ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নজর থাকছে তামিম, মুশফিকদের দিকেই

জাতীয় ক্রিকেট লীগ শুরু আজ

প্রকাশিত: ১২:০৯, ১০ অক্টোবর ২০১৯

জাতীয় ক্রিকেট লীগ শুরু আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জাতীয় ক্রিকেট লীগের (এনসিএল) ২১তম আসর শুরু হচ্ছে আজ। এদিন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঢাকা মেট্রো ও চট্টগ্রাম বিভাগ, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগ, খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে রংপুর ও খুলনা বিভাগ এবং রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে বরিশাল ও সিলেট মুখোমুখি হবে। ম্যাচগুলো সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হবে। সূচী অনুযায়ী আজ শুরু হয়ে ১৭ নবেম্বর শেষ হবে এনসিএল। এবারের লীগের প্রথম দুটি রাউন্ড খেলবেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুমিনুল হক, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতদের দিকেই এবার বিশেষ নজর থাকছে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টটি হারের পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবার এনসিএলকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের খেলা বাধ্যতামূলক করেছে। সামনেই নবেম্বরে ভারতের বিরুদ্ধে টি২০ ও টেস্ট সিরিজ রয়েছে। এ সিরিজকে সামনে রেখেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আফগানদের বিরুদ্ধে টেস্ট হারের পর যদি কোনভাবে ভারতের বিরুদ্ধে ভাল করা যায় এ জন্যই জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের এনসিএল খেলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটাররা এনসিএলের প্রথম দুই রাউন্ড খেলবেন। এরপর ২৫ অক্টোবর ভারত সফরের উদ্দেশে শুরু হতে যাওয়া প্রস্তুতি ক্যাম্পে যোগ দেবেন তারকা ক্রিকেটাররা। তার আগে তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মুমিনুল, মোসাদ্দেকদের দিকেই নজর থাকছে। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা এনসিএলে কেমন করেন সেদিকেই দৃষ্টি থাকবে। আফগানদের বিরুদ্ধে টেস্টে যে ব্যাটসম্যানরাই ডুবিয়েছেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের খেলা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি এবার জাতীয় লীগকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার ভাবনাও করেছে বিসিবি। এ জন্য বিপ টেস্টে ‘১১’ স্কোর করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ ও বয়সী ক্রিকেটারদের বেলাতে তা ‘১০’ স্কোরে নামিয়ে আনা হলেও এবার এই স্কোর নিয়ে হয়েছে তুমুল আলোচনা। তার প্রভাব কতটুকু পড়ল এনসিএলে তাও দেখা হবে। এবারও লীগে দুই স্তরে খেলা হবে। প্রথম স্তরে থাকছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও ঢাকা বিভাগ। গত আসরে দ্বিতীয় স্তরের চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম স্তরে উন্নীত হয়েছে ঢাকা বিভাগ। এবার প্রথম স্তরে খেলবে তারা। দ্বিতীয় স্তরে থাকছে ঢাকা মেট্রো, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগ। গত আসরে প্রথম স্তরের সর্বনি¤œ অবস্থানে থাকায় দ্বিতীয় স্তরে নেমে গেছে বরিশাল। এবারও একই নিয়ম থাকছে। প্রথম স্তরে পয়েন্ট তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা দল আগামী মৌসুমে দ্বিতীয় স্তরে নেমে যাবে। দ্বিতীয় স্তরে পয়েন্ট তালিকায় প্রথম স্থানে থাকা দল আগামী মৌসুমে প্রথম স্তরে উন্নীত হবে। পয়েন্ট তালিকায় অবশ্য এবার পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। টানা জয়ের জন্য এবার আছে বোনাস পয়েন্ট। প্রতিটি জয়ের জন্য পাওয়া যাবে ৮ পয়েন্ট। টাই ম্যাচের জন্য প্রতিটি দল পাবে ৪ পয়েন্ট করে। ড্র ও পরিত্যক্ত ম্যাচে প্রতিটি দল পাবে ২ পয়েন্ট করে। ব্যাটিং ও বোলিং দুই ক্ষেত্রেই বোনাস পাওয়া যাবে প্রথম ১০০ ওভারের পারফর্মেন্সের জন্য। ব্যাটিংয়ে বোনাস মিলবে কেবল প্রথম ইনিংসে। প্রথম ১০০ ওভারে ২৫০ রানের বেশি প্রতিটি রানের জন্য ০.০১ পয়েন্ট করে মিলবে। যেমন ১০০ ওভারে ৩৫০ রানের জন্য পাওয়া যাবে ১ পয়েন্ট। এবার প্রথম ইনিংসে লিডের জন্য নেই কোন বোনাস পয়েন্ট। বোলিং বোনাস পয়েন্টও মিলবে কেবল প্রথম ইনিংসে। প্রথম ১০০ ওভারে ৫ উইকেট নেয়ার জন্য পাবে ০.৫ পয়েন্ট। ৭ উইকেট নিলে পাওয়া যাবে ১ পয়েন্ট। নয় বা তার বেশি উইকেটের জন্য ১.৫ পয়েন্ট। বোলিংয়ে সর্বোচ্চ পাওয়া যাবে দেড় পয়েন্ট। বোনাস পয়েন্ট পাওয়ার জন্য হয় দুই দলেরই প্রথম ইনিংস শেষ হতে হবে নয়তো দুই দলকেই অন্তত ১০০ ওভার খেলতে হবে। টানা দুই জয়ের জন্য ১ বোনাস পয়েন্ট, টানা ৩ জয়ে ২, টানা ৪ জয়ে ৩, টানা ৫ জয়ে ৪ ও সব ম্যাচ জিতলে ৫ পয়েন্ট পাওয়া যাবে। সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া দল জিতবে শিরোপা। পয়েন্ট সমান হলে প্রথমে দেখা হবে বেশি জয়, পরে দেখা হবে কম পরাজয়। এই দুই বিচারেও সমতা থাকলে দেখা হবে দুই দলের নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের পয়েন্ট। সেটাও সমান হলে আসবে বেশি উইকেটের হিসাব। এখানেও সমতা থাকলে দেখা হবে বেশি রান। কোন দল ওয়াকওভার দিলে প্রতিপক্ষ পূর্ণ ম্যাচ পয়েন্ট পাবে। ওয়াকওভার দেয়া দলের খেলোয়াড়দের পরের ম্যাচের জন্য ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশ জরিমানা করা হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় এ্যাসোসিয়েশনকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এরপর বিসিবি আরও বড় কোন শাস্তি দিতে পারে। ৮০ ওভার পর বাধ্যতামূলকভাবে নতুন বল নিতে হবে। এনসিএলের এবারের আসর হবে ৯ ভেন্যুর ১০ স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এবারই প্রথম এতগুলো ভেন্যুতে এনসিএলের খেলা হবে। তবে নেই সিলেট স্টেডিয়াম। প্রথম শ্রেণীর এ ক্রিকেট আসরের খেলা এবার চার বছর পর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেও হবে। ম্যাচগুলো বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম, রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়াম, খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়াম, কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ১ ও ২ নম্বর মাঠ, রংপুর ক্রিকেট গার্ডেন, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেও হবে। প্রতি রাউন্ড শেষে দলগুলো পাবে তিনদিনের বিরতি। ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি বাড়বে এমন শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ম্যাচ ফি বাড়েনি। মাঝখানে এক মৌসুম আগে ২০১৭ সালের এনসিএলে ম্যাচ ফি কিছুটা বাড়িয়েছিল বিসিবি। ২৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। ভ্রমণভাতা ২ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছিল আড়াই হাজার টাকা। ১ হাজার টাকার জায়গায় দৈনন্দিন ভাতা বেড়ে হয়েছিল দেড় হাজার টাকা। এবার একই থাকছে ফি। প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের দলগুলো প্রস্তুতির জন্য পাচ্ছে ৬ লাখ টাকা করে। প্রথম স্তরের শিরোপা জয়ী দল পাবে ২০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্তরের সেরা দল পাবে ৫ লাখ টাকা। প্রথম স্তরের রানার্সআপ দল পাবে ১০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্তরের দ্বিতীয় সেরা দলের জন্য নেই কোন আর্থিক পুরস্কার। প্রথম স্তরের প্রতিটি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় পাবেন ২৫ হাজার টাকা। টুর্নামেন্ট সেরা পাবেন ১ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও সেরা উইকেট শিকারি পাবেন ৭৫ হাজার টাকা করে। প্রতি ম্যাচের জয়ী দল পাবে ৮০ হাজার টাকা বোনাস। দ্বিতীয় স্তরে প্রতিটি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় পাবেন ২০ হাজার টাকা। টুর্নামেন্ট সেরা পাবেন ৫০ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও সেরা উইকেট শিকারি পাবেন ৫০ হাজার টাকা করে। প্রতি ম্যাচের জয়ী দল পাবে ৭৫ হাজার টাকা বোনাস। এনসিএলের উইকেট নিয়ে সবসময়ই থাকে হতাশা। তিন ধরনের উইকেটে খেললে ভাল হয়। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেললে টার্নিং উইকেটে খেলে দল। সঙ্গে প্রতিপক্ষের স্পিনারদের সামলানোর প্রস্তুতিটাও জাতীয় লীগে নেয়া হবে। তাহলে ব্যাটসম্যানদের স্পিনে ভীতি থাকবে না। তাই প্রথমত স্পিনিং উইকেটের আশা আছে। কোন কোন সময় পরিস্থিতি ব্যাটিং উইকেট বানাতেও বাধ্য করতে পারে। ব্যাটসম্যানদের লম্বা সময় ব্যাটিং করার মানসিকতা আরও শক্তিশালী করতে ব্যাটিং উইকেট থাকা প্রয়োজন। যা দ্বিতীয় চাহিদায় পড়ে। তৃতীয়ত সিমিং উইকেট থাকাও জরুরী। উপমহাদেশের বাইরে যে দেশেই খেলা হোক, সেখানেই যে ঘাসের উইকেটই থাকে। এ তিন ধরনের উইকেট থাকলে পর্যায়ক্রমে তিন উইকেটেই খেললে, ব্যাটসম্যান বা বোলাররা যে কোন পরিস্থিতিতেই ভালভাবে মানিয়ে চলার অভ্যেস তৈরি করে নিতে পারবেন। আজ শুরু হওয়া এনসিএলে তা মিলবে? তবে খেলা হবে সামনে ভারতে। ভারতে স্পোর্টিং উইকেটই হয়। সঙ্গে থাকে স্পিনবান্ধব উইকেটও। তামিম, মুশফিকদের জন্য নিশ্চয়ই দুই রাউন্ড এমন উইকেটই তৈরি করা হবে। তাদের দিকেই যে বিশেষ নজর থাকবে।
×