ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অলিম্পিক পিছিয়ে আগামী বছর!

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ২৫ মার্চ ২০২০

অলিম্পিক পিছিয়ে আগামী বছর!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সমস্ত জল্পনা অবশেষে সত্যি হলো। বিশ্বজুড়ে ক্রীড়া মহলের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত টোকিও অলিম্পিক স্থগিত করতে বাধ্য হলো আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)। আইওসির সদস্য ডিক পাউন্ড এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। এবারের অলিম্পিক গেমস আগামী ২৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য অলিম্পিক স্থগিত করার আবেদন জানাচ্ছিল একাধিক দেশ। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া তো জানিয়েই দিয়েছিল, তারা দল পাঠাবে না। গতকাল যোগ হয়েছে ব্রিটেন। তারাও সাফ জানিয়ে দিয়েছে টোকিও অলিম্পিকে ক্রীড়া দল না পাঠনোর কথা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি, ব্রাজিল, জার্মানিসহ অনেক দেশ ক্রমাগত চাপ দিয়ে আসছিল গেমস স্থগিত বা লম্বা সময়ের জন্য যাতে পিছিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি গোটা বিশ্বের ক্রীড়াবিদরাও অলিম্পিক পেছানোর দাবি জানিয়ে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে চাপের মুখে গেমস স্থগিত করতে বাধ্য হলো আইওসি। জানা গেছে, অলিম্পিক সম্ভবত আগামী বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে আয়োজন হতে পারে। ডিক পাউন্ড জানিয়েছেন, ‘আপাতত নির্ধারিত সময়ে অলিম্পিক শুরু হচ্ছে না। পরবর্তী পদক্ষেপ আইওসি বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেবে। তখনই পরবর্তী সূচী ঠিক হবে। তবে সে আশাও কম। কারণ, করোনার জেরে যা পরিস্থিতি তাতে এখন বৈঠকও সম্ভব নয়।’ গোটা বিশ্বের ক্রীড়া মহল বেশ কয়েকদিন ধরে চাপ দিচ্ছিল আইওসিকে। যাতে গেমস এ বছরের মতো বাতিল করা যায়। কিন্তু স্পনসরদের অনীহায় গেমস বাতিল করার পক্ষে ছিল না আইওসি। তবে উল্লেখিত চারটি দেশ দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতেই নড়েচড়ে বসে কার্যনির্বাহী কমিটি। কানাডার পথে হেঁটে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এ্যাথলেটদের না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। এর পরই অলিম্পিক পিছিয়ে দেয়ার কথা ভাবনাচিন্তা শুরু করে আইওসি। সভাপতি টমাস বাখ এ্যাথলেটদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, গেসম স্থগিত করা কোন বিকল্প নয়। বরং সিদ্ধান্ত। ক্রীড়াবিদদের শরীর-স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও আইওসির সিদ্ধান্ত ঘোষণার অপেক্ষায় ছিল। তারাও চাইছিল অলিম্পিক এ বছর বাতিল হোক। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরজি মেনে অলিম্পিক স্থগিত করে দিল আইওসি। করোনায় আক্রান্ত কানাডাই প্রথম দেশ, যারা সরাসরি টোকিওর টিকিট প্রত্যাখ্যান করে। এরপর যোগ হয় অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন। এখন ২০২১ সাল অলিম্পিক হবে ধরে নিয়েই ঘাপটি মেরে আছে আইওসি। মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে ডিক পাউন্ড বলেছেন, ২০২০ অলিম্পিক এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আইওসির কাছে যে তথ্য রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে অলিম্পিক পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঠিক কবে এই অলিম্পিত শুরু করা হবে সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে এ বছরের ২৪ জুলাই যে শুরু হচ্ছে না, সেটা বলতে পারি, বলেন ডিক। নানা দেশের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় সুর পাল্টাতে বাধ্য হয় আয়োজক জাপানও। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নিজের দেশের সংসদে বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে পূর্ণাঙ্গ অলিম্পিক যদি করা সম্ভব না হয়, তাহলে গেমস পিছিয়ে দেয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিশ্ব এখন অলিম্পিকের জন্য তৈরি নয়। বাস্তব ব্যাখ্যা হচ্ছে, এই শেষ মুহূর্তে অলিম্পিক বাতিল করতে হলে প্রচুর টাকা ক্ষতি হবে সংগঠকদের। সেই কারণেই সময় নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছিল। টোকিও অলিম্পিক সংগঠক কমিটির প্রেসিডেন্ট ইয়োশিরো মোরি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা এখনো অলিম্পিক পিছিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্ত নেইনি। কিন্তু অলিম্পিক যে পিছিয়ে দেয়া হবে না, সেটাও বলা যাচ্ছে না। তিনি যোগ করেন, করোনাভাইরাসের আক্রমণে পৃথিবীর যা অবস্থা, তার পরে অলিম্পিক নির্ধারিত সময় হবেই, এটা বলার মতো বোকা আমি নই। তবে সাংগঠনিক কমিটির চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার তোশিরো মুতো জানিয়েছেন, পিছিয়ে গেলেও অলিম্পিক কোনভাবেই বাতিল করা হবে না। এও জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে যে অলিম্পিক্স মশাল র‌্যালি হওয়ার কথা আছে, তা পরিকল্পনা অনুযায়ীই হবে। তবে সূচীতে কিছু বদল হতে পারে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক সংস্থা যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, আমরা জানি, অলিম্পিকের মতো একটা বিশাল মাপের প্রতিযোগিতা পিছিয়ে দেয়াটা কতটা কঠিন। কিন্তু সবার আগে গুরুত্ব পাবে আমাদের এ্যাথলেটদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য। পাশাপাশি শুধু এ্যাথলেটদের স্বাস্থ্যই নয়, গুরুত্ব দিতে হবে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপরেও। অস্ট্রেলিয়ার অলিম্পিক কমিটির তরফে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে টোকিওতে দল পাঠাবে না তারা। নিজেদের মধ্যে এক টেলিকনফারেন্সের পরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। অস্ট্রেলিয়ার সেফ দ্য মিশন ইয়ান চেস্টারম্যান বলেছেন, এটা পরিষ্কার যে, জুলাইয়ে কোনোভাবেই অলিম্পিক হতে পারে না। আমাদের ক্রীড়াবিদরা যথেষ্ট ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু এই অনিশ্চয়তা এবং চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। অস্ট্রেলিয়ার অলিম্পিক কমিটির সিইও ম্যাট ক্যারল জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের দেশের ক্রীড়াবিদরা ২০২১ সালে অলিম্পিক্স হতে পারে, এই ধরে নিয়ে এখন অনুশীলন করবেন। তিনি বলেছেন, সবাই অলিম্পিকে যোগ দিতে চায়। কিন্তু পাশাপাশি এই পরিস্থিতিতে নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়েও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। আমাদের এ্যাথলেটদের সামনে থেকে অনিশ্চয়তা দূর করা দরকার ছিল। আমরা সেটাই করলাম। একই সুর শোনা গেল আন্তর্জাতিক এ্যাথলেটিক্স সংস্থার প্রধান সেবাস্তিয়ান কো’র মুখেও। তিনি বলেছেন, আমরা এর আগে ডায়মন্ড লীগ বাতিল করেছি। আর এখন পরিস্থিতি যে দিকে বাঁক নিয়েছে, তাতে অলিম্পিক স্থগিত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। চাপে পড়ে আইওসি এখন বলা শুরু করেছে, অলিম্পিক বাতিল না হলেও পিছিয়ে দেয়া হতে পারে। শোনা যাচ্ছে, চুক্তি অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে করা যেতেই পারে অলিম্পিক। সে রকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এমনকি নিজেদের অবস্থান এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে অলিম্পিকগামী ক্রীড়াবিদদের একটি চিঠিও লিখেছেন বাখ। গ্রেট ব্রিটেনের তরফে এদিন আইওসিকে জানানো হয়েছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে।
×