ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্র বৃষ্টি বাড়বে

প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে, উত্তরাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২৫ জুন ২০২০

প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে, উত্তরাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত কয়েদিনের দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে উজান থেকে নেমে আসার কারণে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে উজান থেকে নেমে আসার পানির কারণে কয়েকদিনের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা জানায় তিস্তার পানি দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরও বাড়ছে। এছাড়া এই সময়য়ের মধ্যে পদ্মা নদীর পানিও বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে এই মাসেই উত্তরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী পাঁচদিনের মধ্যে বৃষ্টির আবার বাড়বে। এর সঙ্গে উজানের পানি যোগ হয়ে দ্রুত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এবার বন্যা আগেই শুরু কারণে বৃষ্টিপাত বেশি ছিল এছাড়াও প্রাক বর্ষায় এবার প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে সময়ের আগেই নদীগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বেড়েছে। এরপর গত কয়েকদিনের দেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলোতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। উজানের পানি দ্রুত নেমে আসার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এসব জেলার নি¤œাঞ্চল ও চর এলাকায় ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। তারা জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতলে স্থিতিশীল রয়েছে। অপরদিকে গঙ্গা পদ্মা এবং দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদী আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। উজানের বৃষ্টির কারণে তবে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, উত্তরের ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার এবং মেঘনার অবাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। তিস্তা নদীর পানি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দ্রুত বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। এছাড়া পদ্মা নদীর পানিও এই সময়ে দ্রুত বেড়ে যাওয়া পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে এখন পর্যন্ত কোন নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তাদের পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৫২টি স্টেশনে পানি বাড়ছে, কমছে ৪৩টিতে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬টি স্টেশনের পানি। দেশের ভেতরে বর্ষণ কমে এলেও উজানের পানির চাপে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে গত কয়েকদিনে দেশের ভেতরে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অনেক কমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়নি। তারা জানায় বৃষ্টি কমে যাওয়ায় তাপমাত্রা বেশি না হলেও মেঘ আর জলীয় বাষ্পের কারণে দেশজুড়ে ভ্যাপ্সা গরম অনুভূত বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়া, মৌসুমি বায়ুর কারণে আকাশে সৃষ্ট মেঘমালা, আর জলীয় বাষ্পের কারণে তাপমাত্রা বেশি না হলেও গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। সাধারণত এ মৌসুমে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি হয়ে থাকে। তাপমাত্রাও কমে যায়। গত কয়েকদিনে সে ধরনের বৃষ্টি না হওয়ায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে বৃষ্টিপাত কমলেও আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে বর্ষণ আবারও বাড়বে। সেই সঙ্গে যোগ হবে উজানের নেমে আসা পানি। ফলে নদীর পানি দ্রুত বেড়ে যাবে। এ কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হতে পারে। এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে মৌসুমি বায়ু উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। ফলে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়খালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটঅঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিমি বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তারা জানায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। ঢাকায় বাতাসের গতিবেগ দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১৫ কিমি থাকবে।
×