ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণ বিতরণের সময় জমায়েত করবেন না ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৫ এপ্রিল ২০২০

 ত্রাণ বিতরণের সময় জমায়েত করবেন না ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। একইসঙ্গে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে জমায়েত না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে অধিক জমায়েতের মতো বিপজ্জনক পথ বেছে যেন না নেই। কোন অবস্থাতেই জমায়েত করা যাবে না। শনিবার সংসদ ভবন এলাকার সরকারী বাসভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ইতোপূর্বে সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে সরকার আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বর্ধিত করেছে। এর ধারাবাহিকতায় জনসাধারণের স্বার্থ বিবেচনায় আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার অনুরোধ করছি। তবে জরুরী সার্ভিসের জন্য পণ্যবাহী ট্রাক, সংবাদপত্রের গাড়ি, কাভার্ডভ্যান, ওষুধ, জ্বালানি, পচনশীল দ্রব্য, ত্রাণবাহী গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। কিন্তু পণ্যবাহী পরিবহন ও ট্রাকে কোনভাবেই যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, ঘরে আমরা সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে সুরক্ষিত থাকব। আর বাইরে অদৃশ্য শক্তি করোনা, এই অদৃশ্য শক্তিকে মোকাবেলা করতে হবে ঘরে ঘরে সুরক্ষা শক্তি নিয়ে, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের কোন অবস্থাতে শঙ্কিত হওয়া চলবে না, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে অধিকতর জমায়েতের মতো বিপজ্জনক পথ বেছে না নেই। কোন অবস্থাতেই জমায়েত করা যাবে না। করোনাভাইরাস নিয়ে শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সারাবিশ্বে করোনা পরিস্থিতি আজ এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, এ যাবত বিশ্বে ১১ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে। আমাদের দেশ তুলনামূলকভাবে সেদিক থেকে অনেক ভাল। আজকে ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সের মতো দেশে যে ভয়াবহ অবস্থা সেই তুলনায় আল্লাহর রহমতে আমরা অনেক ভাল আছি। আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১টি নির্দেশনা মেনে আমরা সবাই একযোগে সংঘবদ্ধভাবে এই অদৃশ্য শত্রুর মোকাবেলা করে চলছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দেশ অচিরেই ভালর দিকে যাবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে আমার আহ্বান, সুদিনের প্রত্যাশায় আজকের সাময়িক কষ্ট মেনে চলতে হবে, দেশবাসী যেন সুদিনের আশায় আমরা সাময়িক ত্যাগ স্বীকার করব- এটা যেন আমাদের মাথায় থাকে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমরা অবশ্যই এই মহাসঙ্কট থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব। নিজেদের জীবন ও জানমাল রক্ষা করতে পারব। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, সঙ্কটে আমাদের দেশের পরিবহন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ত্যাগ স্বীকার করেছে। এই সঙ্কট আমাদের সকলের। এই সঙ্কট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ দফা যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা সবাই মেনে চলবেন। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখবেন, পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। অফিস ছুটির মধ্যেও জরিমানা ছাড়া নির্ধারিত ফি দিয়ে ৩১ জুন পর্যন্ত যানবাহনের ফিটনেস ও ড্রাইভারদের লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য অসংলগ্ন ॥ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট বৈশি^ক সঙ্কটের এই সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন দায়িত্ব ও কা-জ্ঞানহীনভাবে বক্তব্য রাখেন, তখন জাতি হতাশ হয়। তার বক্তব্য আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়া একজন দিশেহারা রাজনীতিকের অসংলগ্ন প্রলাপ ও ব্যর্থতার বেসামাল বহির্প্রকাশ। সারাবিশে^ সকল মানুষ একযোগে যখন এই সঙ্কট মোকাবেলায় এক প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েছে, তখন অর্বাচীনের মতো মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রাখা বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্ত করে। তাদের এই বালখিল্যতার কারণে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশের সঙ্কটকালে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রতি দলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জাতীয় এই দুর্যোগে যখন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সাধারণ জনগণের পাশে থেকে জনগণকে আশ^স্ত করে চলেছেন- ঠিক তখনই মির্জা ফখরুলরা ভুল তথ্য উপস্থাপন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দুর্যোগের এই মুহূর্তে বিভেদ নয়- এটা তাদের বোধগম্য নয়। সারাবিশে^র নেতৃবৃন্দ করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে দোষারোপের রাজনীতি পরিহার করার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা ও তাদের দল এই সঙ্কটকে ঘণীভূত করে, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে জনগণের ঐক্যের দুর্গকে নস্যাত করতে চায়। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পরিকল্পনায় সারাবিশ^ যেখানে সম্ভাবনার নতুন সূর্যোদয় দেখে, সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলামরা বরাবরে মতো মুখ ঘুরিয়ে রাখেন অন্ধকারের দিকে। জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত বিএনপি কখনই আলোর পথে আসতে চায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে সচেতন করে গড়ে তোলার মাধ্যমে জনগণের সম্মিলিত প্রয়াস নিয়েই এই সঙ্কট মোকাবেলা করবে, ইনশাল্লাহ্। সংবাদপত্রের গাড়ি নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত ॥ আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণায় সংবাদপত্র বহনকারী গাড়ি যে নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত সেটি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেননি সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে শনিবার দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও যেসব যানবাহন নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেখানেও গণমাধ্যমের গাড়ির কথা উল্লেখ ছিল না। এ বিষয়ে জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বিষয়ে একটু ভুল হয়েছে। সংবাদপত্রের গাড়িও নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। আজ (শনিবার) কিংবা আগামীকাল (রবিবার) বিষয়টি সংশোধন করে নতুন করে জানানো হবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পণ্য পরিবহন, জরুরী সেবা, জ্বালানি, ওষুধ, পচনশীল ও ত্রাণবাহী পরিবহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। তবে পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
×