ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দুর্যোগ ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১৩ এপ্রিল ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দুর্যোগ ঘোষণা

নোভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সব অঙ্গরাজ্যে দুর্যোগ ঘোষণা করেছে দেশটির ফেডারেল সরকার। শনিবার করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যে দুর্যোগ ঘোষণা করার বিষয়টি অনুমোদন করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাধ্যমে দেশটির প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্য একসঙ্গে ফেডারেল দুর্যোগ ঘোষণার আওতাভুক্ত হয়। খবর সিএনএন অনলাইনের। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্যের সবগুলো, পাশাপাশি ইউএস ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ, ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া, গুয়াম ও পুয়ের্তো রিকোসহ দেশটির সব অঞ্চল ফেডারেল দুর্যোগ ঘোষণার আওতাভুক্ত হলো। বিশ্বজুড়ে মহামারী সৃষ্টি করা করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যায় সব দেশকে ছাড়িয়ে শীর্ষে পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন আক্রান্তের সংখ্যা ও ম্রতের সংখ্যা, উভয়েই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যায় অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্য, ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া ও দেশটির নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য অঞ্চল মিলিয়ে মোট আক্রান্তে সংখ্যা অন্তত পাঁচ লাখ ১৪ হাজার ৪১৫ জনে দাঁড়িয়েছে আর মৃতের সংখ্যা ১৯ হাজার ৮৮২ জন। একমাত্র ওয়াইওমিং বাদে আর সব অঙ্গরাজ্য থেকে মৃত্যুর খবর এসেছে। এরমধ্যে প্রায় অর্ধেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই উহান শহর থেকেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। এরপর ২৩ জানুয়ারি শহর লকডাউন করে দেয় চীন। সম্প্রতি লকডাউন তুলে নেয়া উপলক্ষে শহরটি বর্নিল আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়। খুব শীঘ্রই সব সড়ক ও রেলযোগাযোগ ব্যবস্থাও চালু করা হবে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। লকডাউন প্রত্যাহারের পর থেকে প্রায় দুই শ’ ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার সিডিউল রয়েছে। চীনের ূল ভূখণ্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ফের কিছুটা বাড়ায় সংক্রমণের আরেকটি প্রবাহ শুরু হতে পারে আশঙ্কায় শুধু সুস্থ লোকজনকেই শহর ছাড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। দেশের অন্যান্য অংশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে জানুয়ারির শেষ দিকে এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার শহরটি অবরুদ্ধ করে দেয় চীন। সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উহানের ৫০ হাজারেরও বেশি লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল এবং এতে আড়াই হাজারেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি নতুন আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে আসায় আরোপ করা কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু হয়। করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী ১,০৩,০০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে। করোনা সংক্রমিত বিশ্বের ১৯৩ দেশ ও ভূখ-ের সরকারী সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এএফফি শনিবার গ্রীনিচ মান সময় ১১০০টায় মোট এই মৃত্যুর সংখ্যা জানা যায়। এএফপির এই হিসাবে বলা হয়, বিশ্বে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,৭০০,৭৭০ জন। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। করোনাভাইরাসে যে সব মৃত ব্যক্তির দাফনের বিষয়ে পরিবারের কেউ যোগাযোগ করেনি সে সব মৃতদেহ ভাড়াটে শ্রমিকদের মাধ্যমে নিউইয়র্কের একটি দ্বীপে গণকবর দেয়া হয়েছে। শুক্রবার কর্মকর্তারা এ কথা নিশ্চিত করেছেন। কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে বাঁচতে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ এখন লকডাউনে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেড্রোস আধানম গ্রেব্রেয়েসাস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের দেশগুলো যদি সামাজিক দূরত্বের কড়াকড়ি খুব তাড়াতাড়ি তুলে নেয়, তাহলে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তার ঘটতে পারে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়লেও বিধিনিষেধ শিথিল করার ক্ষেত্রে দেশগুলোকে সতর্ক হতে হবে। লকডাউন অব্যাহত থাকলেও ইউরোপের দেশ ইতালি ও স্পেন বেশকিছু পদক্ষেপ সম্প্রতি শিথিল করে। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় একটি সম্মেলনে ডব্লিউএইচও’র প্রধান আরও বলেন, খুব দ্রুত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়া হলে করোনাভাইরাস ভয়ঙ্করভাবে ফিরে আসতে পারে। তিনি বলছেন, মানুষের জীবনযাপনের ওপর থেকে কড়াকড়ি তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে দেশগুলোকে পর্যায়ক্রমে আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশল নিতে হবে। তিনি বলেন, অন্য সবার মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও চলমান কড়াকড়ির অবসান চায়। কিন্তু একই সময়ে এটাও মনে রাখতে হবে, খুব তাড়াতাড়ি এ সব বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলে ভাইরাসের আবার ভয়াবহ বিস্তার দেখা দেবে। তখন হয় তো এতটাই ভয়াবহ হবে যে, আর সামলানো যাবে না। টেড্রোস আধানম গ্রেব্রেয়েসাস বলেন, অন্য অনেক দেশে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে করোনাভাইরাস। মাত্র এক শ’ দিনের ব্যবধানে বিশ্বব্যাপী নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৭ লাখ হয়েছে। এতে মারা গেছে লক্ষাধিক মানুষ।
×