ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভাঙছে তিস্তা, নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

ব্যয় বাড়ে কমে না ভাঙ্গন

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ২৪ আগস্ট ২০২০

ব্যয় বাড়ে কমে না ভাঙ্গন

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মৌজা শৌলমারীর হারাগাছ বানপাড়ায় প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। কিন্তু ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা যায় না। নামমাত্র বাঁশ ও গাছের পাইলিং আর বালির বস্তা ফেলে বিল উত্তোলন করা হয়ে থাকে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করলেন। বর্তমান পরিস্থিতি এমনটাই যে, ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা জানায় তিস্তার ভাঙ্গনে রাতে কেউ ঘুমাতে পারে না। জায়গা-জমি সবই গিলে খাচ্ছে তিস্তা একের পর এক। ভিটামাটি হারিয়ে বিধবা মাবিয়া বেগম (৪৫) বললেন, এখন আশ্রয় নেব কোথায় আমার সব শেষ। এভাবে একদিন হয়ত পৃথিবী ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হবে। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই পাই না। শুধু মাবিয়ায় নয়, তার মতো ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা জানালেন, তিস্তা নদী তাদের সব কিছু গিলে খাচ্ছে। তিস্তা নদী ভাঙ্গনের শিকার শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি সরিয়ে আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে। নদীর ভাঙ্গন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয়রা কেউ গাছ, কেউবা বাঁশ কেটে টিনের চালা দিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে ফাঁকা জায়গাগুলোতে। ওই এলাকার বাবুল হোসেন (৪৬) জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে ৩৬টি ঘর, বসতভিটা ও ৫৫ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এভাবে ভাঙ্গন চলতে থাকলে এ গ্রামের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিস্তার ভাঙ্গনে ডানতীর বাঁধ সংলগ্ন প্রায় ৫০ বছরের একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসাসহ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারা খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করলেও তাদের খোঁজ কেউ নেয়নি। এমন অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাররা। ওই এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, উজানের ঢলে তিস্তায় যখন বন্যা আসে তখন সব কিছু তলিয়ে যায়। আবার তিস্তার পানি কমতে শুরু করলে শুরু হয় ভাঙ্গন। আমরা দুই কূলের মাঝখানে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি। ফয়জুল ইসলাম, এনামুল, আলামিন, সফিকুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, দুলু মিয়া এবং বানপাড়া মসজিদের ইমাম ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার সভাপতিসহ অনেকে জানায়, শুধু বানপাড়ায় নয়, পার্শ্ববর্তী কিসামত, নোহালী, গোপালঝাড়, তালুক শৌলমারী, ডাউয়াবাড়ি এলাকায় প্রায় ১৭ শত একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। ৫ হাজার একর জমি হুমকির মুখে। আমরা ডানতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। এই ডানতীর বাঁধটাও হুমকির মুখে পড়েছে। ডালিয়া পাউবো উপসহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, তীব্র ভাঙ্গন এলাকাগুলো বাঁশ ও জিও ব্যাগ ফেলে প্রতিরক্ষায় বানাপাড়ায় ২৫০ মিটারে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। সোহাগের বাজার, শৌলমারীতে ভাঙ্গন ঠেকাতে পেরেছি। স্থায়ী পরিকল্পনা অংশ হিসেবে ব্লক, ডাম্পিং, প্লেসিং করার জন্য উর্র্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জে পাঁচ শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, যমুনায় আবারও পানি বাড়ছে। সেই সঙ্গে ভাঙ্গন প্রবণতাও বেড়েছে। সিরাজগঞ্জের উজানে কাজীপুরের ঢেকুরিয়া, নাটুয়ারপাড়া, পাটাগ্রাম, শুভগাছা ও সিরাজগঞ্জের পাঁচঠাকুরি, শিমলায় এবং ভাটিতে চৌহালী উপজেলায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। ইতোমধ্যেই যমুনার ভাঙ্গনে গত এক সপ্তাহে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বিভাগ সিরাজগঞ্জের উজানে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু করলেও ভাটিতে কোন কার্যক্রম নেই। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ভাঙ্গন একটি স্থানীয় ও প্রতিবছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রকৃতির এই যমুনা নদী তীরের প্রতি বছরই ব্যাপক ভাঙ্গন সংঘটিত হয়। এ বছর ভাঙ্গনের আরও ব্যাপ্তি ঘটেছে। সিরাজগঞ্জের নদী শাসন কাজের সঙ্গে জড়িত তৃণমূলর অনেকেরই ধারণা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমফান পরবর্তীতে যমুনার উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে আগাম বন্যা আঘাত হেনেছে যমুনায়। ভাঙ্গনও তীব্রতর হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যমুনা নদীতে মানুষের কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ, সিরাজগঞ্জ, সারিয়াকান্দি ও বাহাদুরাবাদে নদী প্রতিরক্ষা অবকাঠামো ইত্যাদি যমুনা নদীর প্রস্থের পরিবর্তনে নিঃসন্দেহে প্রভাব ফেলেছে। এসব নির্মাণ ও পরিকাঠামো তীর ভাঙ্গনের মাধ্যমে নদীর প্রশস্থ হওয়ার প্রবণতা সংকুচিত করছে। ফলে যেখানে এখনও কোন অবকাঠামো নির্মিত হয়নি সুযোগ বুঝে ভাঙ্গন আঘাত হানছে সেই স্থানে এবং জেগে উঠা দুর্গম চরে। উজানে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের ঢেকুরিয়া, নাটুয়ারপাড়া, পাটাগ্রাম, শুভগাছা ও সিরাজগঞ্জের পাঁচঠাকুরি, শিমলায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছ্ েপ্রতিদিনই এ অঞ্চলের মানুষ বসতবাড়ি হারিয়ে নতুন ঠিকানায় পাড়ি দিচ্ছে। টেকুরিয়ার সোহেল জানান, পানি বাড়তে থাকায় হঠাৎ করেই শুক্রবার বিকেল থেকে ভাঙ্গন শুরু হযেছে। ইতোমধেই টেকুরিয়ার প্রায় কুড়িটি বসতবাড়ি যমুনায় বিলীন হয়েছে। আবাদি জমিও ভাঙ্গনের কবলে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
×