ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পৃথিবী আমাকে চায়

সৈয়দ আল ফারুকের কবিতা

প্রকাশিত: ২০:১২, ৯ এপ্রিল ২০২১

সৈয়দ আল ফারুকের কবিতা

কোনো কারণ ছাড়া, আমি একটা বোকার মতো কিংবা বিনা প্রয়োজনে একটা গাধার মতো পৃথিবীতে এক দিনও বেঁচে থাকতে চাই না। বরং আমি চাই চির-বুদ্ধিমান এই পৃথিবী তার নিজের প্রয়োজনে আমাকে বাঁচিয়ে রাখুক অনন্তকাল। আমি চাই ‘আমি তোমাকেই চাই’ এই কথাটা তোমাকে শত শত বার বলার চেয়ে তুমি যে আমাকে চাও মনেপ্রাণে সেই কথাটা তুমিই হাজার হাজার বার লাখ লাখ বার ঘোষণা দাও গণমাধ্যমে, জাতির উদ্দেশে। একটা বিরাট মাঠে একটা বড় উৎসবে সমবেত দর্শকমণ্ডলীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে উৎসবের গুণকীর্তন করে আমি কোনো গণসঙ্গীত পরিবেশন করতে ইচ্ছুক নই, আমি চাই মহান উৎসব তার সব আয়োজন নিয়ে আমাকে উদযাপন করুক আর আমার চারপাশে এঁকে দিক রংধনুর সব রং, উড়িয়ে দিক বর্ণিল বেলুন-পতাকা। কোনো নদীতে সাঁতার কাটতে চাই না আমি বরং আমি চাই পৃথিবীর সমস্ত নদীর সব উত্তাল ঢেউ আমার শরীরে এসে আছড়ে পড়ুক আর নদীগুলো সাঁতার কাটুক আমার আপাদমস্তক। আমি পাড়ি দিতে চাই না কোনো তীরহীন মহাসমুদ্র, বরং আমি চাই ওই বিশাল সমুদ্রের মনে তীব্র আকাক্সক্ষা জাগুক অনন্ত-অসীম দৈর্ঘ্য-প্রস্থের জলাধার এই আমাকে পাড়ি দেয়ার জন্য। আমি চাই না হিমালয় পর্বতের সর্বোচ্চ চূড়ায় দাঁড়িয়ে গর্ব অনুভব করতে বরং আমি চাই আমার পদতলে দাঁড়িয়ে থাকুক হিমালয় আর আমাকে মাথায় তুলে সে উচ্চারণ করুক অহঙ্কারী শব্দগুচ্ছ। আমি পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে সুউচ্চ তীরের চূড়ার দিকে তাকিয়ে অনুগত ভৃত্যের মতো করজোড়ে প্রার্থনা করতে চাই না, আমাকে দাও চূড়াতে ওঠার এক নিষ্কণ্টক পথ। কিন্তু আমি চাই ওই পাহাড় তার হাঁটু মুড়ে নীল ডাউনের ভঙ্গিতে পরাজিত সৈনিকের মতো আমার সামনে এসে আত্মসমর্পণ করুক। আমি চাই না ওই বিশাল আকাশে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াতে বরং আমি চাই ওই বিস্তীর্ণ আকাশ একটা পাখির মতো উড়তে থাকুক আর ঘুরতে থাকুক তারও চেয়ে বড় হৃদয়ের অধিকারী আমার অসীম বুকে। আমি চাই না এই প্রবহমান বাতাসে গা এলিয়ে দিয়ে তার স্রোতে ভাসতে ভাসতে, ভেসে যেতে দূরে কোথাও। বরং আমি চাই, আমি হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো হেঁটে যাব দূর-দূরান্তে আর পৃথিবীর সব বায়ু তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে আমাকে অনুসরণ করবে অনন্তকাল, একাল থেকে সেকাল আর পরকালের পথ ধরে মহাকালের পথে অথবা মহাকালের পথ ধরে পরকালের পথে।
×