ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চমেক হৃদরোগ বিভাগে নেই কোন অধ্যাপকও

বেড বাড়লেও বাড়ছে না চিকিৎসক

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

বেড বাড়লেও বাড়ছে না চিকিৎসক

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ হৃদরোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই চট্টগ্রামে। কেউ আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালই ভরসা, রোগীর আর্থিক অবস্থান যাই হোক না কেন। চমেক হাসপাতালও সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করে যাচ্ছে সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে। চিকিৎসা উন্নত করতে সংযোজিত হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, বাড়ছে বেড সংখ্যা। কিন্তু বাড়ছে না চিকিৎসক। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগ চলছে অধ্যাপক ছাড়াই। কারণ হৃদরোগ বিভাগে এখনও সৃষ্টি হয়নি অধ্যাপক পদ। ফলে অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটি এখনও পূর্ণতা পায়নি বলে মনে করছেন মেডিক্যালের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সেবাগ্রহীতারা। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও চট্টগ্রামে হৃদরোগের সেবার জন্য রোগীদের আস্থার ঠিকানা চমেক হাসপাতাল। এ হাসপাতালে নামমাত্র খরচে উন্নত সেবা পেয়ে থাকেন রোগীরা। হার্টের রিং সংযোজন, ওপেন হার্ট সার্জারি ও বাইপাস সার্জারি করা হয় নিম্নআয়ের রোগীদের সামর্থ্যরে মধ্যে। ১০০ শয্যার এ বিভাগে গড়ে রোগী ভর্তি থাকে আড়াই থেকে তিন শ’ জন। শুধু চট্টগ্রাম জেলা নয়, পুরো বিভাগের হৃদরোগীরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কিন্তু চিকিৎসকের সংখ্যা যেমন হওয়া প্রয়োজন, তা নেই। বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে সহযোগী অধ্যাপক। বিভাগটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনও চলছে অধ্যাপক পদ ছাড়াই। চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ প্রবীর কুমার দাশ জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশে যে দুটি সরকারী হাসপাতালে হৃদরোগের অস্ত্রোপচার হয় তার মধ্যে একটি চমেক হাসপাতাল। অপরটি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই চমেক হাসপাতাল রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে হার্টে রিং স্থাপন করা হয়, যেখানে বেসরকারীতে খরচ পড়ে দুই লাখ টাকার ওপরে। এ পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি এনজিওগ্রাম হয়েছে চমেক হৃদরোগ বিভাগে। বাইরের বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিকে এনজিওগ্রামের জন্য ব্যয় হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। চমেক হাসপাতালে এনজিওগ্রামের সর্বোচ্চ ব্যয় ৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারী চার্জ মাত্র দুই হাজার টাকা। বাকিটা আনুষঙ্গিক উপকরণ কেনা বাবদ। প্রেসমেকার স্থাপনেও সরকারী চার্জ দুই হাজার টাকা। এর বাইরে কিছু উপকরণ সংগ্রহ করতে হয় রোগীদের। সবচেয়ে বড় কথা অপারেশনের চার্জ নেই। দেশে শুধু চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রয়েছে আলাদা ব্লক। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হৃদরোগ বিভাগে রয়েছেন একজন সহযোগী অধ্যাপক, দুজন সহকারী অধ্যাপকসহ সর্বোচ্চ ১৫ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে রয়েছেন ওএসডিতে থাকা চিকিৎসকও। অর্থাৎ সবাই নিয়মিত নন। এ বিভাগ থেকে ডি-কার্ড ও এমডি ডিগ্রী প্রদান করা হয়। কিন্তু এমন একটি বিভাগে অধ্যাপক পদ নেই কেন, সেই প্রশ্ন চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হৃদরোগ বিভাগে অধ্যাপক পদ সৃষ্টির জন্য প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় অবহিত রয়েছে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হবে বলে আশা করছেন শিক্ষক ও চিকিৎসকগণ। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জ্যেষ্ঠতা বিবেচিত না হওয়ায় এক ধরনের উদ্বিগ্নতাও রয়েছে। সাধারণত পদোন্নতিতে বিসিএসের জ্যেষ্ঠতাকেই মাপকাঠি ধরা হয়। কিন্তু বর্তমানে পদোন্নতির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে তালিকা প্রস্তুত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে তাতে দেখা যায় বিসিএস অনুযায়ী অনেক কনিষ্ঠ শিক্ষকও শীর্ষস্থানে উঠে এসেছেন, শুধু আগে সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার সুবাদে। এতে দেখা যায়, তালিকায় ২০তম বিসিএস কর্মকর্তার নাম উঠেছে ৮ম বিসিএসের ওপরে। এদিকে জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে এমন অনেকে রয়েছেন যাদের চাকরির মেয়াদ মাত্র এক থেকে দেড় বছর অবশিষ্ট রয়েছে। পদোন্নতি যদি সিনিয়রিটি বিবেচনায় না হয়, তাহলে হয় তো অনেকেই অধ্যাপক না হয়েই অবসরে চলে যাবেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের মানোন্নয়নে অধ্যাপক পদ সৃষ্টি এবং তাতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই একজনকে পদোন্নতি দেয়া হবে, এমনই প্রত্যাশা চিকিৎসকদের।
×