ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাঠে আলো ছড়ানো মেহেনুর ফিরতে চান জাতীয় দলে

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ৮ ডিসেম্বর ২০২০

মাঠে আলো ছড়ানো মেহেনুর ফিরতে চান জাতীয় দলে

রুমেল খান ॥ কমলাপুর স্টেডিয়ামে মহিলা ফুটবল লীগে পিছিয়ে পড়েও দারুণ জয় কুড়িয়ে নেয় জামালপুর কাচারিপাড়া একাদশ। তারা ২-১ গোলে হারায় বেগম আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাবকে। জয়ী দলের রক্ষণভাগের এক খেলোয়াড় মাঠে আলো ছড়ান উদ্ভাসিত নৈপুণ্য দিয়ে। ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার এই খেলোয়াড়ের নাম মেহেনুর আক্তার। ম্যাচ শেষে চতুর্দশী এই সুদর্শনার সঙ্গে কথা হয়। মেহেনুর লেফট ব্যাক পজিশনের খেলোয়াড়। তবে আগে খেলতেন সেন্টার ব্যাকে। ম্যাচের ১৯ মিনিটে জামালপুর কাচারিপাড়া কর্নার পায়। মেহেনুর ডান পায়ে চমৎকার উড়ন্ত কর্নার করেন। তার সেই কর্নারটি আনোয়ারার পোস্টে লেগে আউট হয়ে যায়। অল্পের জন্য সেটা পরিণত হতে পারেনি দৃষ্টিনন্দন এক গোলে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেহেনুরের জবাব, ‘শটটা এমনি এমনিই বারে লাগেনি। টার্গেট করেছিলাম বলটা সুইং করে পোস্টে ঢোকাব। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়াতে সেটা পোস্টে লেগে যায়।’ কর্নার বা সেট পিস মারার জন্য আলাদাভাবে কোন অনুশীলন করা হয় কি না? ‘আমার শুটিং করতে ভাল লাগে। তাই সবসময় না হলেও মাঝে মাঝেই এ নিয়ে বিশেষভাবে অনুশীলন করি। একজন স্টপার হিসেবে ভাল শুটিং করতে পারাটা খুবই জরুরীÑ’ যোগ করেন মেহেনুর। মেহেনুরের অভিজ্ঞতা আছে জাতীয় বয়সভিত্তিক দলে খেলার। ২০১৯ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে দলের সঙ্গে ভুটানে গিয়েছিলেন। তবে সেবার কোন ম্যাচ খেলা হয়নি তার। বিকেএসপিতে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মেহেনুর। ২০১৯ সালে বিকেএসপি নারী ফুটবল দল ভারতে গিয়ে ‘সুব্রত কাপ’-এ অংশ নিয়ে শিরোপা জিতেছিল। মেহেনুর দলের হয়ে প্রতিটি ম্যাচেই খেলেছিলেন। ওই বছরই টাঙ্গাইল জেলা দলের হয়ে জেএফএ-অ-১৪ বালিকা ফুটবল আসরে খেলেন। তারপরেই জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের ক্যাম্পে ডাক পান। তার ভবিষ্যত লক্ষ্য জাতীয় সিনিয়র দলের হয়ে খেলা। বগুড়ার শাকপালায় জন্ম নেয়া মেহেনুররা এক ভাই, দুই বোন। মেহেনুর সবার ছোট। বাবা আবু হোসেন সরকারী চাকরিজীবী। পরিবার থেকে খেলাধুলার ব্যাপারে পূর্ণ সমর্থন-সহযোগিতা পেয়েছেন। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় পাশের বাড়িতে বেড়াতে আসা এক সিনিয়র মেয়েকে (নাম সোহেলী) ফুটবল খেলতে দেখে ফুটবলের প্রতি অনুরাগ জন্মে মেহেনুরের। দুজনে একসঙ্গে অনুশীলন করতেন। পরে দুজনেই বিকেএসপিতে ভর্তি পরীক্ষা দেন। মজার ব্যাপারÑমেহেনুর টিকে গেলেও সোহেলী পাস করেননি! নিজের পজিশনের না হলেও লিওনেল মেসিকেই প্রিয়-আদর্শ ফুটবলার হিসেবে মানেন মেহেনুর। ফুটবল ছাড়া কখনই অন্য কোন খেলা খেলেননি তিনি। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এ্যাথলেটিক্স অবশ্য খেলেছেন টুকটাক। ফুটবলই তার ধ্যান-জ্ঞান। বুধবারের ম্যাচ নিয়ে মেহেনুরের ভাষ্য, ‘প্রথমে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়লেও আমাদের আত্মবিশ^াস ছিল আমরাই জিতব। যদিও প্রথমার্ধে আমরা ভাল খেলিনি। কিন্তু জানতাম গোল করার সুযোগ আমরা পাবই, সেটা কাজে লাগাতে পেরেছি বলেই জিতেছি। কষ্ট করলে সেটার ফল পাবই। লীগে আমাদের আরও তিন ম্যাচ বাকি। চেষ্টা করব প্রতিটি ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের অবস্থানের আরও উন্নতি ঘটানোর।’
×