সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের প্রতিভাবান অভিনয়শিল্পী সোহেল রানা। আরণ্যক নাট্যদলের সদস্য রানা একাধিক মঞ্চ নাটকে অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছেন। মঞ্চের পাশাপাশি সমানতালে অসংখ্য টিভি নাটকে অভিন করে প্রশংসিত হয়েছেন। বিশেষ করে গতবছর ফরহাদ আলমের রচনা ও পরিচালনায় ‘কলসি’ নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি পেয়েছিলেন রানা। সোহেল রানাকে ঘিরেই নাটকের গল্প সাজিয়েছিলেন নির্মাতা। দর্শকদের পাশাপাশি এ নাটকে রানার অভিনয়ের প্রশংসা করেন খ্যাতিমান অভিনেতা, নাট্যজন মামুনুর রশীদও।
এদিকে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে মাহমুদ হাসান সিকদারের চলচ্চিত্র ‘অবতার’। চলচ্চিত্রে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেও বেশ প্রশংসা পেয়েছেন রানা। অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘অবতার’ নিয়ে অনেকটাই উচ্ছ্বসিত রানা। এ প্রসঙ্গে রানা বলেন আমি ‘অবতার’ চলচ্চিত্রের প্রযোজক ও পরিচালকের প্রতি সারাজীবন কৃতজ্ঞ। ‘অবতার’ চলচ্চিত্রের বিল্লা চরিত্র দিয়ে আমি বেশ সারা পেয়েছি। বিশেষ করে এই চলচ্চিত্রে আমার অন্যতম সংলাপ ‘আকবর বিল্লা-বিয়া করিনা, করি হিল্লা’ দর্শকের মুখে মুখে ছিল। প্রথম চলচ্চিত্রের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আরও একটি নতুন চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন না। সবকিছু ঠিক থাকলে অচিরেই নতুন ওই চলচ্চিত্রের শূূটিংয়ে অংশ নিতে যাচ্ছেন তিনি।
অভিনয়ে সম্পৃক্ততার গল্প বলতে গিয়ে রানা বলেন, আমি গেরস্থ পরিবারের ছেলে। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় প্রথম মঞ্চ নাটক অভিনয় করে যে প্রশংসায় ভেসেছিলাম, সেই প্রশংসাই প্যাথেডিন হয়ে রক্তে প্রবেশ করে, যা আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে চাই। ক্লাস এইটে পড়ার সময় গ্রামের বাৎসরিক নাটক ‘রক্ত দিয়ে লেখা’ নামক যাত্রাপালায় নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করি। এ কারণে আব্বা-মা’কে শাসনের সুরে বলেছিল ‘সবার ছেলে নায়ক হয় আর সোহেলের এত সুন্দর চেহারা নিয়ে হয়েছে নায়িকা, মান ইজ্জত আর থাকল না’। সেদিন থেকেই পণ করেছিলাম আমি নায়ক হব। তারপর রাজবাড়ীর পাংশা থিয়েটারে কাজ করি দু’বছর। এরপর ২০০৩ সাল থেকে আরণ্যক নাট্যদলের ‘সংক্রান্তি’, ‘রাঢ়াঙ’, ‘এবং বিদ্যাসাগর’, ‘স্বপ্ন পথিক’, ‘দি জুবলি হোটেল’ নাটকে নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছি। আরণ্যক নাট্যদল আমাকে শিখিয়েছে নায়ক নয়, অভিনেতা হতে হবে। সম্প্রতি আরণ্যকের বিখ্যাত নাটক ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকে ‘চুন্নু’ চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছি। নাটকটি রচনা করেছেন মান্নান হীরা, নির্দেশনা দিয়েছেন শাহ আলম দুলাল। গত ১২ ডিসেম্বর জাতীয় নাট্যশালায় নাটকটির প্রদর্শনী হয়। এখন আমার ভাবনা এখন শুধুই ‘চুন্নু’ চরিত্র নিয়ে। ষাটের দশকে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের একটি মফস্বল শহরের ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকের মহড়াকে কেন্দ্র করে নাটকের
কাহিনী এগিয়েছে। ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকের নির্দেশনা ও শিল্পীদের অভিনয় দর্শকের মন জয় করে নেয়। বিশেষ করে ‘চুন্নু’ চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করছি। আরণ্যক নাট্যদলের নতুন প্রযোজনা ‘ফেসবুক’ নাটকে অভিনয় করব বলে আশা রাখছি। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিচ্ছেন নাট্যব্যক্তিত্ব শ্রদ্ধেয় মামুনুর রশীদ। আমি আরণ্যক নাট্যদলের কর্মী হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। আমার প্রিয় মানুষ আব্বা-মা ও পরিবারের সবাই। প্রিয় ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। প্রিয় শিক্ষক মান্নান হীরা ও শাহ আলম দুলাল। প্রিয় লেখক নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস, মানিক বন্দোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, আহমেদ সফাসহ অনেকে। সবার দোয়া ও আশীর্বাদ নিয়ে আমি আরও ভাল ভাল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে যেতে চাই। নিজ মেধা, যোগ্যতা এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে রানা এগিয়ে যাবেন তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে। তার জন্য শুভ কামনা।