ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাজ আছে বেতন নেই-ঝুঁকি আছে ভাতা নেই

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ২৩ মে ২০২০

কাজ আছে বেতন নেই-ঝুঁকি আছে ভাতা নেই

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ করোনাভাইরাসের কারণে সরকারী সিদ্ধান্তে সর্বত্র সাধারণ ছুটি চললেও মাঠপর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের ছুটিতে থাকার সুযোগ নেই। হোম কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন, সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এক প্রকার ছুটির কথা ভুলে গেছেন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। করোনা মোকাবেলায় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি নীরবে সেবা দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল সন্তানখ্যাত ডিজিটাল সেন্টারের বেতনবিহীন উদ্যোক্তারা। বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুরিয়া ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা শফিকুর রহমান আক্ষেপ করে জনকণ্ঠকে বলেন, ছাত্র হিসেবে খুব একটা খারাপ ছিলাম তা নয়; যতটুকু ভাল ছিলাম জীবন জীবিকার তাগিদে তার অধিকাংশই আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারিনি। প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করলেও সেটা ছিল অন্তঃসারশূন্য। বাবা সাধ্যের চেয়েও অনেক কিছু করেছেন। তার অবসরে যাওয়ার কারণে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত করেছি ইউনিয়ন পরিষদের ‘ডিজিটাল সেন্টার’-এ। সরকারী চাকরি নামক সোনার হরিণের আশায় দশটি বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। মাঝখানে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল সন্তান হওয়ার খেতাব পেয়েছি। দীর্ঘ দশ বছরের কর্মজীবনে স্থানীয় সরকারের তৃণমূলের সরকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের নানান কাজ করে আসছি বিনা পারিশ্রমিকে। করোনা ঝুঁকি নিয়েও গত প্রায় দুইমাস ধরে কাছ করছি মানব কল্যাণে। এতকিছুর পরেও উদ্যোক্তারা পায়নি প্রতিষ্ঠানিক কোন স্বীকৃতি। এমনকি নীতি নির্ধারকগণ এখন পর্যন্ত দিতে পারেনি কোন সুরক্ষা নীতিমালা। তাই একদিকে সোনার হরিণ হস্তগতের আশায় জীবনের দশটি বছর, মেধা, মনন, সৃজনশীলতা হারিয়েছি। অন্যদিকে সরকারী চাকরির বয়স হারিয়ে এখন সংশয়ে জীবন-যাপন করছি। তিনি আরও বলেন, ব্যাঙের ছাতার মতো কম্পিউটারের সহজ লভ্যতা হওয়ায় সামান্য সেবা প্রদান করে তার স্বল্প পারিশ্রমিক নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেটাও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শুধু ডিজিটাল সেন্টারে বসে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অসহায়, দিনমজুরসহ দুস্থ মানুষের মাঝে সরকারের সহায়তা প্রদানের জন্য তালিকা, মাস্টার রোল তৈরি করছি। করোনা ঝুঁকির কারণে অনেক ইউপি সচিব, হিসাব সহকারীগণকে (যেখানে নিয়োগ হয়েছে) পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। প্রণোদনার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু উদ্যোক্তাদের জন্য নেই কোন প্রণোদনা। কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এবং মানবিক কারণে উদ্যোক্তাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করে বেতনভাতা প্রদানের জন্য তিনি (শফিকুর রহমান)সহ জেলার প্রত্যেক ইউনিয়নের উদ্যোক্তারা জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর অনুরোধ করেছেন। ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা ফোরামের বরিশালের সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম সাজিদ জনকণ্ঠকে বলেন, বরিশালে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা বিনা বেতনে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার আগে জেলার ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সামান্য আয় থাকলেও বর্তমানে আয় বন্ধ হয়ে গেছে। উদ্যোক্তারা ত্রাণের তালিকা করতে করতেই দিন পার করছেন। বাংলাদেশ ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক মাহতাব আলী জানান, করোনার কারণে সারাদেশের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশ্ব মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় তৃণমূল পর্যায়ে ত্রাণসামগ্রী সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের ত্রাণসামগ্রী সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়ার জন্য করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে দিন রাত পরিশ্রম করে তালিকা, মাস্টার রোল তৈরি করে আসছেন উদ্যোক্তারা। এতে কোন উদ্যোক্তাদের বেতন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর বিনা বেতনে কাজ করেছি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ওয়েব পোর্টাল তৈরি করেছে বিনা বেতনের উদ্যোক্তারা। যার ফলে বিশ^ দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এছাড়াও মহামারী করোনা পরিস্থিতিতেও নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারী কাজ বিনা পারিশ্রমিকে করছি। যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ অবহিত আছেন। এমনকি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে দুইজন উদ্যোক্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই সার্বিক বিবেচনায় ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে পিটিশনারকারী উদ্যোক্তাদের সরাসরি নিয়োগ প্রদানের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক সময় পরিষদে সচিবরা না থাকলেও ইউডিসির দক্ষ উদ্যোক্তাদের দিয়ে পরিষদের কাজগুলো করা হয়ে থাকে। পূর্ব থেকে কাজ করা দক্ষ উদ্যোক্তাদের ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ প্রদান করা হলে সরকারের তৃণমূল পর্যায়ের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের কাজে আরও গতিশীলতা আসবে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ ॥ করোনায় কর্মহীন কাঁঠালিয়া উপজেলার দুই হাজার পরিবারের মাঝে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। সাবেক শিল্পমন্ত্রী আলহাজ আমির হোসেন আমু এমপি এবং বজলুল হক হারুন এমপির নির্দেশে গত ১৬ মে সকালে কর্মহীন পরিবারের মাঝে এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণের জন্য হস্তান্তর করা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমাদুল হক মনির ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী তুলে দেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান উজির সিকদার, ভাইস চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান সিকদার, ফাতিমা খানম উপস্থিত ছিলেন। একইদিন উপজেলা চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির জনপ্রতিনিধি ও সরকারী বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের মাঝে পিপিই, মাস্ক ও সার্জিক্যাল ক্যাপ বিতরণ করেন। অপরদিকে মানবতার ফেরিওয়ালাখ্যাত রাজাপুর-কাঁঠালিয়া আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের উদ্যোগে দ্বিতীয় দফায় তার নির্বাচনী এলাকার দুই হাজার পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও গত ১৭ মে কাঁঠালিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি বাদল হাওলাদারের নিজস্ব অর্থায়নে ক্লাবের সকল সদস্যদের মাঝে ঈদের উপহার হিসেবে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
×