ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টায় বিএনপি

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ২২ জুন ২০২০

খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টায় বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ ৮৮ দিন পার হয়ে গেল প্যারোলে ছাড়া পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ৬ মাসের জন্য মুক্তি পাওয়ায় আর মাত্র ৩ মাস সময় হাতে আছে। এর পর আবার তাকে চলে যেতে হবে কারাগারে। এ পরিস্থিতিতে মুক্তির মেয়াদ আরও অন্তত ৬ মাস বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। তবে কিভাবে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যায় এ জন্য দলের কিছু সিনিয়র আইনজীবীকে কৌশল বের করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার স্বজনরাও চেষ্টা করছেন। সূত্রমতে, বিএনপির সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি প্রাধান্য পায়। অধিকাংশ সদস্য খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। তবে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া যে তা সম্ভব নয় সে বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। তখন দলীয় আইনজীবীদের এ বিষয়ে আইনগতভাবে কিভাবে অগ্রসর হওয়া যায় সে বিষয়টি দেখতে বলা হয়। এ ছাড়া রাজনৈতিকভাবে এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া যায় কি না সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। জানা যায়, আইনগতভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যাবে না এমনটি ধরে নিয়েই বিএনপি বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগের মতো খালেদা জিয়ার স্বজনরাই এ বিষয়ে বেশি চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। স্থায়ী মুক্তি না হলেও যেন আপাতত আরও কয়েকমাস সময় বাড়ানো যায় সে চেষ্টাই চলছে। স্বজনদের চেষ্টা সফল হলে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিএনপি নেতা জানান, সরকার ইচ্ছে করলে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে পারে। বয়স বিবেচনায় একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তির সময় আরও বাড়িয়ে দেয়া সরকারের সদিচ্ছার বিষয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আইনগত প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে আইনীভাবেই তা সম্ভব। তা না হলে আগের মতোই স্বজনদের পক্ষ থেকে কেউ আবেদন করলে সরকার বিশেষ বিবেচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় বাড়িয়ে দিতে পারেন। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আগের চেয়ে কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও এখনও তিনি অসুস্থ। তাই শরীরিক অসুস্থতা ও মামলাজনিত কারণে আপাতত রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন না তিনি। তিনি চান মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব হলে দেশে হোক আর বিদেশেই হোক আরও উন্নত চিকিৎসা করে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করা। আর স্বজনরা চাচ্ছেন তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে। এ জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে এমনটি মাথায় রেখেই খালেদা জিয়া এখন রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। দীর্ঘ সোয়া ২ বছর পর ২৫ মার্চ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে সরাসরি গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান নেন। ওই দিন রাতে ঘনিষ্ঠ ক’জন আত্মীয়, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও কয়েকজন বিএনপি নেতা ছাড়া আর কেউ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি। পরদিন ২৬ মার্চ থেকে তিনি নিজ বাসার দ্বিতীয় তলায় স্বেচ্ছায় হোমকোয়ারেন্টাইন শুরু করেন। প্রায় দেড়মাস তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর বিএনপি নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। খালেদা জিয়ার হোমকোয়ারেন্টাইন শেষ হলে ১১ মে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ১২ মে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস গুলশানের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। এর পর ২৫ মে ঈদের দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করেন। ঈদের পরদিন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন তার সঙ্গে দেখা করেন। এর পর দেখা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু। আর সম্প্রতি আবারও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারামুক্তির পর ইতোমধ্যেই একান্তে গুলশানের বাসায় ৮৮ দিন সময় পার করলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ৭৫ বছর বয়সে এভাবে নিরিবিলি পরিবেশে একান্তে এত সময় কাটানো তার জীবনের একটি বিরল ঘটনা। এ সময় অসুস্থ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি না হলেও নিয়মিত প্রিয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে তিনি এখন স্বস্তিতে আছেন বলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলের নেতারা জানিয়েছেন। খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত চিকিৎসা বোর্ডের পরামর্শে গুলশানের বাসায় তার সঙ্গে থাকা নার্সের মাধ্যমে নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন। এ ছাড়া আপাতত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাসায়ই করা হয়। তার ডায়াবেটিস এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। শারীরিক অন্যান্য সমস্যাগুলোও স্থিতিশীল রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রিউমেটিক আর্থ্রারাইটিস ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন তিনি। তবে এসব রোগে ভুগলেও মানসিকভাবে স্বস্তিতে থাকায় তিনি আগের চেয়ে ভাল আছেন। এদিকে কারাগার থেকে বাসায় ফেরার পর প্রতিদিনই লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমান, ছেলের বউ ডাঃ জোবায়দা রহমান, তারেক রহমানের মেয়ে জায়মা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, তার দুই মেয়ে জাসিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানের সঙ্গে ফোনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলছেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিচ্ছেন। আর তাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতে পেরে খালেদা জিয়া এখন আগের চেয়ে স্বস্তিতে আছেন। অনেক দৌড়ঝাঁপের পর স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে করোনা পরিস্থিতিতে বয়স ও মানবিক বিবেচনায় সরকারের নির্বাহী আদেশে ২৫ মার্চ ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সরাসরি গুলশানের বাড়ি ফিরোজায় ওঠেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির শর্ত হচ্ছে-তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা নিয়ে কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই অসুস্থ খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবি জানাতে থাকে বিএনপি। এক পর্যায়ে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যও দাবি করে দলটি। গত বছর ১ এপ্রিল পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলের কেবিনে নেয়া হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে তাকে মুক্তির দাবি জানানো হয়।
×