ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুপার সাইক্লোন আমফান

প্রকাশিত: ২১:১৬, ২২ মে ২০২০

সুপার সাইক্লোন আমফান

এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তীব্র গতিতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হেনেছে সুপার সাইক্লোন আমফান। ভারতীয় ও বাংলাদেশী আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ আঘাত করে সুবিস্তৃত উপকূলে। দুই দেশেরই আবহাওয়া অধিদফতর আমফানকে অভিহিত করেছে সুপার সাইক্লোন হিসেবে। চলতি শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি প্রথম সুপার সাইক্লোন, যা হতে পারত সিডর-আইলার চেয়ে শক্তিশালী ও ভয়াবহ। সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের বেশি হলে তাকে বলা হয় সুপার সাইক্লোন। আমফানের কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ থেকে ২৪৫ কিলোমিটার ছিল। ঘূর্ণিঝড়টির মূল আঘাত সুন্দরবন সংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরাসহ ১৪টি উপকূলীয় জেলার ওপর দিয়ে গেছে। এর ফলে হাতিয়াসহ পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলো প্লাবিত হয়েছে ৮-১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে। তবে আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা এই বলে আশ্বাসের বাণীও শুনিয়েছিলেন যে, মূল ভূখ-ে আঘাত করার সময় এর গতিবেগ কমলেও কমতে পারে। ভাটার কারণে কম হতে পারে জলস্ফীতি। প্রকৃতপক্ষে তাই হয়েছে বলে রক্ষা। তা হলেও স্বস্তি ও আশ্বস্ত হওয়ার কিছু নেই। আফফানের মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল বাংলাদেশ। সুবিস্তৃত ঝুঁকিপূর্ণ বিপদসঙ্কুল উপকূলীয় এলাকায় ১০ নম্বর সতর্ক বার্তা সংবলিত পতাকা উত্তোলনসহ জোরদার মাইকিং করা হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে। অন্তত ১২ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। সেখানে আপাৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য মজুদ রাখা হয়েছিল খাবার পানি, শুকনো খাবার, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ইত্যাদি। কমপক্ষে বাইশ লাখ উপকূলবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নেয়া হয়েছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা চিন্তা করে নেয়া হয়েছিল বাড়তি নিরাপত্তা। সামাজিক দূরত্ব মেনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল আশ্রিতদের। এলাকার স্কুল-কলেজগুলোও ব্যবহৃত হয়েছে তাদের জন্য। মোট কথা, করোনার কথা মাথায় রেখেই নেয়া ছিল যথাযথ প্রস্তুতি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশের, তাও আবার বর্ষা মৌসুম যখন আসন্ন। এবারে একেবারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত নিয়ে দেখা দিয়েছিল আমফান। আমফানকে তুলনা করা হয়েছিল দশ বছর আগে সংঘটিত পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও সুন্দরবন এলাকায় আঘাত হানা আইলা ও সিডরের সঙ্গে। সিডর-আইলার বিপদ ও ক্ষয়ক্ষতির কথা ভুক্তভোগীসহ অনেকের মনে আছে নিশ্চয়ই। সে সময়ের অনেক ক্ষত, বিশেষ করে উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়নি অদ্যাবধি। তবু মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সঙ্গে লড়াই করে। তবে আমফানের ক্ষেত্রে এবার তা হয়নি। এর জন্য বাংলাদেশ, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে করোনার এই দুঃসময়ে। কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছেন গাছ চাপা পড়ে। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ল-ভ- হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চল। বিশেষ করে কাঁচা ঘরবাড়ি এবং গাছপালা উপড়ে যাওয়ার খবর আছে। সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা কম হলেও ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে কিংবা বাঁধ উপচে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে ধানের ক্ষেত, মাছের ঘের, লবণের জমিসহ কিছু সম্পদ স্বভাবতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রান্সফরমার ও সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক এলাকা হয়ে পড়েছে বিদ্যুতবিহীন। আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও আবহাওয়া বিভাগের প্রস্তুতি যথেষ্ট ভাল। তবে একে আরও আধুনিক ও সময়োপযোগী করতে হবে। বাংলাদেশের অবস্থান যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় এবং আমরাও রয়েছি জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকিতে, সেহেতু দক্ষতার সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আমাদের অর্জন করতেই হবে।
×