ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ইরান বিরোধী প্রস্তাব ধোপে টেকেনি

মার্কিন প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান

প্রকাশিত: ০১:০২, ১৬ আগস্ট ২০২০

মার্কিন প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র উত্থাপিত এক প্রস্তাব ধোপে টেকেনি। তেহরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের এক অনলাইন সম্মেলনে এ মার্কিন প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়। সম্মেলনে চীন ও রাশিয়া ইরানের পক্ষে আর ডোমিনিকান রিপাবলিক যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেয়। বাকি ১১ দেশ ভোট দেয়া থেকে বিরত থেকেছে। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানের এ জয়কে বিশাল কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর আলজাজিরা, তেহরান টাইমস ও বিবিসি অনলাইনের। করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে শুক্রবার রাতে অনলাইনে নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় এখন পরমাণু সমঝোতার ভিত্তিতে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ইরানের ওপর জাতিসংঘের আরোপিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। নিরাপত্তা পরিষদে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দাবি করেছেন, তার দেশ এ সংক্রান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমেরিকা গত মঙ্গলবার প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে তুলতে চেয়েছিল। কিন্তু যখন ওয়াশিংটন বুঝতে পারে এটি পাস হবে না তখন সে এটি উত্থাপন করা থেকে বিরত থাকে। পরে মার্কিন সরকার তার ভাষায় প্রস্তাবের ইরানবিরোধী বক্তব্যের তীব্রতা কমিয়ে আনে যাতে এটির পক্ষে সব দেশের ভোট আদায় করা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমেরিকার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল। ২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতায় বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে তেহরানের ওপর আরোপিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। এর ফলে এখন ইরান আগামী অক্টোবর মাস থেকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সমরাস্ত্র বেচাকেনা করতে পারবে। শুক্রবারের বৈঠকের আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বিশ^ নেতাদের সকল প্রকার বিরোধিতা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের এ পরাজয়ের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে আন্তর্জাতিক শান্তি হুমকির মুখে পড়বে। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের এ পরাজয় প্রসঙ্গে আপাতত মুখ খোলেননি দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খবরটি আমি শুনেছি। তবে আপাতত এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেলি ক্রাফট বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের এ ব্যর্থতার জন্য বিশ^বাসীকে ভুগতে হবে। এ সিদ্ধান্ত শান্তি ও স্থিতিশীলতার অন্তরায়। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার সময় বৃদ্ধির আর কোন নৈতিক ভিত্তি নেই। তেহরান এখন অস্ত্র কেনার সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে। এর আগে ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র আগের প্রস্তাব বদল করে নতুন সাধারণ প্রস্তাব দেয়। এ বিষয়ে ইরান বলে, এ ধরনের প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে উঠতে পারে না। কারণ সবই নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের লঙ্ঘন। আগের প্রস্তাব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া প্রসঙ্গে জাতিংঘে নিযুক্ত ইরানী কূটনীতিক মাজিদ তাখতে রাভাঞ্চি বলেন, নতুন এ প্রস্তাব আর আগের প্রস্তাবের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সবই ইরানের বিরুদ্ধে বেআইনীভাবে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার ব্যবস্থা। নিরাপত্তা পরিষদ আমেরিকার প্রস্তাব গ্রহণ করবে না। ইরানের এ প্রতিনিধি জোর দিয়ে বলেন, তিনি আশাবাদী যে, যুক্তরাষ্ট্রের বেআইনী এ প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রত্যাখ্যান করবে। বুধবার মাজিদ তাখতে রাভাঞ্চি তার টুইটার এ্যাকাউন্টে দেয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরানবিরোধী আগের প্রস্তাব থেকে সরে আসে এবং নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন পাওয়ার জন্য নতুন একটি তুলনামূলক নরম প্রস্তাবের খসড়া দেয়।
×