ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল, মধ্যাঞ্চলে অবনতি

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ২ জুলাই ২০২০

উত্তরে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল, মধ্যাঞ্চলে অবনতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উত্তরের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে আসছে। তবে অবনতি হচ্ছে মধ্যাঞ্চলের পরিস্থিতি। এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। এই সময়ের মধ্যে পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়তে পারে। অপর গত এক এক সপ্তাহ ধরে বন্যার কবলে থাকা কুড়িগ্রাম গাইবান্ধা, বগুড়া জামালপুর ও সিরাগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে এলাকার বানভাসীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে বন্যা উত্তরের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে এখনও যমুনা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্ট দিরেয় বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরের এসব জেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কাঁচা-পাকা বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পাট, আমনের বীজতলা, আউস ধান, সবজিসহ জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে উত্তরের পানি নেমে এখন মধ্যাঞ্চলে বন্যার প্রকোপ বেড়ে গেছে। পদ্মার পানি দৌলতদিয়া গোয়ালন্দ পয়েন্টসহ কয়েকটি পয়েন্টে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে যমুনার পানি নেমে এসেও মধ্যাঞ্চলে পানি চাপ বাড়াচ্ছে। তারা জানিয়েছে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকতে পারে। ইতোমধ্যে পদ্মার গোয়ালন্দ অংশে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্র্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। অন্যদিকে আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ অবস্থায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে বলে জানায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। বুধবার সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী, পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি স্টেশনের মধ্যে ৫৩টির পানি বাড়ছে, ৪৭টির কমছে এবং একটির স্থিতিশীল রয়েছে। পানি বাড়তে থাকা স্টেশনগুলোর মধ্যে ১৪টি স্টেশনে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধা ॥ ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি সামান্য কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে আশ্রিত পরিবারগুলো এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগে জানিয়েছেন। কুড়িগ্রাম ॥ সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত রয়েছে। নদ-নদীর পানি সামন্য কমলেও ধরলা, দুধকুমর ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার বন্যার পানিতে ডুবে নতুন করে এক শিশু কথা রায় (২ বছর) ও জামাল ব্যাপারী (৫৫) নামে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৫ জনে। এর মধ্যে শিশু ৪। বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকারী ত্রাণ তৎপরতা অপ্রত্যুল। জামালপুর ॥ জামালপুরে যমুনা নদীর পানি দুয়েক সেন্টিমিটার করে কমা শুরু করলেও বুধবার এই নদীর পানি বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে বন্যায় যমুনা নদী তীরবর্তী উপজেলাগুলোয় নতুন কোন এলাকা প্লাবিত না হলেও গত চারদিনে বন্যাকবলিত সাতটি উপজেলায় তিন লাখের অধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।
×