ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

শাহবাগে মশাল মিছিল থেকে আটক ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

শাহবাগে মশাল মিছিল থেকে আটক ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে গত শুক্রবারের মশাল মিছিল থেকে আটক সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সাত শিক্ষার্থীকে একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছে আদালত। এদিকে মশাল মিছিলে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে শনিবার বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ মামলায় বিষয়ে বলেন, ‘আজ (শনিবার) সকালে উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ মিন্টু মিয়া বাদী হয়ে দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ১৪৯, ১৮৬, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৫৩, ৩০৭, ৪২৭ ও ১০৯ ধারায় মামলাটি দায়ের করেছেন।’ এজাহারে উল্লেখ করা হয়, লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যায় মোঃ তামজিদ হায়দার (২২), নজির আমির চৌধুরী জয় (২৭), এ এস এম তানজিমুর রহমান (২২), মোঃ আকিব আহম্মেদ (২২), মোঃ আরাফাত সাদ (২৪), নাফিজা জান্নাত (২৪) ও জয়তী চক্রবর্তীর (২৩) নেতৃত্বে এক থেকে দেড়শ’ উগ্র দুষ্কৃতকারী মশাল মিছিল নিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শাহবাগ মোড়ের উদ্দেশে রওনা হয়। পুলিশ তাদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানালে মিছিলকারীরা মশাল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ সদস্য আলামিনের বুলেট প্রুফ জ্যাকেটে আগুন ধরে যায়। এছাড়া, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার, উপপরিদর্শক (এসআই) রোকন উদ্দিন, নিশাত, তোহা ইসলাম, দেলোয়ার, ফরহাদ, হাসান, শিপন, মোঃ নুরুজ্জামান, পুষ্পতাজ আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ তিন রাউন্ড গ্যাসশেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে থেকে একটি মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি জাতীয় গ্রন্থাগারের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে কিছুক্ষণ বাগবিতণ্ডার পর পুলিশ মিছিলের পথ ছেড়ে দেয়। পরে ছাত্র ফেডারেশনের মিছিলটি শাহবাগ ঘুরে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। সমাবেশে আইনটিকে কণ্ঠরোধকারী ও নিবর্তনমূলক বলে আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভকারীরা আইনটির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেন। এ সময় জনগণের পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ঘোষণা করে সংগঠনটি। সমাবেশে ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে আগামী এক মাস সারাদেশে সব প্রগতিশীল সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করব। ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে আমরা বিক্ষোভ করব। এই আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। সব প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ১ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে ও সারাদেশে এবং ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ হবে।’ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, ‘শুক্রবার পুলিশের হামলায় বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সাতজনের নামে নয়টি অভিযোগ করেছে পুলিশ। এটি কণ্ঠরোধের চেষ্টা ও সংবিধান লঙ্ঘন। আজ (শনিবার) সন্ধ্যার মধ্যে আটকদের না ছাড়া হলে যে কোন ধরনের পরিস্থিতির জন্য শাহবাগ থানার পুলিশ দায়ী থাকবে। হুঁশিয়ার করতে চাই, জনগণের কাতারে না এলে তারা প্রত্যাখ্যাত হবেন।’ কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাম ছাত্র সংগঠনগুলো মশাল মিছিল বের করে। এ সময় শাহবাগে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীরা জানান, মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শাহবাগ গেলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে তারা দাবি করেছেন। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের মশাল ও ইট নিক্ষেপে অন্তত ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ ॥ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের মশাল মিছিল থেকে গ্রেফতার সাত শিক্ষার্থীকে একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছে আদালত। শনিবার বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আলম মামুন ভূঁইয়া এ আদেশ দেন। আগামী তিনদিনের মধ্যে তাদের এ জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। সাত শিক্ষার্থী হলেন- তামজীদ হায়দার, নজিব আমিন চৌধুরী জয়, এএসএম তানজিমুর রহমান, আকিব আহম্মেদ, আরাফাত সাদ, নাজিফা জান্নাত ও জয়তী চক্রবর্তী। এদিন দুপুর তাদের আদালতে হাজির করে এ রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলাম। আসামিপক্ষে মন্টু ঘোষ, আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মোহাম্মদ পারভেজসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের আবেদন নাকচ করে তাদের একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয়। মামলায় ওই সাতজন শিক্ষার্থীও অজ্ঞাতনামা ১০০/১৫০ জন আসামি রয়েছে।
×