ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে সিকিউরিটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করল ভিসা

প্রকাশিত: ১৭:০১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাংলাদেশে সিকিউরিটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করল ভিসা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্বখ্যাত পেমেন্ট টেকনোলজি কোম্পানি ভিসা সম্প্রতি বাংলাদেশে তাদের ‘ফিউচার অব সিকিউরিটি রোডম্যাপ’ প্রণয়ন করেছে, যার ভিত্তিতে পরবর্তী তিন বছরের জন্য তাদের লেনদেন ব্যবস্থায় এক অধিকতর নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য নকশা অঙ্কিত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে প্রতিনিয়তই মোবাইল এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে মানুষের আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ ও নির্ভরশীলতা বাড়ছে, সেই সাথে প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাহক। ভিসার সদ্য প্রণীত এই ভবিষ্যৎ নকশা বাংলাদেশে এমন ক্রমবর্ধমান গ্রাহকদের পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান এবং দেশের সামগ্রিক অর্থ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি নির্ভরশীলতা বাড়িয়ে একটি নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য অবস্থান তৈরিতে সময়োপযোগী ভূমিকা রাখবে। নতুন প্রণীত পরিকল্পনার আওতাধীন রয়েছে সকল স্থানীয় ভিসা ক্রেডেনশিয়াল ব্যাংক এর ইএমভি® থ্রিডিএস প্রটোকল। পাশাপাশি, মোবাইল লেনদেনের ক্ষেত্রে ইন-অ্যাপ টোকেনাইজেশন ও পেমেন্ট সিকিউরিটি প্রসঙ্গে ভিসা মার্চেন্টদেরকে উৎসাহিত করে। টোকেনাইজেশন এর ফলে মার্চেন্টরা আরো সুরক্ষিত উপায়ে গ্রাহকের পেমেন্ট ডাটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। সামগ্রিক লেনদেন ব্যবস্থাকে নির্ভরযোগ্য করে তোলার জন্য এই রোডম্যাপের আওতায় এটিএম ইএমভি মাইগ্রেশন সুবিধা রয়েছে, একইসাথে গ্রাহকদের হাতে অধিকতর নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে যুক্ত করা হয়েছে রিয়েল টাইম ফ্রড মনিটরিং টুল। জো কানিংহ্যাম, ভিসা’র এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের হেড অব রিস্ক, ভিসা ফিউচার অব সিকিউরিটি রোডম্যাপ (‘দ্য রোডম্যাপ’) প্রণয়ন প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মহামারির প্রাদূর্ভাব অসংখ্য ব্যবসায়ী ও ভোক্তাকে ডিজিটাল বাণিজ্যের প্রতি উৎসাহী ও নির্ভরশীল করে তুলেছে। প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেনের সাথে মানুষ যতই পরিচিত ও নির্ভরশীল হয়ে উঠছে, আমরা ততোই প্রাধান্য দিচ্ছি একটি সহজতর, দ্রুততর ও নিরাপদ গ্রাহকসুবিধা সুনিশ্চিত করতে – সেটি অনলাইন পেমেন্ট বা কন্টাক্টলেস কার্ড যেটিই হোক না কেন। ভিসা গ্রাহকের অর্থ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রশ্নটিকে সবচাইতে বেশি জোর দেয়, এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, একটি পরিবর্তনশীল বিশ্বে গ্রাহকদের সাথে একটি দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক সৃষ্টিতে একই ধরনের ব্যবস্থা তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের অর্থনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরিতে ভিসা প্রণীত ফিউচার অব সিকিউরিটি রোডম্যাপ এক কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। আমরা আমাদের সকল অংশীদারদেরকে ধন্যবাদ জানাই, আমাদের এক ও অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশকে একটি উন্নততর ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হতে সাহায্য করবে।’ বৈশ্বিকভাবে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই-এর সাহায্যে ভিসা ২৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের বাৎসরিক জালিয়াতি প্রতিরোধ করেছে, যা নিঃসন্দেহে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় পক্ষের জন্যই একটি আস্থার জায়গা নিশ্চিত করেছে। একাধিক স্তরে মনুষ্য বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তি নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ভিসা বহু বছর ধরে ০.১ শতাংশেরও কম জালিয়াতির হার ধরে রেখেছে। এই আস্থাশীলতা ভিসা’র গ্রাহকদেরকে নিজ লেনদেনের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা ও হাতিয়ার প্রদান করেছে, পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ব্যবসায় ও নিয়ন্ত্রকদেরকে গতির সঞ্চার করেছে। রোডম্যাপ প্রণয়ন প্রসঙ্গে ভিসা ইন্ডিয়া ও সাউথ এশিয়ার গ্রুপ কান্ট্রি ম্যানেজার টিআর রামাচন্দ্রন বলেন, ‘গ্রাহক নিরাপত্তা ও লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যের স্বচ্ছতা সর্বদাই ভিসা’র কাছে সর্বোচ্চ প্রাধান্য পেয়ে আসছে। নতুন গ্রাহক এবং ব্যবসায়গুলোর মধ্যে ডিজিটাল অর্থ ব্যবস্থাপনায় যে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, তাকে আস্থাশীলতার সাথে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজন পেমেন্ট নেটওয়ার্ক, গ্রাহক, ব্যাংক এবং সরকারের মধ্যে আন্তঃসমন্বয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ একদিকে যেমন লেনদেনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে, পাশাপাশি প্রতিনিয়তই জন্ম দিয়ে চলেছে অভিনব জালিয়াতির ঝুঁকির। এমন বিপদজনক সম্ভাবনাগুলো থেকে এগিয়ে থাকার জন্য প্রয়োজন এক হয়ে কাজ করা, পাশাপাশি কার্যক্ষেত্রে উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ও গ্রাহক সন্তুষ্টিকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়, নিরাপত্তা রক্ষাতেও ঠিক ততটাই গুরুত্বারোপ করা। উন্নততর নিরাপত্তা ও অভিজ্ঞতার এই সমন্বয় ঘটানোর পথে হাঁটার প্রস্তুতিস্বরুপ বাংলাদেশ ফিউচার অব সিকিউরিটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে পেরে আমরা সত্যিই গর্বিত।’ ইএমভি থ্রি-ডি সিকিউর এবং টোকেনাইজেশনের মতো একই প্রযুক্তিগত গতিময়তায় বিকাশ ঘটাতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ভিসার রোডম্যাপ সিকিউরিটি বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এই রোডম্যাপের মূল বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে – ১। মূল ইকোসিস্টেম থেকে লেনদেন সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য মুছে ফেলা ও চুরি যাওয়া হিসাবের তথ্যকে বাতিল করা, অর্থাৎ ডিভ্যালু ডাটা। ২। নিরাপত্তাবলয় তৈরির মাধ্যমে হিসাব সংক্রান্ত ও ব্যক্তিগত তথ্যকে রক্ষা, অর্থাৎ প্রোটেক্ট ডাটা। ৩। যেকোনো লেনদেনের পূর্বে তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র বিশ্বাসযোগ্য লেনদেনগুলো স্বীকৃতি দেওয়া ও সম্ভাব্য জালিয়াতি নিরোধ, অর্থাৎ হারনেস ডাটা। ৪। গ্রাহক এবং মার্চেন্টদেরকে পূর্ণ ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নিরাপদ লেনদেনে তাদের সক্রিয় ভূমিকা তৈরি করা, অর্থাৎ এম্পাওয়ার এভ্রিওয়ান। আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্টস , নিয়ন্ত্রক ও নীতিনির্ধারক, এবং আইন প্রণেতাদের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করে ভিসা, যাতে করে অর্থ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। ভিসা ফিউচার অব সিকিউরিটি রোডম্যাপ এমন কিছু আন্তঃযোগাযোগ ও সমন্বয়ের ফলাফল, যা বাংলাদেশে লেনদেনের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। ভিসা গোটা বিশ্বব্যাপী এমন এক ধারার রোডম্যাপ প্রণয়ন করে চলেছে যাতে করে বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রক্রিয়াটি এক অনন্য নিরাপত্তা বলয়ের অভ্যন্তরে অবস্থান করে, পাশাপাশি প্রণীত পরিকল্পনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ভিসা বাংলাদেশে প্রধান অংশীদারদের সাথেও কাজ করে যাচ্ছে।
×