ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়া নগরীতে শতাধিক পুকুর ভরাট

প্রকাশিত: ১৯:১০, ১৬ মে ২০২০

বগুড়া নগরীতে শতাধিক পুকুর ভরাট

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়া নগরীতে গত দশ বছরে শতাধিক পুকুর ও জলাশয় ভরাট হয়েছে। বড় অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণে নিকটে জলের আধার না থাকায় অগ্নি নির্বাপক দলকে (ফায়ার সার্ভিস) হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ। সরকারী কোন নিয়ম নীতি না মেনে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পৌরসভা ও রেল বিভাগের পুকুর ভরাট করে বহুতল ভবন গড়ে তুলেছে। এই ধারা বন্ধ হয়নি। সূত্র জানায়, পুকুর ও জলাশয় ভরাটে ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি বাধ্যতামূলক। স্থানীয় সরকার, পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে থেকেও অনুমতি নিতে হয়। বড় অগ্নিকান্ডে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি শেষ হয়ে গেলে নিকটে জলের আধার খুঁজে পায় না। সাধারণত চৈত্র মাস থেকে রোদেলা চড়া দিন শুরু হয়ে গ্রীষ্মকালের পরেও অনেকটা সময় পর্যন্ত থাকে। এই সময়ে অগ্নিকান্ডের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সূত্র জানায় গত দশ বছরে চড়া দিনের সময়টায় কম বেশি প্রায় দেড় হাজার অগ্নিকা-ে অন্তত আট শ’ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। দিনে আগুন লাগলে দ্রুত খবর পেয়ে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বড় ও মাঝারি মার্কেটে রাতের অগ্নিকান্ডে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মার্কেট ও দোকান মালিক কর্তৃপক্ষের অসচেতনতায় বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটে আগুন লেগে যায়। আগুনে অনেকটা পুড়ে যাওয়ার পর টের পাওয়া গেলে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। বগুড়া শহরে বর্তমানে পুকুর আছে হাতে গোনা কয়েকটি। এ্যাডওয়ার্ড পার্কের ভেতরে, সুত্রাপুর সাতানী মসজিদের সামনে, মালগ্রাম ফুলদীঘি, ফুলবাড়ি ও গোকুলে কিছু পুকুর দৃশ্যমান। গোহাইল রোড়ের ধারে খান্দার এলাকার বড় জলাশয় ভরাট করা হয়েছে। সেন্ট্রাল হাই স্কুলের পুকুর ভরাট করে ঈদগাহ সম্প্রসারিত করা হয়। সরকারী আজিুজল হক কলেজের নতুন ভবনের সামনে ও স্টেশন রোডের ধারে একটি লেক ভরাট হয়েছে। একই স্থানে বড় একটি জলাশয় ভরাট করে ঘিরে রাখা হয়েছে। বগুড়া রেল স্টেশনের পশ্চিমে রেলের ভূমির ওপর শত বছরের ঐতিহ্যের জোড়া পুকুর ভরাট করে একাংশে গড়ে তোলা হয় বহুতল মার্কেট। জোড়া পুকুরের একটি ভরাট করে অবকাঠামো স্থাপনার কাজ শুরু হয়েছে। অল্প দূরের আরকেটি পুকুর বেদখল হয়েছে। এই পুকুরগুলো রেল বিভাগের। কোন অনুমতি ছাড়া পুকুর ভরাট করা হয়। বগুড়ার ঐতিহ্যের সাতানী বাড়ির পেছনের পুকুর ভরাট করে এ্যামিউজমেন্ট পার্ক নির্মিত হয়েছে। নিউমার্কেটের ভেতরের পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট সম্প্রসারিত হয়েছে। নিউ মার্কেটে প্রতি বছর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। বড় ধরনের অগ্নিকা-ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির পানি শেষ হয়ে গেলে দ্রুত নিকটে পানির আধার পাওয়া যায় না। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদী এখন শুকনো প্রায় মরা খাল। বছর কয়েক আগেও যতটা পানি ছিল প্রভাবশালীদের দখলের থাবায় নদী ভূমির ওপর অবকাঠামো স্থাপনা গড়ে তোলায় জলের আধার বিলুপ্ত। শহরের বানিজ্যিক এলাকা, আবাসিক বহুতল ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ধারে অবস্থান অনুযায়ী ১শ’ বর্গফুট করে হাইড্রেন্ট (ভূগর্ভ জলাধার) নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয় প্রায় দশ বছর আগে। যাতে ওইসব এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকাগুলোতে দ্রুত অগ্নি নির্বাপণে এই জলাধারের পানি ব্যবহার করা যায়। জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সব সময় হাইড্রেন্ট নির্মাণের সুপারিশ করেন। নির্মাণ ব্যয় কে করবে এই জটিলতাই কাটছে না। ব্যবসায়ীরা নির্মাণে ঐকমত্য প্রকাশ করে। তবে বাদ সাধে কে ব্যয় নির্বাহ করবে! ব্যবসায়ীরা সরকার, জেলা পরিষদ ও পৌরসভাকে হাইড্রেন্ট নির্মাণ করতে বলে। দিনে দিনে বগুড়া শহর সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০০৪ সালে বগুড়া পৌরসভার আয়তন প্রায় ১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা থেকে ৭০ বর্গ কিলোমিটারে সম্প্রসারিত হয়। শহরের ব্যাপ্তি বেড়ে যায় চারদিকেই। সরু ফিডার রোডর দুই ধারে গড়ে ওঠে ঘিঞ্জির মতো বহুতল ভবন। এইসব ফিডার রোড এতটাই সরু যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। ৎ শহরের অভিজাত এলাকায় শপিং মল বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর শো রুম গড়ে উঠেছে। নবাববাড়ী রোডর ধারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বহুতল দুইটি বড় প্লাজা কয়েকটি আধুনিক মার্কেট গড়ে উঠেছে। আশপাশে আরও অবকাঠামো ও মার্কেট গড়ে উঠছে। শহরের প্রতিটি এলাকায় গড়ে উঠছে হাইরাইজ ভবন। হালে এইসব ভবনে আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। হাইরাইজ ভবনে সুপেয় পানির প্রাপ্যতায় মাত্রা অনুযায়ী সাবমার্জিবল পাম্প বসানো হয়। শুধু নেই হাইড্রেন্ট।
×