ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টেস্ট ক্রিকেটের মঞ্চে বাংলাদেশের ২০ বছর

‘দল হিসেবে আরও উন্নতি করা উচিত ছিল’

প্রকাশিত: ২২:৩০, ২৮ জুন ২০২০

‘দল হিসেবে আরও উন্নতি করা উচিত ছিল’

মিথুন আশরাফ ॥ টেস্ট ক্রিকেট মর্যাদা প্রাপ্তির ২০ বছর হয়ে গেছে। ২১ বছরে পথ চলাও শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট। কিন্তু টেস্টে প্রত্যাশা কী পূরণ করা গেছে? বাংলাদেশ টেস্ট দলের বর্তমান অধিনায়ক মুমিনুল হক মনে করছেন প্রত্যাশা পূরণ করা যায়নি। তিনি বলেছেন, ‘সৎভাবে আমি মনে করি, আমরা আমাদের (টেস্ট ক্রিকেটে) প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। আমি তা স্বীকার করছি। দল হিসেবে আরও উন্নতি করা উচিত ছিল।’ বিশ বছর আগে ২০০০ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের কুলীন যুগে পা রাখা নিশ্চিত করে। এরপর চলে খেলা। একই বছরের ১০ নবেম্বর ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলতে নামা দিয়ে শুরু। গুটি গুটি করে এখন পর্যন্ত ১১৯ টেস্ট খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ। জয় ১৪টি, ড্র ১৬টি, হার ৮৯ টেস্টে। বোঝাই যাচ্ছে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আয়ারল্যান্ড বাদে সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিরুদ্ধেই টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৭টি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৪টি, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও একটি করে জয় মিলেছে। সবচেয়ে বেশি ২০ টেস্ট খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। একটি জয় মিলেছে। সেটিই বাংলাদেশের শততম টেস্ট ম্যাচে জয় মিলেছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঐতিহাসিক জয় মিলেছে। আর ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকেও একবার করে হারানো প্রাপ্তির খাতায় যুক্ত হয়েছে। তবে এর মধ্যে যে টেস্ট ক্রিকেটে নবীন দল আফগানিস্তানের কাছে ১৯ বছর টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েও হেরেছে বাংলাদেশ তা অপ্রাপ্তির খাতায় ভালভাবে লেখা থাকছে। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জিতেছে টেস্ট অভিষেক হওয়ার ৫ বছরের মাথায় ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে। এরপর এক এক করে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুটি টেস্ট, ২০১৩ সালে আবার জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে, পরের বছরই আবার জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টানা তিন টেস্ট জয় হয়েছে। ৩ বছর পর ইংল্যান্ডের তো শক্তিশালী দলকে হারানোর পর শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবার হারিয়ে ২০১৭ সালেই অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে জিম্বাবুইয়েকে হারানোর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুই টেস্টে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ব্যবধানেও হারিয়েছে। প্রথমবারের মতো কোন দলকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুইয়েকেও ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে ২৮ বছর বয়সী মুমিনুল জানান, ‘যা হোক, আমাদের কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। আপনাকে সেসব ইতিবাচক দিক থেকে অনুপ্রাণিত হতে হবে। ব্যক্তিগত দিক থেকে অনেক উন্নতি হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে দলে অনেকের চমৎকার পারফর্মেন্স আছে। আমাদের কয়েকটি ডাবল সেঞ্চুরি আছে। আমাদের অনেক বোলার আছে যারা পাঁচ উইকেট নিয়েছে। হ্যাটট্রিক আছে। আমি বলতে চাই, ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সের দিকে থেকে আমাদের দলে অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। বিদেশের মাটিতে পারফর্মেন্স এখনও চরমভাবে অনুজ্জ্বল। তবে দেশের মাটিতে যে কোন দলের বিরুদ্ধে জয়ের জন্যই নামে বাংলাদেশ। এটি উন্নতির খাতায় থাকছে। মুমিনুল বলেন, ‘আরেকটা যে জিনিস আমাদের উন্নতি হয়েছে, ঘরের মাটিতে জিততে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম না। তবে এখন সবাই ভেতরে পোষণ করে যে, আমরা নিজেদের মাটিতে খুবই সার্থক। খুব বেশি নয়। তবে আমি মনে করি কিছু উন্নতি হয়েছে। এই উন্নতি আরও পরিষ্কার হবে যদি আমরা ঘরের মাটিতে সিরিজ জিতি। এখন আমরা কম-বেশি ম্যাচ জিতছি।’ বাংলাদেশ দল আগে টেস্ট বেশি খেলতে পারত না। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালু হওয়ায় বেশি টেস্ট খেলার সম্ভাবনা ধরা দিয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তা ভেস্তে গিয়েছে। এ বছর আর কোন টেস্টই খেলার সুযোগ নেই। পাঁচ-ছয়টি টেস্ট খেলেই যেখানে বছর শেষ করতে হতো, সেখানে এ বছর ১০টি টেস্ট ছিল। শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি টেস্ট খেলা গেছে। বাকি সব টেস্ট ম্যাচ স্থগিত হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে পাকিস্তান সফর স্থগিত হয়েছে। আয়ারল্যান্ড সফরে টেস্ট না থাকলেও সফর স্থগিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে আসছে না। নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজও হচ্ছে না। সফর স্থগিত হয়েছে। ঘরবন্ধী হয়েই ক্রিকেটারদের সময় কাটাতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল জানান, ‘আমরা যারা নিয়মিত টেস্ট খেলি তাদের জন্য এ বছরটা বড় সুযোগ ছিল। খারাপ লাগছে, ক্রিকেট মিস করছি। কিন্তু এর কোন কিছুই তো আমাদের হাতে নেই। এ সময়ে মানসিকভাবে শক্ত থাকাই বড় কিছু। সবার সঙ্গে এ বিষয়ে আমি আলোচনাও করেছি।’ মুমিনুল দেশের টেস্ট ক্রিকেট পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে বলেন, ‘যদি পিছিয়ে যাওয়ার কথা বলেন, বিশ্বের অন্য দেশগুলোও পিছিয়ে যাবে। তবে ওদের পিছিয়ে যাওয়া ও আমাদের পিছিয়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। আমাদের জন্য হয়তো একটু ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। কারণ আমরা টেস্ট ক্রিকেটে অতটা ভাল না। তারপর আবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটা ম্যাচ ভাল খেলতে পারিনি। এই সময় খেলাটা বন্ধ হয়ে যাওয়া অবশ্যই হতাশার বিষয়।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘জিম্বাবুইয়ে সিরিজ দিয়ে ভাল একটা অবস্থানে চলে এসেছিলাম। উন্নতির একটা সাইন দেখছিলাম তখন। কিন্তু এটা নিয়ে আবার বেশি ভাবা যাবে না। তাহলে সামনের দিকে যাওয়ার বা উন্নতির জায়গাটা থাকবে না। আসলে এটা নিয়ে বেশি ভাবাও উচিত না। সামনে আমাদের যে খেলাগুলো আছে বা নতুন করে শুরু হলে আমাদের আবার সুন্দর করে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এই সময়টাতে আমরা বুঝতে পারব কি করে আরও উন্নতি করা যায় ও নতুন নতুন পরিকল্পনা করে এই ফরমেটে আরও শক্তিশালী হওয়া যায়. কোন্ কোন্ জায়গায় কাজ করতে হবে।’
×