ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাবিহা রহমান

বয়স ভেদে ত্বকের যত্ন

প্রকাশিত: ২২:৫২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

বয়স ভেদে ত্বকের যত্ন

ত্বক সুন্দর ও সুস্থ রাখতে নিয়মিত যত্নের কোন বিকল্প নেই। এই যত্ন নিতে হবে ত্বকের ধরন আর আবহাওয়ার মতি বুঝে। একেক ঋতুতে একেকভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হয়। আবার সব বয়সে ত্বকের যত্নও এক রকম হবে না। ত্বক সাধারণত শুষ্ক, তৈলাক্ত, মিশ্র, স্বাভাবিক ও সংবেদনশীল এই পাঁচ রকম হয়ে থাকে। একেক ত্বকের একেক রকম যত্ন প্রয়োজন হয়। আবার সব বয়সী ত্বকের সমস্যাও হয় ভিন্ন ভিন্ন। যেমন যাদের বয়স কম, অর্থাৎ কিশোরী তাদের ত্বক একটু তৈলাক্ত হয়। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ, সাদা ফুসকুড়ির মতো সমস্যা দেখা দেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের সমস্যার ধরনও বদলাতে শুরু করে। ত্বকের অসামাঞ্জস্যতা, চোখের নিচে কালো দাগ, ডাবল চিন, বলিরেখার মতো সমস্যাগুলো বিভিন্ন বয়সের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। তাই বয়স, ত্বকের প্রকৃতি ও সমস্যা বুঝে তারপর ত্বক চর্চার রুটিন ঠিক করতে হবে। বিন্দিয়া বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি জানান, সাধারণত অল্প বয়সীদের ত্বকে তেমন কোন সমস্যা থাকে না। বয়স একটু বাড়তে শুরু করলে ধীরে ধীরে সমস্যা দেখা দেয়। কিশোরীদের ত্বকের প্রধান সমস্যা ব্রণ। বয়ঃসন্ধিকালে এটা বেশি পরিলক্ষিত হয়। এ জন্য দিনের মধ্যে কয়েকবার পরিষ্কার পানির ঝাঁপটা দিয়ে ত্বক ধুতে হবে। এতে ত্বকে তেলের প্রভাব কমবে, ত্বক পরিষ্কার থাকবে। ব্রণ হওয়া থেকে মুক্তি মিলবে। এ ছাড়া সপ্তাহে এক দিন নিতে হবে বিশেষ যত্ন। কমলালেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়া করে নিন। মসুর ডাল আর চাল ভিজিয়ে ভাল করে পিষে নিন। ওই পেস্টের মধ্যে চন্দন পাউডার, মুলতানি মাটি, কমলালেবুর খোসার গুঁড়া মিশিয়ে ভাল করে মিলিয়ে নিন। এই মিশ্রণের মধ্যে দুই চামচ দুধও মিশিয়ে নিতে পারেন। মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণ দূর হবে। প্রতিবার ত্বক পরিষ্কারের সময় ক্লিনজিং-টোনিং-ময়েশ্চারাইজিং এই তিনটি ধাপ মেনে চলতে হবে। রোদে যাওয়ার আগে ত্বকের খোলা অংশে লাগাতে হবে ‘ব্রড স্প্রেকটাম’ লোশন, যা আলট্রাভায়োলেট ‘এ’ এবং ‘বি’ দুটি ক্ষতিকর রশ্মিই আটকে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। প্রাকৃতিকভাবেই এই বয়সীদের ত্বক মসৃণ ও টান টান থাকে। শুধু পরিষ্কার রাখতে পারলেই তাদের ত্বকের যত্নের ষোলাআনা হয়ে যায়। বাইরে থাকার সময় শরীর ঘামা স্বাভাবিক। খেয়াল রাখতে হবে ঘাম শুকিয়ে যেন মুখে লেগে না থাকে। ঘেমে গেলে দ্রুত ঘাম শুকানোর পর মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। দিনের মধ্যে অন্তত চার থেকে পাঁচবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। বাজারের কেনা ফেসওয়াশের বদলে বাড়িতে তৈরি ঘরোয়া ফেসপ্যাক, স্ক্র্যাবার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা ভাল। মুখের পাশাপাশি হাত এবং পা নিয়মিত পরিষ্কার করে দিনে দুবার ময়েশ্চারাইজার লোশন লাগাতে হবে। চুলও নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। একদিন পর পর শ্যাম্পু করতে হবে। শ্যাম্পুর পর অবশ্যই ভাল কোন কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ক্ষেত্রেও ঘরোয়া কন্ডিশনার ব্যবহার করা ভাল। মেথি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা এই পানি দিয়ে চুল ধুতে পারেন। এটা ভাল কন্ডিশন হিসেবে কাজ করে। পঁচিশ থেকে ত্রিশের শুরুতে যারা রয়েছেন, তাদের ত্বক প্রকৃতিগত কারণেই একটু তেলতেলে হয়। তাই বেশিরভাগ মেয়েই এই সময় ব্রণের পাশপাশি নিস্তেজ ত্বকের সমস্যায় ভোগেন। ব্রণ থাকলে রেটিনয়িক এ্যাসিডযুক্ত প্রডাক্ট ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন। ত্বকের নিস্তেজ ভাব দূর করতে শসা, পাতিলেবুর রস, সাদা চন্দন, গ্লিসারিন, মধু ও গোলাপ জলের মিশ্রণ তৈরি করে প্যাক বানিয়ে ত্বকে লাগান। ত্বকের টান টান ভাব ধরে রাখতে ডিমের সাদা অংশ, মধু, সিডার ভিনেগার মেশানো প্যাক নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। এন্টি এজিংয়ের কথা শোনামাত্রই লাফিয়ে উঠে ব্লিচ, স্টিম ফেসিয়াল বা কোন রাসায়নিক ট্রিটমেন্টের কথা ভাবা শুরু করবেন না; বরং যোগব্যায়াম ও এক্সারসাইজ করুন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান। ত্বক তেলতেলে হলে বা এ্যাকনের জন্য তেলমুক্ত ফেসওয়াশ, হালকা স্ক্র্যাব, টোনার এবং ম্যাট ফিনিশের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এই বয়সীদের মধ্যে বাইরে চলাফেলার প্রয়োজন বেশি হয়। ফলে রোদ, বৃষ্টিসহ আবহাওয়া বদলের প্রভাবটাও বেশি পড়ে এদের ত্বকে। এই সময় যতটা সম্ভব বাইরে চলাফেরার সময় একটু সতর্ক থাকা উচিত। যেমন রোদে ছাতা ব্যবহার, বাইরে বেরোনোর আগে ত্বকে সানব্লক লাগানো জরুরি। রোদ থেকে ফিরে চোখে-মুখে প্রচুর ঠাণ্ডা পানির ঝাঁপটা দিতে হবে। রোদে পোড়া ভাব দূর করতে আলু দারুণ উপকারী। আলু ব্লেন্ড করে মুখে লাগান। এতে কালচে ভাব দূর হবে এবং পুড়ে যাওয়ার কারণে ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব কমবে। সাধারণত পয়ত্রিশের পর থেকেই চোখের নিচে ফাইন লাইনস এবং ডার্ক সার্কল দেখা দেয়। বেশির ভাগ রূপবিশেষজ্ঞের মতে, নায়াসাইনামাইড এবং কিউ ১০ এনজাইমযুক্ত আন্ডার আইক্রিম ত্রিশের পর থেকেই লাগানো উচিত। আর চল্লিশের পর থেকে আন্ডার আইক্রিমকে আপনার নিত্য ব্যবহার্য প্রডাক্টের তালিকায় রাখতেই হবে। প্রতিদিন রাত্রে ব্যবহার করুন পেপটাইডযুক্ত আইক্রিম। তার সঙ্গে রোজমেরি অয়েল বা আমন্ড অয়েলের সঙ্গে মাখন মিশিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে ত্বক নতুন জীবন লাভ করবে এবং ফিরে আসবে উজ্জ্বলতাও। ব্যবহার করতে পারেন তিলের তেল, অলিভ অয়েল এবং পিচ বা আপেলের মতো ফলের নির্যাসও।
×