ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসক নিয়োগ, নমুনা সংগ্রহের বুথ, সুরক্ষা সামগ্রী সবই দিচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ॥ এক মানবিক ব্যাংক

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ৩১ মে ২০২০

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ॥ এক মানবিক ব্যাংক

রহিম শেখ ॥ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসক নিয়োগ, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসকদের সুরক্ষা সামগ্রী এমনকি হাসপাতালে ভেন্টিলেটরও স্থাপন করেছে বেসরকারী এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক। দেশে যে কোন দুর্যোগ এলে ব্যাংকগুলো সাধারণত অর্থ দিয়ে সহায়তা করে। কিন্তু এবার সেই প্রথা ভেঙ্গে করোনা মোকাবেলায় সরাসরি নিজেরাই মাঠে নেমেছে। প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত এই ব্যাংক করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বুথ স্থাপন করেছে। করোনা প্রতিরোধে চালাচ্ছে আরও কিছু কার্যক্রম। এজন্য গঠন করেছে আলাদা তহবিল। দেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এভাবে মাঠে নেমে বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের চোখ খুলে দিয়েছে নতুন ব্যাংকটি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এই উদ্যোগ অনুসরণ করবে বলে আশা করছেন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্যোক্তারা। জানা গেছে, কোরোনাভাইরাস মোকাবেলায় মার্চের শুরুতেই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান করে ব্যাংকটি। এজন্য প্রথমে প্রধান কার্যালয়সহ সব শাখা ও উপশাখায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হ্যান্ড গ্লাভস সরবরাহ করা হয়। পরবর্তীতে এসব শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) দেয়া হয়। মার্চের শেষের দিকে জনসাধারণের সাধারণ চিকিৎসা না পাওয়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য দেশ ও বিদেশের স্বনামধন্য ও অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সমন্বয়ে একটি ভার্চুয়াল হেলথ ডেস্ক চালু করে এনআরবিসি ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালক, উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার, গ্রাহক এবং সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাধারণ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাংকটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১১টি ক্লিনিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। হেলথ ডেস্কটি হতে বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে সর্বাত্মক পরামর্শ প্রদান ও আক্রান্তদের বিশেষ করণীয় সংক্রান্ত তথ্য সহায়তা ছাড়াও স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসা বিষয়ক যেকোন পরামর্শ দেয়া হয়। দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ ১৬৪১৩ ও ০৯৬১২৩১৬৪১৩ নম্বরে ফোন করে বিনা খরচে এই সেবা গ্রহণ করতে পারে। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ব্যাংকটি করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালে পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করেছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, পিরোজপুর, কিশোরগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, রাজশাহী ও রংপুরের করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিবেদিত হাসপাতালসমূহে নিয়োজিত ৭ হাজার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) দিয়েছে ব্যাংকটি। এর বাইরে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত সাংবাদিক, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, ডিপিডিসি, দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিঃ; (টাকশাল), ভৈরব থানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ সদস্য ও জরুরী সেবার কর্মীদের আরও ১ হাজার পিপিই প্রদান করেছে। ব্যাংকটি জানিয়েছে, সুরক্ষা সামগ্রী হিসেবে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার ৬০০ পিপিই, ৮ হাজার ৪০০ সার্জিক্যাল মাস্ক, ৫ হাজার ২০০ কেএন-৯৫ মাস্ক, ৬ হাজার ২৫০ বিশেষ চশমা ও ১০ হাজার ২০০ হেডশিল্ড সরবরাহ করা হয়েছে। সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি করোনাভাইরাস আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনআরবিসি ব্যাংক ২টি অত্যাধুনিক সিপিএপি মেশিন বা ভেন্টিলেটর বসিয়েছে বলে জানা গেছে। করোনা রোগী শনাক্তে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গে ৫০টি নমুনা সংগ্রহ বুথ স্থাপন করছে ব্যাংকটি। ইতোমধ্যে উত্তরবঙ্গের বেশকিছু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যাম্পল সংগ্রহ বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকার ৫টি উপজেলায় এ ধরনের বুথ স্থাপনের জন্য ঢাকার সিভিল সার্জনের সঙ্গে ব্যাংকের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই বুথ স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে বলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি তহবিল গঠন করেছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। এতে তাদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর একদিনের বেতন, পরিচালনা পর্ষদের নিজস্ব অর্থায়ন, ব্যাংকের সিএসআর ফান্ডের ১ কোটি টাকা এবং কিছু বিত্তবান গ্রাহকের অনুদান রয়েছে। এই ফান্ডের সমুদ্বয় টাকা জনস্বার্থে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে খরচ করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগের বিষয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল বলেন, ‘দেশের এ দুর্যোগে আমরা বসে থাকতে পারি না। ব্যাংক কি শুধু ব্যবসা করার জন্য? এ দুর্যোগে যা প্রয়োজন, আমরা সাধ্যমতো দিয়ে যাচ্ছি। আমরা ছোট ব্যাংক, এজন্য চাহিদামতো সবকিছু করতেও পারছি না। তবে আমাদের চেষ্ঠার কমতি নেই।’ রাশিয়া প্রবাসী এ বাংলাদেশী ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা আশা করি, বড় ব্যাংকগুলো এবং শিল্পপতিরাও এগিয়ে আসবেন। শুধু অর্থ দিয়ে নয়, মাঠে গিয়ে প্রয়োজনমতো সহায়তা করবেন। এভাবেই বড় এ দুর্যোগ থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান জানান, এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। যতদিন প্রয়োজন, নতুন উদ্যোগ নিয়ে মাঠে থাকবে এনআরবিসির কর্মীরা।
×