ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের টিকা ঈদের আগেই আসছে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ৫ মে ২০২১

চীনের টিকা ঈদের আগেই আসছে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সেরাম ইনস্টিটিউটের করোনার টিকার চুক্তি থেকে বের হওয়ার আইনী সুযোগ ভারতের নেই বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, আইন সে কথা বলে না। তবে টিকা প্রদানে ভারতের নিজেরই সক্ষমতায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। কিন্তু বিকল্প হিসেবে ঈদ-উল-ফিতরের আগেই চীনের টিকা সিনোফার্ম পাওয়ার প্রত্যাশা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে ব্রিফিংয়ে ভারতের টিকার চুক্তি নিয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান টিকার চুক্তির বিষয়ে আইনী বিষয় তুলে ধরেন। একনেকের বৈঠক শেষে অনলাইনে মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। টিকা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চুক্তি অনুযায়ী নৈতিকভাবে টিকা দিতে বাধ্য ভারত। তবে তারা আমাদের প্রতিবেশী। সেখানে করোনায় কি মারাত্মক সংক্রমণ চলছে, সেটা আমরা জানি। এ কারণে তাদেরও নিজেদেরই করোনার টিকার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তবে টিকা সংগ্রহে সরকার বসে নেই। বিকল্প চ্যানেল থেকে টিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। তবে একনেকের মূল বৈঠকে করোনার টিকা নিয়ে কোন কথা হয়নি, যোগ করেন মন্ত্রী। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সদস্য এবং সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সচিব মামুন-আল-রশীদ, আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সচিব নাসিমা বেগম, শিল্প শক্তি বিভাগের সদস্য শরিফা খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঈদের আগেই আসছে চীনের করোনার টিকা ॥ ঈদ-উল-ফিতরের আগেই চীনের টিকা সিনোফার্ম পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। একইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে যোগাযোগ এখনও অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের আগে টিকা দেয়ার জন্য চীন সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ঢাকার চীনা রাষ্ট্রদূতও এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা চীনের সিনোফার্মের টিকার বিষয়ে আশাবাদী। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ যে সাতটি দেশের হাতে অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার মজুদ রয়েছে সেই সব দেশ থেকেও টিকা পাওয়ার বিষয়ে আশা রয়েছে। ড. মোমেন জানান, চীনে মে দিবসের পাঁচদিনব্যাপী ছুটি চলছে। এই ছুটি ৫ মে শেষ হবে। ছুটির কারণে সেখানে সব কিছু বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, সেরামের বিকল্প হিসেবে ভ্যাকসিন পেতে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশে রাশিয়ার স্পুটনিক ব্যবহার ও উৎপাদনের অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। করোনা টিকা পেতে ওয়াশিংটনকে ঢাকার চিঠি ॥ করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা আনতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে ওয়াশিংটনকে চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিপুল পরিমাণ এ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা রয়েছে। এই টিকা অনুদান হিসেবে আনার জন্য ওয়াশিংটনকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা। তবে অনুদান হিসেবে না পাওয়া গেলে সরকার সেখান থেকে কিনে আনতেও সম্মতি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ এ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা আনতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের টিকাও বিখ্যাত। তবে ফাইজারের টিকা রক্ষাণাবেক্ষণে মাইনাস ২৭ ডিগ্রী তাপমাত্রায় রাখতে হয়। সে কারণে সরকার এই টিকা আনতে আগ্রহী নয়। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত জন কেরি ঢাকা এলে টিকার বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। জন কেরি জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জুন মাসের পর বাংলাদেশ চাইলে টিকা পেতে পারে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার টিকা আনতে বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠান চাইলে আনতে পারবে। বাংলাদেশের বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে এই টিকা আনতে সম্মতি দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা কেনার চেষ্টা সরকারের ॥ পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, টিকা সংগ্রহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে সরকার। ইতোমধ্যে ভারতের সেরাম থেকে ১ কোটির বেশি টিকা এসেছে। চলতি মাসে রাশিয়া থেকে স্পুটনিক ও চীন থেকে সিনোফার্মা টিকা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিব এক সাক্ষাতকারে বলেন, একাধিক উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের বিষয়ে প্রথম থেকেই আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। বাস্তবতা হচ্ছে, এদের মধ্যে সবাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি। এ্যাস্ট্রাজেনেকা পেয়েছে বলে সবাই ব্যবহার করছে। কিন্তু তারপরও অনেক দেশ জরুরী ভিত্তিতে অনুমোদনহীন টিকা ব্যবহার করছে। এখন যেহেতু সেরামের সঙ্গে সরবরাহ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে, আমাদের আগের যোগাযোগগুলো আরও বৃদ্ধি করেছি। তিনি জানান, রাশিয়ার স্পুটনিক-৫-এর ক্ষেত্রে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে। তাদের সঙ্গে দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। একটি হচ্ছে যৌথ উৎপাদন ও দ্বিতীয়টি হচ্ছে টিকা ক্রয়। চীন আমাদের ৫ লাখ টিকা উপহার হিসেবে দিতে চেয়েছে। সেটির ফলাফল দেখে আমরা পরবর্তীতে কিনতে পারব। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের কাছে অতিরিক্ত ছয় কোটি টিকা রয়েছে এবং এর মধ্যে থেকে কয়েক মিলিয়ন টিকা চেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বিষয়টি বিবেচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতকে সহায়তা করে তবে একটি বাড়তি অংশ বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করি। এ বিষয়ে আমাদের রাষ্ট্রদূত যোগাযোগ রাখছেন। ডেনমার্কেও কিছু এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাড়তি আছে, টিকা সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
×