ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের সব শহরের বিদ্যুত লাইন ২০২৫ সালের মধ্যে মাটির নিচে যাবে

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১৪ মার্চ ২০২০

দেশের সব শহরের বিদ্যুত লাইন ২০২৫ সালের মধ্যে মাটির নিচে যাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সব শহর এলাকার বিদ্যুতের লাইন ২০২৫ সালের মধ্যে মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল মেয়াদী একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুত বিভাগের এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনায় দেখা যায়, ইতোমধ্যে এক হাজার ১১৮ কিলোমিটার লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, ‘সৌন্দর্য বর্ধন, দুর্ঘটনা রোধ এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত দিতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের শহর এলাকার বিদ্যুতের সব তার আমরা মাটির নিচে নিতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি বিতরণ কোম্পানিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তারা পরামর্শক নিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শুরু করবে।’ মোহম্মদ হোসেইন আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে সিলেটের একটি এলাকা আমরা তারবিহীন করতে পেরেছি। এরই ধারাবাহিকতায় সব শহরে বিদ্যুতের তার মাটির নিচে যাবে।’ এই কর্মপরিকল্পনায় দেখা গেছে, ভূগর্ভে বিতরণ লাইন নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। কোম্পানিটি এরই মধ্যে এক হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন মাটির নিচে নিয়ে গেছে। এছাড়া তারা এখন আরও ৯৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দেখা গেছে, এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ, দুর্ঘটনা রোধ ও মেট্রোপলিটন এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্যই সরকার এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এক সময় আমাদের উৎপাদন কম ছিল। এখন উৎপাদন বেড়েছে। বিতরণ ও সঞ্চালনে যে সমস্যা রয়েছে, তা দূর করার চেষ্টা চলছে। কর্মপরিকল্পনায় দেখা যায়, ডিপিডিসির আওতায় বর্তমানে ১৩২ কেভি লেভেলে ৩৭ দশমিক ৭২ কিলোমিটার, ৩৩ কেভি লেভেলে ২৮৩ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার এবং ১১ কেভি লেভেলে ৬৭৯ দশমিক ৮১ কিলোমিটার, অর্থাৎ মোট এক হাজার এক কিলোমিটার বিদ্যুতের তার মাটির নিচে স্থাপন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে ডিপিডিসির চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩২ কেভি, ৩৩ কেভি এবং ১১ কেভি লেভেলে আরও মোট ৯৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার লাইন মাটির নিচে নির্মাণ করা হবে। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। প্রথম পর্যায়ে ধানম-ির বেশ কিছু এলাকার বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচে যাবে। আগামী তিন বছরের মধ্যেই ধানম-ির একটি অংশকে তারবিহীন করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের পুরোটা, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকার তার মাটির নিচে নিতে সমীক্ষা করছি। এক বছরের মধ্যেই কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।’ অন্যদিকে ডেসকোর আওতায় উত্তরা, পূর্বাচল, বসুন্ধরা, আফতাবনগর, টঙ্গী, মিরপুর, বাড্ডা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, গুলশান, বনানী এবং ভাটারা এলাকায় ১৬৫ দশমিক ৪২ সার্কিট কিলোমিটার ওভারহেড লাইনকে মাটির নিচে নেয়ার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ডেসকোর অধীনে ৭০ দশমিক ৯৭ সার্কিট কিলোমিটার লাইন মাটির নিচে নেয়ার কাজ শেষ হয়েছে। লাইনের পাশাপাশি সাবস্টেশনগুলোও মাটির নিচে নিতে যাচ্ছে ডেসকো। এই সংস্থার আওতায় ৩৩টি সাবস্টেশনের মধ্যে ২৮টি রুটে ৪১টি ৩৩ কেভি লাইন মাটির নিচে নেয়ার কাজ চলছে। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধীনে এরই মধ্যে সিলেটের একটি এলাকায় বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নেয়া হয়েছে। এ বিভাগের ৪৯ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকাসহ মোট ৩২ দশমিক ৭২ কিলোমিটার এলাকায় বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নেয়া হয়েছে। বাকি সিলেট এলাকাসহ কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ এলাকায় বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নিতে সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রাক্কলন, নক্সা তৈরি এবং বিস্তারিত প্রজেক্ট রিপোর্ট প্রস্তুত করতে অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি এনার্জিট্রোনকে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পিডিবির সঙ্গে তাদের চুক্তি সই হয়। ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেমন, খুলনা, যশোর ও বরিশাল সিটি এলাকায় বর্তমানে বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নিতে আন্ডারগ্রাউন্ড পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম প্রজেক্ট ইন ওয়েস্ট জোন এরিয়া নামে একটি প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে প্রকল্পটি চলতি বছরের জুন থেকে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
×