অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা সংকটের কারণে ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ না করেও ২০২০ সাল জুড়ে খেলাপি হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন ঋণ গ্রহীতারা। তবে চলতি বছর এ সুবিধা আর থাকছে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বুধবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর ফলে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কেউ ব্যাংকের ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ না করলে খেলাপি হবেন।
করোনার কারণে গত বছর জুড়ে কিস্তি না দিয়েও বেশির ভাগ ব্যবসায়ী খেলাপি হওয়া থেকে মুক্ত থেকেছেন। করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ব্যবসায়ীদের এ ছাড় দিয়েছিল সরকার।
তবে এ সুবিধা দেয়ায় ব্যাংকগুলোতে অনাদায়ি টাকার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এ কারণে ঋণ পরিশোধ না করার সময় নতুন করে আর বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান ও এ কে এম সাজেদুর রহমান, ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখারসহ সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্যবসা-বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এখন ঋণ পরিশোধে ছাড় দেয়া সময়োপযোগী হবে না।
গত বছরে মার্চে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও গ্রাহককে খেলাপি করা যাবে না- এমন সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
অনাদায়ী ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় পরে তিন দফা বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। যদিও সময় আরও বাড়ানোর দাবি উঠে ব্যবসায়ী মহল থেকে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল সময় আর বাড়ানো হবে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, গোটা এক বছর ঋণ শোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকা গেছে। এতে ঋণ পরিশোধে গ্রাহকদের মধ্যে অনীহা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ছাড়ের সময় না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।
এদিকে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় গঠিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ নিয়েও সভায় আলোচনা হয়।
এ সময় কৃষি এবং ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রত্যেক ব্যাংককে মার্চের মধ্যে ঋণ বিতরণ শেষ করতেও বলা হয়।
সভায় আরও জানানো হয়, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় এক হাজার ১১০টি স্বীকৃত বিল অপরিশোধিত অবস্থায় ছিল। এর বিপরীতে বকেয়া ছিল তিন কোটি ১২ লাখ ডলার। আর অপরিশোধিত ২১১টি বিদেশি স্বীকৃত বিলের বিপরীতে বকেয়া রয়েছে দুই কোটি ৩৭ লাখ ডলার।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: