ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকাগামী সব ফ্লাইটে এয়ারমার্শাল দিতে চায় ভারত

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ঢাকাগামী সব ফ্লাইটে এয়ারমার্শাল দিতে চায় ভারত

আজাদ সুলায়মান ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এ ছাড়া দুদেশের ভূখণ্ড পরস্পর স্বার্থবিরোধী কোন কাজে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না বলে একমত হয়েছে উভয়পক্ষ। শনিবার দুই দেশের ১৯তম স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এই আলোচনা হয়। দিল্লীর প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো এ তথ্য জানিয়েছে। মূলত স্বাধীনতার ৫০তম ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে দুদেশের এ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার ও কার্যকরে উভয়পক্ষই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টালে শনিবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত দেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন। অন্যদিকে ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সে দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় কুমার ভাল্লা। গত বছর ২৯ নবেম্বর বাংলাদেশ-ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হওয়ায় বৈঠকটি স্থগিত করা হয়। জানাা গেছে, বৈঠকে উভয় সচিব সীমান্তে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদারে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এছাড়া তারা স্বার্থবিরোধী কোন ক্রিয়াকলাপের জন্য দুই দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। উভয়পক্ষই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি অনুযায়ী সীমান্তে অসম্পন্ন বেড়া তৈরির কাজ শেষ করার বিষয়ে আলোচনা করেছে। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার ঝুঁকি মোকাবেলায় উভয়পক্ষের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয় বৈঠকে। উভয়পক্ষই নকল ভারতীয় মুদ্রা পাচার রোধে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত সহযোগিতার বিষয়টি পর্যালোচনা করে এক্ষেত্রে আরও সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে। বৈঠকে সূত্রে জানা গেছে সীমান্ত হত্যা, মাদক, জাল নোট ও ভারত থেকে বাংলাদেশগামী উড়োজাহাজে এয়ারমার্শাল মোতায়েনের প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার ওপর উভয়পক্ষই জোর গুরুত্ব দেন। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বন্ধের বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া মাদক, অস্ত্রসহ বিভিন্ন চোরাচালান, মানব পাচারসহ অন্য সব বিষয় কীভাবে রোধ করা যায় সে বিষয়েও তারা আলোচনা করেন। সন্ত্রাসবাদ, জাল অর্থ, বিছিন্নতাবাদ, ভিসাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও ওঠে আসে। জানা গেছে উভয় স্বরাষ্ট্র সচিব দুদেশের পরস্পর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সতর্ক ও সংযত মনোভাব প্রদর্শন করবে। বিশেষ করে ঝুলে থাকা সীমান্ত বেড়া ইস্যুতেও কার্যকর আলোচনা করেন তারা। উভয়পক্ষই সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ নির্মূলে নেয়া দুদেশের পদক্ষেপের প্রসংশা করেন। এ সময় গত জানুয়ারি মাসে দুদেশের পুলিশ প্রধানদের শীর্ষ বৈঠকে আলোচিত ইস্যু নিয়েও অগ্রগতির তথ্য বিনিময় করা হয়। দীর্ঘদিন শান্ত থাকার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এবং তাদের একটি অংশ ভারতে আশ্রয় নেয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তাও আলোচনা হয়েছে। একইভাবে ভারত থেকে আসা জাল মুদ্রার বিষয়ে নেয়া পদক্ষেপ আরও কার্যকর করার আশ্বাস দেয়া হয় ভারতের পক্ষ থেকে। উভয়পক্ষই নিরাপত্তা ও সীমান্ত সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয়টি পর্যালোচনা করেন। বৈঠকে অংশ নেয়া এক প্রতিনিধি দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন- ভারত থেকে আসা মাদকের বর্তমান রাজশাহী ও সাতক্ষীরা রুট পরিবর্তন করে অসম সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলের মতো মাদক দেশে প্রবেশ করছে। জবাবে ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব জানান- মাদক ঠেকানো ইস্যুতে ভারত সব সময়ই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে মাদক সংক্রান্ত তথ্য নিয়মিত বাংলাদেশকে দেয়া হচেছ যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- ফেন্সিডিল বা কোডিন নামে সিরাপটি ভারতে নিষিদ্ধ নয়। এটা বৈধ। এ বৈঠকে অংশ নেয়া সিভিল এভিয়েশনের প্রতিনিধি দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন- ভারত বরাবরই প্রস্তাব দিয়ে আসছে যাতে সে দেশ থেকে আগত উড়োজাহাজ নিরাপত্তার বিষয়ে এয়ারমার্শাল মোতায়েন করার সুযোগ দেয়া হয়। এ প্রস্তাবে তেমন যৌক্তিকতা নেই উল্লেখ করে ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- ভারত ছাড়া বিশ্বের অনেক দেশের ফ্লাইট এখানে আসছে। কোন দেশই তাদের ফ্লাইটে এয়ারমার্শাল মোতায়েন কওে না। এটা যদি ভারতের নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ইস্যুতে দরকার হয়-তাহলে আমাদের দেশের ফ্লাইটগুলোতেও ভারতে যাবার সময় এয়ারমার্শাল মোতায়েনের সমান সুযোগ দিতে হবে। একতরফা শুধু ভারত থেকে আসা ফ্লাইটগুলোতেই এয়ারমার্শাল মোতায়েনের কোন যৌক্তিকতা নেই।
×