ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরের শিক্ষার্থী কুর্মিটোলায়

এ পর্যন্ত ৯০ হাজার ব্যক্তিকে স্ক্রীনিং করা হয়েছে

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

এ পর্যন্ত ৯০ হাজার ব্যক্তিকে স্ক্রীনিং করা হয়েছে

আজাদ সুলায়মান ॥ করোনা আক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় দেশ বিদেশে পরিস্থিতি ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এখনও পর্যন্ত দেশে কেউ আক্রান্ত না হলেও প্রাণঘাতী এ ভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কায় রয়েছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত দেশে আসা মোট ৯০ হাজার ২৪৫ জনকে স্ক্রীনিং করা হয়েছে। তবে চীন থেকে আসা রংপুরের এক শিক্ষার্থীর দেহে করোনার কিছু লক্ষণ দেখা দেয়ায়- তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে এনে পরীক্ষা করা হয়। অন্যদিকে দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশীর দেহে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। তাকে রাখা হয়েছে বিশেষ হাসপাতালে। এদিকে চীনের অবস্থাও আরও জটিল হয়ে ওঠছে। সোমবার পর্যন্ত চীনেই মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০৮ জন। এছাড়া হংকং এবং ফিলিপিন্সে প্রাণ হারিয়েছেন আরও দুইজন। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে সিঙ্গাপুরে। সেখানে একজন বাংলাদেশীর আক্রান্ত হওয়ার খবর ঠাঁই পেয়েছে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পূর্বনির্ধারিত সিঙ্গাপুর সফর শেষ মুহূর্তে আকস্মিক বাতিল করা হয়েছে। ৯০ হাজার স্ক্রীনিং চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন দেশের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাধ্যমে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৯০ হাজার ২৪৫ জন বিদেশ ফেরত যাত্রীর মেডিক্যাল স্ক্রীনিং সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১২ হাজার ৬৩০ জন যাত্রীর স্ক্রীনিং করা হয়েছে। এ সময়ে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৬ হাজার ১৬২ জন, নৌ-বন্দরে ২৪০ জন এবং সমুদ্র বন্দরসমূহে ৬ হাজার ২২৪ জন বিদেশ ফেরত যাত্রীর করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য স্ক্রীনিং সম্পন্ন করা হয়। সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত স্বাস্থ্য সচেতনতায় করণীয় শীর্ষক বৈঠকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব তথ্য জানান। আশকোনা হজ ক্যাম্প এবং সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে কোয়ারাইন্টাইনে থাকা উহানফেরতদের বিষয়ে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, তারা ১ ফেব্রুয়ারি এসেছেন। ১৪ দিনের ‘ইনকিউবিশন পিরিয়ড’ হিসেবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। ১৬ ফেব্রুয়ারি তারা বাড়ি ফিরবেন বলে প্রাথমিকভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপরও যদি তারা কোন অসুবিধা বোধ করেন তাহলে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। বাংলাদেশীর ৮ রুমমেট কোয়ারান্টাইনে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশীর ৮ রুমমেটকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সেই বাংলাদেশীর (৩৯) চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর সরকার। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর রাখছে সেখানে থাকা বাংলাদেশ হাইকমিশন। এজন্য সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে হাইকমিশন। সোমবার এ কথা জানান সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। ওই প্রবাসী বাংলাদেশীকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করার খবর রবিবার জানা যায়। এ সম্পর্কে সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যম জানায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া যায়। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি তাকে সিঙ্গাপুরের জিপি ক্লিনিকে পাঠানো হয়। এর দু’দিন পর ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশী এই প্রবাসীকে চাঙ্গি জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে বেডোক পলিক্লিনিকে পাঠানো হয়। শনিবার সকালে ওই বাংলাদেশী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেন চিকিৎসকরা। পরে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে বাংলাদেশী এই প্রবাসী লিটল ইন্ডিয়ার মুস্তফা সেন্টারে যান। সেখানে গিয়ে কাকি বুকিতের দ্য লিও ডরমেটরিতে অবস্থান করেন তিনি। হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আক্রান্ত বাংলাদেশীর সঙ্গে তার রুমে থাকতেন আরও ৮ জন। তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। যে ডরমেটরিতে তিনি থাকতেন, সেখানকার বাসিন্দাদের কর্মস্থলে না গিয়ে আপাতত রুমে থাকতেই পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচয় জেনেছে হাইকমিশন। কিন্তু তার ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না। দূতাবাস সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। আক্রান্ত বাংলাদেশীর চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে হাইকমিশন। ৫ বাংলাদেশী নজরদারিতে জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে-এমন সন্দেহে ৫ বাংলাদেশী নাগরিককে নজরদারিতে রেখেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলার এসব বাসিন্দা সম্প্রতি থাই লায়ন নামক একটি ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন। একই ফ্লাইটে তাদের সঙ্গে কাছাকাছি সিটে একজন চীনা নাগরিক ভ্রমণ করেছিলেন। দেশে ফেরার পর ওই চীনা নাগরিকের করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশন্সের (আইএইচআর) আওতায় ১৫৫টি দেশ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। রাষ্ট্রপতির সফর বাতিল হঠাৎ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের পূর্বনির্ধারিত সিঙ্গাপুর সফর বাতিল করা হয়েছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতার জন্য সফরটি বাতিল করা হয়। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত শনিবার থেকে আগামী ১৫ই ফেব্রুয়ারি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর সফরের কথা ছিল রাষ্ট্রপতির। দেশটির মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের (এ্যাপয়েনমেন্ট) কথা ছিল। সফর বাতিলের কারণে এ্যাপয়েনমেন্টও বাতিল করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে চীনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা এখন সিঙ্গাপুরে। রোববার নতুন করে আরও সাতজন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফলে সেখানে করোনাভাইরাস আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ জনে। এ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সিঙ্গাপুর সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এ নিয়ে বেশকিছু জরুরী পদক্ষেপও নিয়েছে দেশটির সরকার, যার মূল উদ্দেশ্য মানুষে-মানুষে যোগাযোগ যথাসম্ভব কমিয়ে দেয়া। প্রাণী আমদানিতেও কোয়ারেন্টাইন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশ থেকে প্রাণিসম্পদ আমদানি করলে সেগুলো কমপক্ষে ১৫ দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করার পর ছাড়পত্র দেবে সরকার। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বাংলাদেশে সংক্রমণ এড়াতে এই পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু।
×