ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের নীতি বদলাতে প্রথমদিনই কাজ শুরু বাইডেনের

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২২ জানুয়ারি ২০২১

ট্রাম্পের নীতি বদলাতে প্রথমদিনই কাজ শুরু বাইডেনের

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান কিছু নীতি পাল্টে দেয়া শুরু করেছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইতোমধ্যে ১৭টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, এরমধ্যে করোনা মোকাবেলায় ফেডারেল সরকারের আরও তৎপর হওয়ার বিষয়টি প্রথমে রেখেছেন। অভিষেকের পর হোয়াইট হাউসের দিকে যাবার সময় এক টুইটে বাইডেন বলেছেন, যে সঙ্কটগুলোর মুখে পড়েছি আমরা তা মোকাবেলার ক্ষেত্রে নষ্ট করার সময় নেই। অন্যান্য আদেশের মাধ্যমে আবহাওয়া পরিবর্তন ও অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানও উল্টে দিয়েছেন তিনি। নির্বাহী আদেশগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন পদক্ষেপ নেবেন- শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুতর ক্ষতিগুলো উল্টে দিতেই না, পাশাপাশি আমাদের দেশের এগিয়ে যাওয়া শুরু করতেও। যুক্তরাষ্ট্রের চার লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া করোনা মহামারী মোকাবেলার জন্য ধারাবাহিক কিছু পদক্ষেপ কার্যকর করা হবে। খবর সিএনএন, রয়টার্স, আলজাজিরা, বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট, ইউএসএ টুডে, লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও নিউইয়র্ক টাইমসের যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের সব দফতর ও স্থাপনায় মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক হয়েছে। মহামারী মোকাবেলায় নেয়া পদক্ষেপগুলো সমন্বয় করতে নতুন একটি দফতর স্থাপন করা হবে এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করবে। ডব্লিউএইচও’র সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফের যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব এ্যান্তোনিও গুতেরেস। মহামারী মোকাবেলায় সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’, তিনি এমনটি বলেছেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে তার প্রশাসনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন। ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেছেন তিনি। গত বছর এই চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। বিতর্কিত কিস্টোন এক্সএল পাইপলাইনের ক্ষেত্রে দেয়া অনুমোদনও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী আমেরিকানরা ও পরিবেশবাদীরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই অনুমোদনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সাকি প্রথম সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, প্রথম বিদেশী নেতা হিসেবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে শুক্রবার ফোন করবেন বাইডেন, তখন কিস্টোন পাইপলাইনের বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। প্রস্তাবিত পাইপলাইনটি বেসরকারী অর্থায়নে নির্মাণের কথা ছিল। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল আট বিলিয়ন ডলার। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে কানাডার আলবার্টা থেকে দৈনিক আট লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল ভারি অপরিশোধিত তেল নেব্রাস্কায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ২০১৫ সালে এই পাইপলাইন নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস অনুমোদন দিলেও তাতে ভেটো দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, কিন্তু তার সিদ্ধান্ত পাল্টে দিয়েছিলেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাইডেন মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর দেয়াল নির্মাণে তহবিল ছাড়ে সহায়তা করা ট্রাম্প প্রশাসনের ‘জরুরী ঘোষণা’ বাতিল করেছেন। এর পাশাপাশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সাতটি দেশের ওপর আরোপ করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তার অন্যান্য নির্বাহী আদেশগুলো বর্ণ ও লিঙ্গ সমতা বিষয়ক। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথমদিন একগুচ্ছ নির্বাহী আদেশে সই করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে সময় তার কাছে প্রশ্ন ছিল- ট্রাম্প কি লিখেছেন চিঠিতে? বাইডেনের জবাব ছিল, প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) খুবই উদার একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠি সম্পর্কে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি বাইডেন। তার কথায়, কারণ, এটা ব্যক্তিগত! যতক্ষণ তার (ট্রাম্প) সঙ্গে কথা না বলছি ততক্ষণ এর বিষয়ে কোন কথা বলব না। তবে চিঠিটি উদার ছিল। যদিও ট্রাম্পের এক জ্যেষ্ঠ সহযোগীও চিঠিটিকে ব্যক্তিগত নোট হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যেখানে দেশ ও নতুন প্রশাসনের সাফল্য কামনা করা হয়েছে। তার দেয়া তথ্যমতে হোয়াইট হাউসে কাটানো শেষ রাতে ট্রাম্প যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন তারমধ্যে বাইডেনের জন্য চিঠিটিও রয়েছে। শুধু ট্রাম্প নয় উত্তরসূরিদের জন্য সৌজন্য চিঠি রেখে গেছেন সাবেক ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও। তাদের চিঠির বিষয়বস্তু এখনও জানা যায়নি। অভিষেকে বেগুনি রংয়ের প্রাধান্য ॥ বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের থিম ছিল ‘ঐক্যবদ্ধ আমেরিকা’ আর সে কারণেই রিপাবলিকান অধ্যুষিত লাল ও ডেমোক্রেটদের নীল অঙ্গরাজ্যগুলোর কথা ভুলিয়ে দিয়ে গভীরভাবে বিভক্ত জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করতে উভয় রঙকে ধারণ করা বেগুনি ছিল ওই দিনটির ‘কালার অব দ্য ডে’। ন্যাশনাল উইমেন্স পার্টিও ১৯১৩ সালের এক নিউজলেটারে বলা হয়েছিল বেগুনি হলো আনুগত্য, লক্ষ্যে অবিচল, উদ্দেশ্যে অটল, স্থির থাকার রং। নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেকে বেগুনির এ চোখ ধাঁধানো উপস্থিতিই কি তাহলে আমেরিকাকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে নতুন প্রশাসনের জোর কদমে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা? এর উত্তর সময়ই বলে দেবে। বুধবারের অভিষেকে জিল বাইডেন স্বামীর নীল রঙের টাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে মার্কারিয়ান কোট পরলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বেগুনি রঙের উজ্জ্বল কোট ও ক্রিস্টোফার জন রজারসের বানানো পোশাক পরে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান উভয় দলের প্রতি সৌহার্দ্যরে বার্তা নিয়েই হাজির হয়েছিলেন। লাল-নীলের মিশ্রণে সৃষ্ট বেগুনির জয় জয়কার ছিল সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের পোশাকেও; তার রালফ লরেন প্যান্টস্যুটের সঙ্গে যদি আঙ্গুরের রঙের সাদৃশ্য থাকে তাহলে সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার ট্রাউজারের রঙের মিল পাওয়া যাবে ওয়াইনের। ট্রাউজারের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ওবামাপত্নী এদিন গলাবন্ধ পোশাক ও তরুণ ডিজাইনার সার্জিও হাডসনের নকশা করা কোট পরেছিলেন। মহামারীর মধ্যে হওয়া এ অভিষেকে অতিথিদের পোশাকের পাশাপাশি মাস্কও নজর কেড়েছে। জিল বাইডেন তার কোটের সঙ্গে মিলিয়ে পরেছিলেন আকাশী নীল রঙের মাস্ক; তার পরিবারের অন্য সদস্যরা একরঙা মাস্কে মুখ ঢেকেছিলেন। কমলা হ্যারিস তার মাস্কের রঙ বেছে নিয়েছিলেন কালো, যা তার পরনে থাকা বেগুনি রংয়ের পোশাকের সঙ্গে মানিয়েও গিয়েছিল। এদিন উপস্থিত হওয়া বেশিরভাগ পুরুষের মুখে সাধারণ মেডিক্যাল মাস্ক দেখা গেলেও কয়েকজন মুখে ঢেকেছিলেন রং বেরংয়ের মাস্কে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ পরেছিলেন রোব্যাকের বানানো মাস্ক; ক্যাপিটল হিলের সাবেক কর্মীদের হাত ধরে এ কোম্পানিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। বাইডেনের অভিষেকে লেডি গাগার বলগাউন, এলা এমহফের বড় সাদা কলারের মিউ মিউ কোট, জেনিফার লোপেজের পোশাক নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। যদিও এর সবগুলোই বার্নি স্যান্ডার্সের হাত মোজার তুলনায় নগণ্য। এরই মধ্যে ‘বার্নিসমিটেন’ নামের হ্যাশট্যাগ চালু হয়ে গেছে; ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগও হাত মোজাটি তাদের নজর কেড়েছে বলে জানিয়েছে। ভারমন্টের এক স্কুলশিক্ষক জেন এলিস ওই হাত মোজা বানানোর কৃতিত্ব দাবি করেছেন। নিজের বানানো একই ধরনের আরও কিছু হাত মোজার ছবি দিয়ে এলিস টুইটারে লিখেছেন, কয়েক বছর আগে উপহারস্বরূপ আমি বার্নির জন্য ওই হাত মোজা বানিয়েছিলাম। বাইডেনের গাড়ির নম্বরও ছিল ‘৪৬’ ॥ বাইডেনের শপথের দিন যে সুরক্ষিত গাড়ি তাকে বহন করেছে তার নম্বর ছিল ‘৪৬’। দেশটির ৪৬তম প্রেসিডেন্টের সম্মানে তাকে বহনকারী গাড়িতে দুই সংখ্যার এই নম্বর প্লেট রাখা হয়েছিল। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে বুধবার বাবার রেখে যাওয়া ১২৭ বছরের পুরনো পারিবারিক বাইবেলের ওপর হাত রেখে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন বাইডেন। সমসাময়িককালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কঠিন সঙ্কটকালে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বয়সী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন এই ডেমোক্র্যাট নেতা। শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট হওয়া ট্রাম্পের প্রধান কিছু নীতি উল্টে দেয়া শুরু করেন বাইডেন। বাইডেনের সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ছেন কমলা হ্যারিস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট; দেশটির প্রথম কালো এবং প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্টও তিনি। পাশাপাশি এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো মার্কিন কংগ্রেসের উভয়কক্ষ সিনেটে ডেমোক্র্যাট আধিপত্য সূচিত হওয়ায় নিজের নীতি বাস্তবায়নে বাইডেন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রথম বরখাস্ত করলেন বাইডেন! ॥ শপথগ্রহণের পরই ক্ষমতা প্রয়োগ শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। শপথ নেয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তিনি ট্রাম্পের নেয়া বেশকিছু নীতি নির্বাহী আদেশে পাল্টে দিয়েছেন। জানা গেছে, তিনি এ রকম ১৭টি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। অন্যদিকে প্রথমদিনই তিনি হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন। ট্রাম্প তাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নতুন কর্মকর্তাদের প্রতি তিনি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। কোন অসদাচরণ সহ্য করা হবে না জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাইডেন বলেন, আপনি যদি আমার সঙ্গে কাজ করছেন এবং আমি শুনতে পেয়েছি যে আপনি অন্য সহকর্মীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করছেন, কাউকে খাটো করে কথা বলছেন, সঙ্গে সঙ্গেই আমি তাকে বরখাস্ত করব। গৃহস্থালি কর্মকাণ্ড দেখভালের দায়িত্বে থাকা হোয়াইট হাউসের চীফ উশার টিমোথি হারলেথকে বরখাস্ত করেছেন বাইডেন। ২০১৭ সালে সেই পদে টিমোথিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন সদ্য সাবেক ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। টিমোথি ছিলেন মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের রুম ম্যানেজার। তিনি ওবামা প্রশাসনের এ্যাঞ্জেলা রিডের স্থলাভিষিক্ত হন।
×