ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মসলার বাজারে বেচাকেনায় রীতিমতো ধস

প্রকাশিত: ২১:২২, ৩১ জুলাই ২০২০

মসলার বাজারে বেচাকেনায় রীতিমতো ধস

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ পবিত্র ঈদ-উল-আজহা সমাগত। কিন্তু এবারের মসলার বাজারে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বেচাকেনায় রীতিমতো ধস সৃষ্টি হয়েছে। ঈদ-উল আজহার বাকি রয়েছে আর মাত্র ৫ দিন। অথচ মসলার বাজার চিত্র অন্যান্য বছরের তুলনায় ভিন্নরূপ নিয়ে আছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকদের সূত্রে জানানো হয়েছে, করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দা এবং এর পাশাপাশি দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কারণে এবার পশুর বাজার এখনও জমেনি এবং দুয়েকদিনের মধ্যে জমজমাট হওয়ার খুব একটা পরিস্থিতিও নেই। আর এ কারণে মসলার বাজারেও ধস নেমেছে বলে আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতাদের সুনির্দিষ্ট ধারণা। বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সব ধরনের মসলার বাজারদর কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়ে আসছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতাদের এবার লোকসান গুনতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাজার সূত্র জানিয়েছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চাহিদার বিপরীতে কিছু পরিমাণ বেশি মসলা বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে এসেছে। অথচ এবার বিগত বছরের তুলনায় বেচাকেনায় গতি নেই। গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে আদা, রসুন, পেঁয়াজ, জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনিসহ সব ধরনের মসলার দাম কমেছে। বিগত বছরগুলোতে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার আগে সচরাচর এমন চিত্র দেখা যায়নি। সূত্র মতে, মূলত করোনা আতঙ্কে পশুর হাট জমছে না। এছাড়া অর্থনৈতিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াও অন্যতম একটি কারণ। যে কারণে এবার কোরবানিদাতার সংখ্যাও হ্রাস যে পাবে তা নিশ্চিত। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার চামড়ার দামও কমিয়ে দিয়েছে। তার ওপর গত বছরের আহরিত বিপুল পরিমাণ চামড়া এখনও অবিক্রীত রয়েছে নানা কারণে। এদিকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বিক্রেতাদের সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ১৮ থেকে ২০ হাজার টন জিরা, ৫ থেকে ৬ হাজার টন এলাচ, ৬ থেকে ৭শ’ টন লবঙ্গ, ২৫ থেকে ২৬ হাজার টন দারুচিনি, ২ থেকে আড়াই হাজার টন গোল মরিচের চাহিদা থাকে। এ চাহিদার জোগান আসে ভারত থেকে জিরাসহ কয়েক পদের মসলা। আর গুয়েতেমালা থেচে এলাচ, চীন এবং ভিয়েতনাম থেকে দারুচিনি, লবঙ্গ, গোল মরিচ আমদানি হয়ে থাকে। গেল অর্থ বছরে আমদানিকারকরা বিগত বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা বেশি পরিমাণে মসলা আমদানি করেছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২৫ হাজার টন জিরা, প্রায় ৫ হাজার টন এলাচ, ২ হাজার টন লবঙ্গ, ২৬ হাজার টন দারুচিনি এবং ২১শ’ টন গোল মরিচ আমদানি হয়েছে। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। বাজার চিত্রে দেখা যায়, মসলার বাজার উর্ধমুখী নয়। উপরন্তু ঈদ-উল আজহা যতই এগিয়ে আসছে বিভিন্ন মসলার দাম ততই হ্রাস পাচ্ছে। পেঁয়াজ, রসুন, আদার মূল্য গত সপ্তাহের তুলনায় আরও কমেছে। অনুরূপভাবে জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি ও গোল মরিচের দামও কমেছে। কোন কোন মসলা কেজিতে ৩শ’ টাকা, আবার কোন কোনটি ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, যেসব মসলা আমদানি হয়ে এসেছে তা সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের পরিসংখ্যানে এসেছে। আমদানিকারকরা তখন ধারণা করতে পারেনি করোনাভাইরাস বিশ^জুড়ে সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে অর্থনৈতিক মন্দার ঘটনা। যা বাংলাদেশকেও ব্যাপকভাবে আঘাত করেছে। এ আঘাতের সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে কোরবানির পশু বেচাকেনার বিষয়টি। যেহেতু পশু বিক্রি অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে তা থেকে অনুমিত হচ্ছে কোরবানিদাতার সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। কোরবানির সঙ্গে যেহেতু মসলা ব্যবহারের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেক্ষেত্রে পশু বিক্রি কমার বিষয়টি মসলার বাজারেও আঘাত হেনেছে। যা রীতিমতো ধস নেমেছে বলে মত ব্যক্ত করা হয়েছে।‘
×