ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রিলিয়ন কোম্পানির হালচাল

প্রকাশিত: ২২:৪০, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

ট্রিলিয়ন কোম্পানির হালচাল

ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বলা হতো বিশ্বের প্রথম দিকের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। ১৬০২ সালে হল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি বাণিজ্য করত বিশ্বজুড়ে। সাগর কাঁপিয়ে তাদের বাণিজ্য পৌঁছে গিয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ইন্দো-এশিয়া অঞ্চলে। আর এই বাণিজ্যের কারণেই ব্যাপক সম্পদের অধিকারী হয়েছিল তারা। আজকের দিনে তাদের সম্পদের পরিমাণ ৮ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার। ১৭১১ সালে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতোই ব্রিটিশদের কোম্পানি সাউথ সি যাত্রা শুরু করে। তাদের সম্পদের পরিমাণ আজকের টাকার হিসাবে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ১৮৭০ সালে আমেরিকাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্ট্যান্ডার্ড ওয়েল। আজকের দিনের মূল্যে তারাও হয়েছিল ট্রিলিয়ন ক্লাবের সদস্য। ২০ শতকের শুরুর দিকে আমেরিকার ৯০ ভাগ তেলের সরবারাহ তারা করত। পরে একচেটিয়া বাণিজ্যের অভিযোগে আদালত তাদের ভেঙ্গে দেয়। বর্তমানে বিশ্বে ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানি আছে বেশ কয়েকটিই। সৌদি আরামকো অ্যাপল, মাইক্রোসফট, গুগলের এ্যালফাবেট এবং এ্যামাজন বর্তমানে ট্রিলিয়ন বা ১০০ বিলিয়ন ক্লাবের সদস্য। তবে একই কাতারে হলেও এদের মধ্যে দুটি কোম্পানি দুই ট্রিলিয়নে পা দিয়েছে। সৌদি আরামকো এবং এ্যাপল। ২০১৯ সালের শেষ দিকে সৌদি আরামকো প্রথম ২ ট্রিলিয়নে পদার্পণ করে। এই মুহূর্তে সৌদি আরামকোর তেলের রিজার্ভ ২৭০ বিলিয়ন ব্যারেল। তাদের গ্যাসের রিজার্ভ আছে ২৮৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। ধারণা করা হয় সৌদি সরকারের কর থেকে আয়ের ৯৩ শতাংশই আরামকোর। আরামকো আগামী ৭০ বছর ধরে তেল গ্যাস উত্তোলন করে যেতে পারবে। এতদিন যাবত এই ক্লাবের একমাত্র সদস্য ছিল সে। গত আগস্ট মাসে বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় কোম্পানি হিসেবে দুই ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানিতে পরিণত হয় প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। শূন্য থেকে ১ ট্রিলিয়নে আসতে এ্যাপলের সময় লেগেছে ৪২ বছর। আর ১ ট্রিলিয়ন থেকে ২ ট্রিলিয়নে পরিণত হতে সময় নিয়েছে মাত্র ২ বছর। গত মার্চ মাসেও এ্যাপলের সূচকগুলো নিম্নমুখী ছিল। জুন থেকে আবার তাদের পালে হাওয়া লাগতে শুরু করে। আগস্ট মাসের ১৯ তারিখে এ্যাপলের শেয়ারের মূল্য ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে যায় । আর এতেই ২ ট্রিলিয়ন ক্লাবে প্রবেশ করে স্টিচ জবসের মস্তিষ্কপ্রসূত এই কোম্পানি। করোনা মহামারীর মধ্যে যখন অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেই রীতিমতো লালবাতি জ্বলছে সেসময় এই সংবাদ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করে। মহামারীর সময় বেড়েছে নানান প্রযুক্তির কদর। আর তাই প্রযুক্তি কোম্পানি এ্যাপলের উত্থান অস্বাভাবিক কিছু না। এদিকে সৌদি আরামকোর থেকে খুব বেশি পেছনেও নেই এ্যাপল। শেষ হিসাব অনুযায়ী আরামকো বর্তমানে ২ দশমিক ০৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অধিকারী। মহামারীকালীন সময়ে দীর্ঘ লকডাউনের কারণে প্রায় সব দেশের যানবাহন থেকে বিমান স্থির হয়ে ছিল। আর এতে করে কমে গিয়েছিল তেলের চাহিদা। তেলের দাম নেমেছিল শূন্যের নিচে। ফলে বিশ্বের সব থেকে বড় তেলের উৎপাদনকারী সৌদি আরামকোর মুনাফার গতিও ভীষণভাবে শ্লথ হয়ে যায়। যদিও এখন আরামকো আবার আগের গতিতে ফিরেছে। তারপরও এ্যাপলের সামনে সুযোগ আছে আরামকোকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। এ্যাপলের শক্তি হলো তাদের দুর্দান্ত উদ্ভাবনি ক্ষমতা, নতুনত্ব। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কখনও যুগের থেকে এক ধাপ এগিয়ে তারা নানান পণ্য নিয়ে আসে গ্রাহকদের জন্য।
×