ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাম্প-বাইডেন প্রথম নির্বাচনী বিতর্কে তিক্ততা, বিশৃঙ্খলা

প্রকাশিত: ২২:৫১, ১ অক্টোবর ২০২০

ট্রাম্প-বাইডেন প্রথম নির্বাচনী বিতর্কে তিক্ততা, বিশৃঙ্খলা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠানেই চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে ৯০ মিনিটের এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ক্লিভল্যান্ডের কেজ ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত এই বিতর্কে অংশ নেন এবারের নির্বাচনের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো পরস্পরের মুখোমুখি হলেন তারা। তবে প্রথম বিতর্কেই চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খবর সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসির। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ট্রাম্পকে দেখা গেছে আক্রমণাত্মক ভূমিকায়। গঠনমূলক বিতর্কের চেয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণেই বেশি আগ্রহী দেখা গেছে তাকে। এমনকি বাইডেনের প্রতি রীতিমতো অপমানজনক কিছু বাক্য ছুড়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। এর এক পর্যায়ে ট্রাম্পকে ক্লাউন বা ভাঁড় হিসেবে আখ্যায়িত করেন বাইডেন। এমনকি তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। ট্রাম্প প্রতিটি বিষয়ের ওপর দেয়া তার উত্তরে জো বাইডেনকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। বাইডেনের উত্তরের সময়ও তিনি তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। রাত যত বাড়তে থাকে ট্রাম্প যেন তার ব্যক্তিগত আক্রমণ আরও শাণিত করতে থাকেন। ব্যক্তিগত আক্রমণে ব্যস্ত রাখার মধ্য দিয়ে মূলত নির্বাচন সংক্রান্ত মৌলিক বিষয়গুলোর আলোচনা থেকে বাইডেনকে দূরে সরিয়ে রাখার কৌশল নেন ট্রাম্প। এ দিনের বিতর্কে ট্রাম্পের কর ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন জো বাইডেন। তিনি বলেন, এমনকি একজন স্কুল শিক্ষকও এর চেয়ে বেশি কর পরিশোধ করেন। এ সময় বাইডেনকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন ট্রাম্প। এ সময় বাইডেন বলেন, ডোনাল্ড আপনি কী এক মিনিটের জন্য থামতে পারেন?’ এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দেন যে, ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে আগেই এটা মেনে নেয়া হয়েছে, তারা অন্যের বক্তব্যের সময় বাধা দেবেন না। সঞ্চালক ওয়ালেস ট্রাম্পকে বলেন, আপনার প্রচার শিবির সম্মত হয়েছিল যে, উভয় পক্ষই দুই মিনিট করে উত্তর দেয়ার সুযোগ পাবে। এ সময় কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হবে না। বাইডেনের দাবি, ট্রাম্প পুরো বিতর্কটিকেই নস্যাত করে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি কখনও কথা রাখেন না। আর এখানে তিনি যা বলছেন তার পুরোটাই অসত্য। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩ নবেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে আগাম ভোট দিয়ে ফেলেছেন ১০ লাখ ভোটার। শেষ মুহূর্তে ভোটারদের কাছে টানতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। তবে করোনা মহামারীজনিত পরিস্থিতির ফলে নানা বিধি নিষেধের কারণে এবার কোন পক্ষই বড় ধরনের শোডাউন করতে সমর্থ হয়নি। নির্বাচনী বিতর্কের জন্য গঠিত নিরপেক্ষ কমিশন প্রশ্নের জন্য মোট ছয়টি বিষয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এর মধ্যে করোনা মহামারীর বিষয়টিরও উল্লেখ রয়েছে। প্রশ্নের জন্য নির্ধারিত ছয়টি বিষয় হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি, সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান, সুপ্রীমকোর্ট, অর্থনীতি, বর্ণবৈষম্য ও সহিংসতা এবং নির্বাচনে বিশুদ্ধতা। দুই প্রার্থীকেই প্রতি প্রশ্নের জন্য ১৫ মিনিট করে সময় দেয়া হয়। যদিও নির্ধারিত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষ একহাত নিয়েছেন দুই প্রার্থী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর তহবিল কাটছাঁটের প্রস্তাবে সমর্থন জানানো ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে উসকে দিয়ে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আপনি এমনকি ‘আইন প্রয়োগকারী’ এ শব্দগুলোও উচ্চারণ করতে পারবেন না, কেননা তাহলে আপনি আপনার উগ্র বাম সমর্থকদের হারাবেন।’ বাইডেনের ‘স্মার্ট’ শব্দ ব্যবহারে আপত্তি জানান ট্রাম্প। বলেন, ‘আপনি হয় ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ কিংবা তার কাছাকাছি ধরনের ছাত্র হিসেবে ডিগ্রী নিয়েছেন। কখনও স্মার্ট শব্দটা আমার সামনে উচ্চারণ করবেন না। কখনও করবেন না।’ স্বাস্থ্যসেবা ইস্যুতে বাইডেন ডেমোক্র্যাট পার্টির সোশালিস্টদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন বলেও বিতর্কে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। বলেন, তারা আপনার ওপর আধিপত্য করতে যাচ্ছে, জো, আপনি জানেন সেটা। জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, এখন আমিই ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলেও অ্যাখ্যা দেন। সবাই জানে সে মিথ্যাবাদী, বলেন তিনি।
×