প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনোদন শিল্পের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও শক্তিশালী মাধ্যম চলচ্চিত্রকে মানুষের যাপিত জীবনের অনুষঙ্গ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানীয় পদক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান উপলক্ষে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই মহৎ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সামাজিক অবক্ষয় রোধে এই বিনোদন শিল্পকে কার্যকর করে তোলার পরামর্শ দেন। সিনেমা শুধু শিল্প-সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমই নয়, তার চেয়ে বেশি সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের দুঃখ-বেদনা, আনন্দ-আবেগের সচিত্র প্রতিবেদনও বটে। স্পর্শকাতর এমন সব অনুরণন ছাড়াও বাস্তব প্রতিঘাতে সামাজিক বিপত্তির নেতিবাচক প্রতিপত্তির প্রতিকারও বিনোদন শিল্পকে যথার্থ মর্যাদায় দাঁড় করিয়ে দেয়। সমাজের মানুষই লালন ধারণ করে তার সমাজ, সভ্যতা, সংস্কার আর ঐতিহ্য। আবার তেমন দক্ষ মানব সম্পদের অভাবনীয় শিল্পকর্মে তৈরি হয় চলচ্চিত্রের বিষয়, আঙ্গিক আর সামাজিক বলয়। সঙ্গত কারণেই নিবেদিত শিল্প নির্মাতা থেকে আরম্ভ করে সংশ্লিষ্ট কুশীলবদেরও সচেতন দায়বদ্ধতা থাকে। বর্তমানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তাও সামাজিক চলচ্চিত্রকে রসদ জোগাতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এবং মাদকের মতো সামাজিক অপরাধগুলো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নাড়া দিতে পারলে এক ধরনের কার্যকরী ভূমিকা পালন করা হয়। সামাজিক নিরাপত্তায় জনগণের যাপিত জীবন নির্বিঘœ আর শঙ্কামুক্ত করতে সমস্ত অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মাধ্যমে হিসেবে শিল্প-সংস্কৃতিকে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে হবে। সাহিত্য-সংস্কৃতি আর শৈল্পিক আবেদন শুধুমাত্র মনোজগতের খোরাক নয়, বরং অনেক শিক্ষণীয় বিষয়ও তার মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকে। নির্মাতারা শৈল্পিক কৌশলে তেমন বার্তাকে দর্শক-শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে খ্যাতিমান অনেক শিল্পী ব্যক্তিত্বকে যথার্থ সম্মান প্রদান করা হয়। ২০১৭ সালের জন্য আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন শক্তিমান অভিনেতা এটিএম সামসুজ্জামান। ষাট-সত্তর দশকের খ্যাতিমান অভিনেত্রী সালমা বেগম সুজাতাকেও তার যোগ্য সম্মান জানিয়ে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়। ২০১৮ সালের সম্মাননা পান প্রবীণ অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নায়ক আলমগীর। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী জয়া আহসান আর শ্রেষ্ঠ অভিনেতা শাকিব খানের হাতে তাদের সম্মাননা পদক তুলে দেয়া হয়। প্রসঙ্গক্রমে উঠে আসে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস এবং স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই শিল্প মাধ্যমটির গুরুত্বের প্রতি তীক্ষè নজরদারি। যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের এক বছরের মধ্যে ১৯৫৫ সালে জাতির জনকই পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন বিল উত্থাপন ও পাস করেও ছিলেন। ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর বাঙালীর ঐতিহ্য সংস্কৃতির ওপর যে অনভিপ্রেত আগ্রাসন প্রবলভাবে গেড়ে বসে, তার বিরূপ প্রভাব চলচ্চিত্রেও পড়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়। ফলে আর্থ-সামাজিক বলয়ের অধোগতির অনুষঙ্গ হিসেবে অপসংস্কৃতি তার বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় শিল্প মাধ্যমের ওপর চেপে বসে। সেখান থেকে জাতিকে সুস্থ সাংস্কৃতিক ধারায় প্রত্যাবর্তন করতে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। সেই দুঃসহ পালাক্রম আমরা পার করে এসেছি। নব উদ্দীপনায় ঐতিহ্যিক ও আধুনিক সংস্কৃতির চর্চা এবং বিকাশ এখন শিল্প মাধ্যমে অনেক বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে আরও সচেতন আবেদনে বাস্তবভিত্তিক ছবি তৈরি করতে হবে, যা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে হরেক রকম কলুষতা থেকে মুক্তির বার্তা দিতে পারে। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী আধুনিক ডিজিটাল সিনেমা হল তৈরির ব্যাপারে যৌক্তিক পরামর্শ তুলে ধরেন। যাতে বড় পর্দায় হলে বসে নির্বিঘেœ, নিরাপদে সাধারণ মানুষ সিনেমার সুস্থ জগতে প্রবেশ করতে পারে। বিজাতীয় অপসংস্কৃতিকে পরিহার করে সুষ্ঠু বিনোদন শিল্পকে তার যথার্থ আসনে বসাতে হবে। সঙ্গত কারণেই উন্নত মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ যেমন জরুরী, পাশাপাশি মানসম্মত আধুনিক ডিজিটাল হল তৈরিও সময়ের দাবি।