ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার, ৯ অস্ত্র জব্দ

পাহাড়ে অস্ত্রের কারখানা ॥ দুই কারিগর, চার রোহিঙ্গা আটক

প্রকাশিত: ২২:৫২, ৪ অক্টোবর ২০২০

পাহাড়ে অস্ত্রের কারখানা ॥ দুই কারিগর, চার রোহিঙ্গা আটক

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কারিগর নিয়ে এসে অস্ত্র তৈরি এবং ভাড়ায় এনে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র মজুদ করছে রোহিঙ্গারা। ক্যাম্প লাগোয়া পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ দুই কারিগর ও চার রোহিঙ্গা ডাকাতকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উখিয়ার মধুরছড়ায় র‌্যাব এবং শনিবার ভোরে হ্নীলা আশ্রয়ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে বিজিবি এ অভিযান চালায়। সূত্র জানায়, প্রাণভয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নিলেও তাদের বেআইনী কর্মকা- ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। প্রতিনিয়ত খুনখারাবি, দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি ও ইয়াবা-স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। টেকনাফের পুঠিবনিয়া, শালবন, নয়াপাড়া মুচনি, উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী আশ্রয়ক্যাম্পে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের কাছে শতাধিক অবৈধ অস্ত্র মজুদ আছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরিসহ তা মজুদ করতে মহেশখালী থেকে অস্ত্রের কারিগর ভাড়ায় এনে অবৈধ অস্ত্র তৈরি করছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা। ওই কারিগররা মধুরছড়া পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে অবৈধ অস্ত্র তৈরি ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সরবরাহ করে আসছিল। সূত্র মতে, সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের শেল্টারে গহীন জঙ্গলে স্থাপন করা হয়েছে অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা। উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে সরবরাহ করা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে অস্ত্র বানানো কাজে অভিজ্ঞ দুই কারিগর ও টেকনাফে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চার সশস্ত্র রোহিঙ্গা ক্যাডারকে আটক করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারে একটি গ্রুপ অপর গ্রুপের ক্যাডারদের ঘায়েল করতে বন্দুকযুদ্ধে মিলিত হচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের ক্যাডাররা। এটা কিসের আলামত, তা খুঁজে বের করতে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে রোহিঙ্গাদের অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। ছয়টি অস্ত্র ও বিপুল গুলিসহ চার ক্যাডারকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে বিজিবি। অস্ত্রের কারখানা থেকে দুজন অস্ত্রের কারিগরসহ তিনটি অস্ত্র, দুই রাউন্ড গুলি ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উখিয়ার মধুরছড়া পাহাড়ে এ অভিযান চালানো হয় বলে জানান র‌্যাব-১৫ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান। আটক অস্ত্র তৈরির কারিগররা হচ্ছে মহেশখালীর আবু মজিদ ওরফে কানা মজিদ ও রবি আলম। র‌্যাব জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মধুরছড়ার গহীন পাহাড়ী এলাকায় অবস্থান করে অস্ত্র তৈরি করে রোহিঙ্গাদের মাঝে সরবরাহ করে আসছিল। মেজর মেহেদী বলেন, শুক্রবার মধুরছড়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন সংরক্ষিত গহীন পাহাড়ে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছে খবরে র‌্যাবের একটি দল অভিযান চালায়। একপর্যায়ে মধুরছড়া পাহাড় থেকে দুজনকে আটক করা হয়। তাদের অবস্থান নেয়া একটি কুড়ে ঘর থেকে দেশীয় তৈরি দুটি বন্দুক, দুটি গুলি ও বেশকিছু অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আটকরা মহেশখালী থেকে এসে মধুরছড়া গহীন পাহাড়ী এলাকায় অবস্থান করে অস্ত্র তৈরি করে রোহিঙ্গাদের কাছে সরবরাহ করত। অভিযানস্থলের দুই পাশে কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শীর্ষ ডাকাত বাহিনীর চার দস্যু বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ বিজিবির হাতে আটক হয়েছে। টেকনাফের হ্নীলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকা থেকে শীর্ষ ডাকাত বাহিনীর এই কুখ্যাত চার ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে বিজিবি। ঘটনাস্থল তল্লাশী করে দেশীয় তৈরি ছয়টি বন্দুক, ১০ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৯ রাউন্ড খালি খোসা, চার রাউন্ড রাইফেলের এ্যামুনেশন, চার রাউন্ড এলএমজি এ্যামুনেশন, চার রাউন্ড প্যারাসুট ফ্লেয়ার, একটি পুলিশ বেল্ট ও একটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়েছে। আটক ডাকাতরা হচ্ছে, হ্নীলা উলুচামারী কোনারপাড়ার মৃত আবুল হোছনের পুত্র নুরুল আমিন, মোঃ শফির পুত্র আনোয়ার হোছন, রুহুল আমিনের পুত্র জাফর আলম ও রঙ্গিখালী মাদ্রাসাপাড়ার মোজাফ্ফর আহাম্মদের পুত্র নজির আহাম্মদ। টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান জানান, গহীন পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা সংঘটিত অস্ত্রধারী ডাকাতদের ধরতে বিজিবি সদস্যরা সদা প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতা পেলে চলমান অভিযানে আরও সফলতা আসবে। এলাকার জনগণের দাবি হ্নীলার আলীখালী, রঙ্গিখালী, গাজীপাড়া, উলুচামারী কোনার পাড়াসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকাগুলোতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার এবং মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অবৈধ অস্ত্রধারী কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। অপরাধীরা মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ, ডাকাতি, অপরহণ মুক্তিপণ আদায়, হত্যাসহ সব অপরাধে জড়িত। অভিজ্ঞজনরা বলেন, কয়েকদিন পরপর দুই গ্রুপের মধ্যে গুলিবিনিময়, হতাহত, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে অস্ত্রের ঝনঝনানি, চুরি-ডাকাতিসহ নানা অজানা আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যেও ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। গভীর রাতে ক্যাম্পের ভেতরে গোপনে ট্রেনিং নিচ্ছে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা। মাস্টার মুন্না গ্রুপ ও মুহাম্মদুল্লাহ গ্রুপ ক্যাম্পে জঙ্গী সংগঠন সৃষ্টি করে সদস্য সংগ্রহ করে চলেছে। উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া মরগেছ পাহাড়ে তাদের অবস্থান। রোহিঙ্গাদের ঘিরেই তৎপর রয়েছে কয়েকটি জঙ্গী সংগঠন। ক্যাম্পে আরাকান ভিত্তিক জঙ্গী ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে রোহিঙ্গা যুবকদের আকৃষ্ট করছে। মিয়ানমারের একটি সশস্ত্র রোহিঙ্গা সংগঠনের নামে আশ্রয় ক্যাম্প থেকে সদস্য সংগ্রহে সক্রিয় সন্ত্রাসীরা।
×