ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিকতা যেন নীতিহীন না হয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ২৬ অক্টোবর ২০২০

সাংবাদিকতা যেন নীতিহীন না হয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সাংবাদিকতার নীতিমালা মেনে চলতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নৈতিকতা বিবর্জিত হলুদ সাংবাদিকতা করবেন না। নিরপেক্ষ, বাস্তবমুখী এবং দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্যবোধ থেকে সাংবাদিকতা করুন, সে রকমই আমরা চাই। নীতিহীন সাংবাদিকতা কোন দেশের কল্যাণ আনতে পারে না। আপনারা নিশ্চয়ই সেই দায়িত্বশীলতা নিয়ে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কাজ করবেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, দুর্নীতির ক্ষেত্রে আমরা কোন্ দলের বিবেচনায় আনি না। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। রবিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মূল অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি এবং রজতজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির চেয়ারম্যান শাহজাহান সরদার। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উদ্যাপন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও ডিআরইউ’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ফিরোজ, উদ্যাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ডিআরইউ’র সহ-সভাপতি নজরুল কবীর, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী। রজতজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডিআরইউ সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, স্বাগত বক্তব্য দেন উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব ও ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী। ডিআরইউ’র সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীবুর রহমান অনুষ্ঠানে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। জাতির পিতার বক্তব্য উদ্ধৃত করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘নীতিহীন রাজনীতি দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পারে না। তেমনি নীতিহীন সাংবাদিকতা দেশের কোন কল্যাণ করতে পারে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’ বঙ্গবন্ধুর আরেকটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সেটি হলো, ‘গণতন্ত্রের একটা নীতিমালা আছে, সাংবাদিকতার একটা নীতিমালা আছে। এ দুটো মনে রাখলে আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারব।’ তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে সব থেকে মূল্যবান কথা। শেখ হাসিনা বলেন, নীতিহীন সাংবাদিকতা কোন দেশের কল্যাণ আনতে পারে না বরং ক্ষতি করে। হয়তো কিছু মানুষ অর্থ সম্পদের মালিক হতে পারে কিন্তু অর্থ-সম্পদ সবসময় কাজে লাগে না। এই করোনাভাইরাস হওয়ার কারণেই এটা আজকে প্রমাণিত যে কোটি কোটি টাকা থাকলেও অনেক সময় কাজে লাগে না। করোনাভাইরাস সারাবিশ্বব্যাপী মানুষকে এই একটা শিক্ষা দিয়ে গেছে। শুধু অর্থ সম্পদ বা নিজের স্বার্থপরতা কখনও কাউকে রক্ষা করতে পারে না। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রসঙ্গ তুলে সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রচেষ্টাই হচ্ছে মানুষের জীবনটাকে আরও উন্নত করা। আজকে ৯৭ ভাগ মানুষের ঘরে আমরা আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়েছি। মুজিববর্ষে আমরা প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে আলো জ্বালাব। সেই বিদ্যুত সুবিধাটাও কিন্তু আমরা দিয়ে দিচ্ছি। পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এই যে আজ সকালেও এই দশটার সময় ৩৪ নম্বর স্প্যানটা বসল। ইনশাল্লাহ, এটাও খুব দ্রুত শেষ হবে। আমরা মুজিববর্ষ উদ্যাপন করার অনেক কর্মসূচী নিয়েছিলাম। করোনাভাইরাসের জন্য জনসমাগম হয়, সেটা আমরা করতে পারিনি। আমরা ভার্চুয়ালি করেছি। আমরা ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সেটাও আমাদের উদ্যাপন করতে হবে। স্বাধীনতা আমাদের মহৎ অর্জন এবং আমি এইটুকু বলব, আমরা রজত জয়ন্তীর সময়ও সরকারে ছিলাম। সুবর্ণ জয়ন্তীর সময়ও আমরা সরকারে থেকে উদ্যাপন করতে পারব। সেটাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে, এইটুক সুযোগ-সুবিধা আল্লাহ দিয়েছেন। বাংলাদেশটাকে আমরা যেন গড়ে তুলতে চাই এবং সেভাবেই এগিয়ে যেতে চাই। সেইক্ষেত্রে আপনাদের কাছে বলব- আপনারা নিশ্চয়ই দায়িত্বশীলতা নিয়ে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে আপনারা কাজ করবেন। কারণ এই রিপোর্টগুলো অনেক সহযোগিতা করে। এ সময় কোথাও দুর্নীতি হলে তার সঙ্গে দল বা সরকারের কেউ জড়িত কিনা সেই চিন্তা না করে সরকার সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটা সময় দেশে যতই দুর্নীতি হোক, অন্যায়-অনিয়ম হোক, সেটা ‘ধামাচাপা’ দেয়া হতো। কিন্তু আমরা তা করছি না। যেখানে যেই রিপোর্ট হচ্ছে, বা যা আমরা খবর পাচ্ছি, বা যতটুকু কোথাও কোন দুর্নীতি বা কোন ধরনের অন্যায় হলে আমরা কিন্তু কখনও এই চিন্তা করি না যে এটা করলে এর সঙ্গে আমার দল জড়িত কিনা বা অমুক জড়িত কিনা বা পার্টির বদনাম হবে কিনা, সরকারের বদনাম হবে কিনা। আমি চিন্তা করি যেখানে অন্যায় হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। হ্যাঁ, এটা নিতে গিয়ে অনেক সময় দোষটা আমাদের ওপরই এসে পড়ে। আওয়ামী লীগ সরকারই বোধহয় দুর্নীতি করছে। ঘটনা তা নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছিল, তারাই এ দেশে ‘দুর্নীতির বীজ বপন করে গেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে জিয়াউর রহমান, এরপরে এরশাদ, এরপরে খালেদা জিয়া। তারা দুর্নীতিটাকে প্রশ্রয় দেয়া শুধু না, নিজেরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল এবং দুর্নীতিকে লালন পালনই করে গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা কিন্তু সেটা কখনও করছি না। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিজেরাই চিন্তা করেন, এই দেশে জঙ্গীবাদীরা নিজেরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে, সরকারীভাবে তাদের প্রটেকশন দেয়া হয়েছে, পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। আর সেই বাংলা ভাই টাংলা ভাই, এরা সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ট্রাকে করে মিছিল করে। এই ঘটনা তো আপনারা দেখেছেন। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সেই খুনীদের দেশ থেকে বের হতেও দেয়া হলো, কোথা থেকে এক জজ মিয়া নামের এক গরিব লোককে নিয়ে এসে একটা নাটক সাজানো হলো। আওয়ামী লীগ সরকার তেমন কিছু ঘটতে দিচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেখানে দুর্নীতি পাচ্ছি, সে আমার যতবড় দলের হোক, কর্মী হোক, যেই হোক, নেতা হোক, আমরা কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। হ্যাঁ তাতে আমাদের বিরোধী যারা, তাদের লেখার সুযোগ হচ্ছে, বা বলার সুযোগ হচ্ছে যে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করছে। কিন্তু এই কথাটা কেউ চিন্তা করছে না যে আওয়ামী লীগ দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না; সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে ভেবেছিল এটা বোধহয় বাংলাদেশ একা সামাল দিতে পারবে না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা এটা সামাল দিয়েছিলাম। তারপরে যেন কখনও এই ঘটনা না ঘটতে পারে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। গণমাধ্যমের রিপোর্ট পড়ে বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় অনেক সময় অনেক ঘটনা আসে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেই রিপোর্ট দেখে অনেক অসহায় মানুষের যেমন দাঁড়াই। আবার অনেক অন্যায় ঘটনা ঘটলে তার প্রতিকারও করতে পারি। অনেক দোষীকেও আমরা শাস্তি দিতে পারি এবং দিয়ে থাকি। অনেক ঝুঁকি নিয়ে আপনারা অনেক সময় রিপোর্ট করেন। সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি এইটুকু অনুরোধ করব- আপনারা যেন ধন্যবাদের যোগ্য কাজই করেন কিন্তু আবার এমন রিপোর্ট করবেন না, যেটা মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় বা মানুষ বিপথে যায়। সেদিকে আপনাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। সমালোচনায় কোন আপত্তি নেই, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, সমালোচনার মধ্য দিয়েই অনেক কিছু জানা যায়। আপনারা রিপোর্ট করেন এবং যে যেভাবে যা খুশি আপনারা কিন্তু রিপোর্ট করতে পারেন। সেখানে আমরা কোন বাধা দেইনি। স্বাধীনতার পর জাতির পিতাও কিন্তু আপনাদের সেই সুযোগটা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতা দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে প্রেসক্লাবে সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায় একটা বক্তব্যে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলন, ‘বিপ্লবের পর যেকোন দেশ কোন যুগে এতটা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে নাই, যা আমরা করছি। আমরা ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায়ও বিশ্বাস করি। এই জন্য আপনাদের কোন কাজে কখনও কোনরকম হস্তক্ষেপ করি নাই। বিপ্লবের পরে ছয় মাসের মধ্যে আপনারা যতখানি স্বাধীনতা পেয়েছেন ততখানি স্বাধীনতা এদের পূর্বে কেউ পায় নাই। আমার সরকার সংবাদ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে এমন নজির কেউ দিতে পারবে না।’ শেখ হাসিনা বলেন, কথাগুলো সত্য। আপনারা জানেন, এখন তো অনেকেই অল্প বয়সের তখন জন্মই হয় নাই। যখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে ২৫ মার্চ। তখন কিন্তু অনেকগুলি পত্রিকা তারা পুড়িয়ে দেয়। খুব বেশি পত্রিকা আমাদের ছিল না। প্রত্যেকটা সংবাদপত্র অফিসে তারা হামলা চালায়। স্বাধীনতার পর এমন একটা অবস্থা হয় এই সব সংবাদপত্র চালানো তাদের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই কিন্তু উদ্যোগ নিয়ে সাংবাদিকদের সরকারী চাকরি দিয়েছিলেন, সরকারী বেতন সবাই পেতেন, সরকারী চাকরির মর্যাদা দিয়েছিলেন। সেটাকে হয়তো অন্যভাবে দেখা হয়েছে, ওনি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছেন! কারণ তখন কারও বেতন দেবার মতো বা সাংবাদিক চালানোর মতো কোন ক্ষমতা ছিল না। আর্থিক সেই অবস্থাটা ছিল না। সেই দায়িত্বটাও তিনি নিয়েছিলেন এবং তখন সকলকেই সরকারী চাকরির মর্যাদা দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্য হলো- আমার নিজের দেখা যারা সরকারী চাকরি পেয়েছিল তারাই বেশি সমালোচনা করত। যে কারণে আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকারে আসি, তখন দুটি পত্রিকা সরকারী ছিল। আমি সেগুলি যখন বেসরকারী করে দিতে যাই বা সরকারী কোন পত্রিকা থাকবে না বন্ধ করে দিতে যাই, তখন একসময়কার সমালোচকরা তারা যেহেতু সরকারী বেতন-টেতন পেতেন, তারা আন্দোলনও করে, অনশনও করে। কেন সেটা আমরা বন্ধ করব। তখন আমার বাবা নাকি রাষ্ট্রীয়করণ করেছে বলে আপনারা আন্দোলন করেছেন, সমালোচনা করেছেন, এখনও করে যান। তার মানে রাষ্ট্রীয়করণ করে কোন সংবাদপত্র রাখব না। এটা আমার সিদ্ধান্ত। সবাইকে দায়িত্ববোধ নিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দায়িত্ববোধটা হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। আর ইতোমধ্যে আমরা আমাদের জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। গণমাধ্যমকর্মীদেরও চাকরি সুরক্ষায় গণমাধ্যমকর্মী চাকরি শর্তাবলী আইন, যেটা আগে কখনও ছিল না। তাছাড়া সম্প্রচার খাতে স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সম্প্রচার আইন প্রণয়নেরও কাজ চলছে। এই কমিশনটা গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রচার আইনও আমরা করে দেব। যাতে করে আমি বলব, বাস্তবমুখী কাজ হয়। অহেতুক সমালোচনায় মানুষকে বিভ্রান্ত করে যেন একটা হলুদ সাংবাদিকতা যেন না থাকে। আর অনলাইনেও অন্তত সমাজভিত্তিক, মানবিক কল্যাণ, মানুষের উন্নয়নের দিকে যেন কাজে দৃষ্টি থাকে, সেই ধরনের সাংবাদিকতাই যেন হয়। সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা রিপোর্ট করেন এবং আপনারা জানেন, আপনারা দেখেছেন; যে যেভাবে যা খুশি আপনারা কিন্তু রিপোর্ট করতে পারেন। সেখানে আমরা কোন বাধা দেইনি। ঠিক স্বাধীনতার পর জাতির পিতাও কিন্তু আপনাদের সেই সুযোগটা দিয়েছিলেন। নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনটাও কিন্তু সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ছিল। তিনি যখন কোলকাতায় পড়াশোনা করতেন তখন যে পত্রিকা, একবার একটা পত্রিকা বের করা হয়েছিল সাপ্তাহিক মিল্লাত। তার সঙ্গে উনি জড়িত ছিলেন। সেটা বেশিদিন চলেনি। এরপর ইত্তেহাদ নামে একটি পত্রিকা বের হয়, সে পত্রিকার সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। হাসেম সাহেব মূলত দায়িত্বে ছিলেন সে পত্রিকার। কিন্তু তিনি (বঙ্গবন্ধু) আমাদের পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর পাকিস্তান হওয়ার পর যখন সবাই বাংলাদেশে চলে আসে তখন ইত্তেফাক বের করা হয় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অর্থে। এই ইত্তেফাক পত্রিকাটা, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এটার দায়িত্বে ছিলেন। সেখানেও কিন্তু বঙ্গবন্ধু ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগের জন্য তিনি আর একটি পত্রিকা বের করেছিলেন ‘নতুন দিন’ নামে। সেই পত্রিকার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলার বাণী সপ্তাহিক বের করেন। সেটা মার্শাল ল’ জারির পর গ্রেফতার হন এবং এরপর যখন তিনি মুক্তি পান সেই ১৯৬১ সালের দিকে তখন থেকে সাপ্তাহিক বাংলার বাণী বের করেন। এভাবে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক ছিল। সেদিক থেকে আমি দাবি করতে পারি, আমিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সন্তান হিসেবে সাংবাদিক পরিবারেরই একজন সদস্য। কাজেই সেভাবেই আমি আপনাদের দেখি। দেশকে এগিয়ে নিতে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০৮ নির্বাচনে দিন বদলের ডাক দিয়েছিলাম। রূপকল্প ঘোষণা করেছিলাম। এরপর আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিই। ২০১০-২০২০, এখন আমরা ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ২১০০ সালে ডেল্টা প্ল্যান করেছি। অর্থাৎ ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের জীবনটা যেন সুন্দর হয় উন্নত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে পরিকল্পনার একটা কাঠামো রেখে যাচ্ছি। হ্যাঁ, সময়ের তাগিদে, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বিজ্ঞানের প্রভাবে হয়তো সময় সময় এগুলো সময়োপযোগী করতে হবে কিন্তু এরই ভিত্তিতে আমরা যদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে আমাদের দেশের কাজ করি, এই দেশ এগিয়ে যাবে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। এদেশ ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে উঠবে। এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ কোনদিন ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির রজত জয়ন্তী উদ্যাপনের কর্মসূচীর সফলতা কামনা করেন এবং সকল সদস্যের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাইকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
×