেরত দেয়ার কথা উল্লেখ আছে আইনে। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায়, আগাম কর ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে এটি প্রত্যাহারের দাবি ওঠে এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী মহল থেকে। কিন্তু তা না করে সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর আগাম কর ৫ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ নির্ধারণ করে। এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, আগামী বাজেটে তৈরি পোশাক, সিরামিকসহ শুধু উৎপাদমুখী (ম্যানুফ্যাকচারিং) শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে আগাম কর ৪ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। অর্থাৎ উৎপাদনমুখী শিল্পের কাঁচামালে আমদানিতে আগাম কর ১ শতাংশ কমতে পারে আসন্ন বাজেটে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সাবকে সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, এটি ভাল উদ্যোগ। কারণ, আগাম কর কমলে শিল্পের খরচ কমবে এবং প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জন করবে পণ্য। ভ্যাট ফাঁকির জরিমানা কমছে : ভ্যাট আইনে ফাঁকির জরিমানা ও সরল সুদ হার দুটিই কমানো হচ্ছে নতুন বাজেটে। বর্তমানে ভ্যাট ফাঁকির ক্ষেত্রে ফাঁকি দেয়া ভ্যাটের দ্বিগুণ জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে। আগামী বাজেটে এটি কমিয়ে ফাঁকির সমপরিমাণ জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। এছাড়া সময়মতো ভ্যাট না দেয়ায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সরল সুদের বিধান রয়েছে। বাজেটে এটি ১ শতাংশ করা হচ্ছে।
×