ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিবাসন খাত উন্নয়নে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু হচ্ছে

প্রকাশিত: ২৩:০১, ২০ জানুয়ারি ২০২১

অভিবাসন খাত উন্নয়নে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উত্তরণ ও বাংলাদেশের অভিবাসন খাতের উন্নয়নের জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু হচ্ছে। এই সেবার আওতায় সরকারী ও বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠান এক ছাতার নিচে কাজ করতে পারবে। সেবাটি চালু হলে কর্মীরা এক জায়গা থেকে সব সেবা পাবেন। কম সময়ের মধ্যে তাদের সব কাজ শেষ হবে। এতে ব্যয় ও সময় কম লাগবে। একই সঙ্গে কর্মীদের হয়রানিও অনেকাংশে কমে যাবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ সরকারী-বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর বিদেশে বিপুলসংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হবে। তখন যাতে কর্মী পাঠাতে কোন প্রকার অসুবিধার মধ্যে পড়তে না হয় সেজন্য আগে থেকেই প্রস্ততি নিতে হবে। সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে এখন থেকে দক্ষ কর্মী তৈরি করারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি। দক্ষ কর্মী ছাড়া করোনা পরিস্থিতির পরিবর্তী বিশ্বকে মোকাবেলা করা কঠিন হবে। শ্রম বাজারগুলোতে কাজের ধরনেরও পরিবর্তন ঘটতে পারে। সব ধরনের কাজের জন্য প্রয়োজন হবে দক্ষতার। সম্প্রতি জনশক্তি, কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাক আয়োজিত ‘ন্যাশনাল লেভেল স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন অন সেফ মাইগ্রেশন এবং সাসটেইনেবল রিইন্টিগ্রেশন ইন দ্য কনটেক্সট অব কোভিড-১৯ ক্রাইসিস’ শীর্ষক অভিবাসন খাতের জাতীয় পর্যায়ের অংশীজনদের এক পরামর্শ সভায় তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কোভিড-১৯ শুধু আমাদের দেশেই না। বিশ্বব্যাপী একটি অপ্রত্যাশিত মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে বিশ্বজুড়েই প্রতিটি সেক্টরে এর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। কোভিডের কারণে অভিবাসন খাতে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা মোকাবেলা করতে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এক ছাতার নিচে আসতে হবে। সম্মিলিতভাবে কাজ করে এই সেক্টরের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তাহলেই আমরা কার্যকরভাবে কোভিড মোকাবেলা করতে পারব। অভিবাসন খাতের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। করোনা মোকাবেলায় প্রবাসী কর্মীদের জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। অভিবাসী কর্মীদের জন্য মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করেছে। এ থেকে প্রবাসী কর্মীদের পরিবার ভোগ করতে পারেন। অপ্রত্যাশিত কোভিড শুরু হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের সামনে মূলত পাঁচ ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথম যারা বিদেশে আছেন তারা কীভাবে সেখানে ভালভাবে থাকতে পারেন, চাকরির নিশ্চয়তা পেতে পারেন। দ্বিতীয়ত যারা ফিরে আসতে চাচ্ছেন তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন কিভাবে নিশ্চিত করা যায়। তৃতীয়ত যারা ফেরত এসেছেন তাদের কীভাবে আবার পাঠানো যায় এবং চতুর্থত যারা দেশেই থাকবেন তাদেরকে কীভাবে সমাজে পুনর্প্রতিষ্ঠা করা যায়। সর্বশেষ, নতুন করে কীভাবে আবার বৈদেশিক কর্মসংস্থান শুরু করা যায়। কিন্তু সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে। নিরাপদ অভিবাসন ও কার্যকর পুনরেকত্রীকরণের বিষয়ে কিভাবে সম্মিলিতভাবে কাজ করাই মন্ত্রণালয়ের মূল উদ্দেশ্য। এদিকে বিভিন্ন শ্রমবাজার থেকে বেশ কয়েকজন কর্মী টেলিফোনে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছেন। এই কর্মীদের মধ্যে অনেকে আছেন যাদের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া, কোম্পানি পরিবর্তন করা অথবা কথিত ফ্রি ভিসার কারণে অনেক কর্মী ‘আনডকুমেন্টেড’ বা অনিয়মিত হয়ে গেছেন। প্রতি বছরই প্রবাসী কর্মীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এবার করোনাভাইরাসের প্রভাবে আরও মহাসঙ্কটে পড়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। একদিকে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া অন্যদিকে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিটি দেশ বর্তমানে আংশিক বা পুরো লকডাউনে রয়েছে। কারও কোন কাজ নেই। ফলে তাদের চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ কর্মী এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন।
×