ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অনলাইনে অভিযোগ করা যাবে

সাইবার মামলা তদন্তে সিআইডির থানা হচ্ছে

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ৭ জুলাই ২০২০

সাইবার মামলা তদন্তে সিআইডির থানা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এই প্রথম সাইবার অপরাধে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করতে সিআইডি সাইবার থানা স্থাপন করতে যাচ্ছে। থানাটি ঢাকায় স্থাপন করা হবে। তবে এই থানা থেকে সারাদেশেই সাইবার সংক্রান্ত মামলার তদারকি করা যাবে। এমনকি এই থানায় প্রযুক্তির মাধ্যমে বা অনলাইনে মামলা দায়ের বা অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে। সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির বেশি ব্যবহারের কারণে স্বাভাবিকভাবেই প্রযুক্তিগত অপরাধ বাড়ছে। আর এসব অপরাধ থেকে অনেকেই মুক্তি পান না। আবার সুবিচারও পান না। এজন্য সিআইডি এই প্রথম ঢাকায় সাইবার থানা স্থাপন করতে যাচ্ছে। যে থানায় শুধু সাইবার সংক্রান্ত অপরাধের মামলার তদন্ত হবে। পাশাপাশি সারাদেশে হওয়া সাইবার মামলার তদন্তে সহায়তা করবে। থানাটিতে অনলাইনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ থাকবে। তিনি আরও জানান, সাইবার সংক্রান্ত অপরাধের পাশাপাশি মানবপাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধে জড়িতদের বিষয়েও সিআইডি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যেই লিবিয়ায় পাচারের সময় ২৬ বাংলাদেশীকে হত্যার এবং ১১ জনকে মারধর করার ঘটনায় মানবপাচার চক্রের গডফাদারদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা নজরদারির মধ্যে রয়েছে। বিদেশে বসে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদেরও তালিকা করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করে দেশে আনতে ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিদেশে পলাতকদের নজরদারিতে রাখতে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মানবপাচারকারীদের বিষয়ে সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে দুটি তালিকা এসেছে। এছাড়াও পাচারের ঘটনায় ভুক্তভোগী, তাদের পরিবার ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কাছ থেকেও অনেকের নাম পাওয়া গেছে। যারা সরাসরি মানবপাচারে জড়িত। তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। লিবিয়ায় আলোচিত হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িত গডফাদারদের তিনজনের সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আটক করা মানবপাচারকারীদের কাছ থেকে অনেক মানবপাচারকারী সম্পর্কে তথ্য মিলেছে। গ্রেফতারের পর এমন ঘৃণ্য অপরাধে জড়িতরা যাতে ছাড়া না পায়, এজন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। মানবপাচারে জড়িত থাকার দায়ে কুয়েতে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম পাপুল। তার সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক এই ইস্যুতে নানা দিক বিবেচনায় রেখে তদন্ত চলছে। মানবপাচারের পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত মানিলন্ডারিং মামলার বিষয়েও তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত তিনজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফাইল খোলা হয়েছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। সিআইডি বতর্মানে ১২টি মানিলন্ডারিং মামলা তদন্ত করছে। ক্যাসিনো খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে একটি মামলার চার্জশীট হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও দুটি নতুন মামলা দায়ের হয়েছে। চলতি মাসেই এ দুটি মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। এসব মামলা তদন্ত করতে গিয়ে নতুন নতুন তথ্য মিলছে। যুবলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়ার বিষয়টি করোনার জন্য কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তাদের সব সহায় সম্পদ সম্পর্কে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত করতে ২৪টি বিভাগ থেকে তথ্য আনা হয়েছে। আর কিছু তথ্য বাকি আছে। এসব তথ্য পাওয়ার পর পাপিয়াকে রিমান্ডে আনা হবে। তিনি আরও জানান, সিআইডি বতর্মানে ২২ ধরনের মামলা তদন্ত করছে। যার মধ্যে শতকরা ৮২ ভাগ মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে সাজা হয়েছে শতকরা ২৪ ভাগ মামলার আসামিদের। শাস্তির হার কম হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিচারক ও আইনজীবীদের নিয়ে গঠিত সেই কমিটি মাসখানের মধ্যে চার্জশীটকৃত মামলার আসামিদের সাজার হার কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদন দিবে। সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগের উপমহাপরিদর্শক ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, লিবিয়া ২৬ বাংলাদেশী হত্যাকান্ডের ঘটনায় মূলহোতা হিসেবে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের সম্পদের খবর নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সিআইডি আগের মতো মৌখিক সাক্ষ্যকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে না। ফরেনসিক রিপোর্টকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। কারণ এটি অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক ও অকাট্য প্রমাণ।
×