ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ১২:২৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কবিতা

ঈগল ডানায় নিভে সৈয়দ রফিকুল আলম হলুদ বৃষ্টিতে ঝরে ফোঁটা ফোঁটা আগ্নেয় শলাকা অঙ্গন চৌহদ্দি ব্যাপে খরতাপ চিমনীর ধূমল। সুতনু ঘাসের কোলে চড়ে না তো মিথুন বলাকা নীলম আকাশে আজ সারিবদ্ধ পাখির বিরল। পাঁজরে অর্ণব পোত, উল্টোস্রোত, তাপিত অঙ্গার নিনাদে রমণ ঘণ্টী দিশাহীন বিবস্ত্র মাস্তুল। কম্পাসের কাঁটা ঘোরে ডুব ডুব ফেনিল সম্ভার ঈগল ডানায় নিভে অস্তরাগ সূর্যের রাতুল। গম্ভীরা কিংকণে বাজে উন্মাতাল বে সুরো মুরজ সর্পিল সরণি পথে, কাঁটা ঝোপ নষ্টচাঁদ দাহ কেতকী কেতন গন্ধে ফুটে না তো সুভোগ ষড়জ সায়ম শিশির হিমে বিপ্রতীপ অসুয়া প্রদাহ। সাগর তলানি হতে ফুঁড়ে ওঠে জলজ বুদবুদ কল্পতরু আশালতা যায় ছিড়ে বাজে না সরোদ। ** লর্ডসের মাঠ আলমগীর রেজা চৌধুরী একটি সবুজাভ পাত্র ধারণ করে আছে স্বপ্নের অণু-পরমাণু স্বপ্ন-সাধের স্বচ্ছতোয়া এক খ- মানুষের ভূমি ওর বুক জুড়ে সহ¯্র নখের দাগ বাতাসে বারুদের ঘ্রাণ। তুমি কী দেখনি দ্রোহের জনপদ- ভুবনপুরের বটতলার পুঁথির আসর প্রপিতামহের গ্লানিকর কষ্টের ছবিÑ আমার প্রেমসিদ্ধ স্ফটিক জল তোমাকে দিতে চাই। লর্ডসের মাঠ, আজ শুধু আমি জিততে চাই আমার প্রণয় একজন জুলেখা বেগম- আমি তাকে একাত্তরের বাঙ্কারে রেখে এসেছি তাই তুমি দক্ষিণের জানালা খুলে রাখতেই পারো। ** দিঘিদিঘি মন নদীনদী ভালোবাসা আমিনুল ইসলাম এত যে বৈষম্য ও বঞ্চনা তবু ভাগ হতে চাই নাকো বলে—- ন্যায্য ছয় দফা ছেঁটেছুঁটে একদফা বানিয়েছি; সেখানেও তুমি অদ্ভুত অজুহাতে ‘নামঞ্জুর’ লিখতে চাও। অথচ আমার অনুরাগের আকাশ নিয়ে এতটুকু সন্দেহ নেই তোমার মনে— পাতাবাহার মন উল্টিয়ে এটিও দেখিয়েছো বহুবার এবং মন থেকে তা মুছে ফেলতেও চাওনি! হয়তোবা তুমিও ভালোবাসার পক্ষে কিন্তু এটা বোঝো না যে কুসুম্বা দিঘির মন নিয়ে একটা আত্রাইকে ধরে রাখা যায় না। তোমার মনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভ্রান্তদের ভোটে ভরে ওঠে গরমিলের বাক্স, ভুল করে একেই তুমি শক্তি বলে জানো, মহাকালের নক্ষত্রচোখ সাক্ষী— শুধু আকবরীয়-মনের অভাবেই মোগলে আজমের মহা-ভারত আজ ত্রিখ-িত। ** জালাল উদ্দিন রুমির কবিতা প্রখ্যাত ফার্সি কবি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (১২০৭-১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩), তিনি মওলানা রুমি, মৌলভি রুমি কিংবা শুধু ‘রুমি’ নামেও জনপ্রিয়। কবিতার মাধ্যমে বিশ্বের হৃদয়ের কথা বলতেন তিনি। তার কবিতা রহস্যময় ও বিচিত্র অভিজ্ঞতায় মানুষের অভিব্যক্তিরই প্রতিফলন ঘটেছে, যেখানে মানুষ তার প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন অনুভূতিকে খুঁজে পায়। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার কবিতা অনূদিত হয়েছে। রুমির তিনটি কবিতা অনুবাদ করেছেন কবির চান্দ। ১. তুমি আর আমি আমাদের মহার্ঘ কথামালা মহাপৃথিবীর মনে মিশে গেছে একদিন তারা ফিসফিস স্বরে বৃষ্টির মতো আমাদের ওপর ঝরে পড়বে আর আমরা আমাদের শেকড় থেকে পুনরায় জেগে উঠবো ২. আমি তোমার মনের গভীরে একটা পথের কথা জানি যা আমার পথে মিশে যায় আমি আমার ভেতরে একটা প্রশান্ত সমুদ্রের কথা জানি যে পরম আনন্দে তোমার মুখচ্ছবি ধরে রাখে ৩. কোনো শব্দ ছাড়াই আমি তোমার সঙ্গে কথা বলবো ফিসফিস করবো যা কেউ শুনবে না আমি জানি হাজার লোকের মধ্যেও যদি বলি আমার গল্পগুলো কেবল তোমার কাছেই পৌঁছুবে ** সবাই বলে সিনথিয়া শবনম মৌ সবাই বলে, ‘পাগল মেয়ে, রঙিন চশমা লাগিয়ে রাখো চোখে, দূর বোকা! বাস্তবকে দেখতে শেখ নইলে খাবে ধোঁকা! আমি বলি, ‘সবার চেয়ে যদি একটু আলাদা হই তবে এমন কি আর ক্ষতি?’ সবাই বলে, ‘বড় হচ্ছো খামখেয়ালি থাকলে কি আর চলে?- বদলে ফেল পথ, পড়াশোনায় মন দাওগো-পড়ালেখাই সব॥’ আমি বলি, ‘নাইবা হলাম বড় নিজের ইচ্ছে মতো চলি যদি তবে এমন কিআর ক্ষতি? সবাই বলে, ‘এইযে মেয়ে, আবার হাতে গল্পের বই! সারাটাদিন বই আর বই-বই কি তোমার সই? গল্প দিয়ে হবে না কিছু, বুঝলে? -গল্পতো গল্পই!’ আমি বলি, ‘ঝামেলা তো ভারি! কারণ ছাড়াই একটা কিছু করি আমি যদি, তবে এমন কি আর ক্ষতি? যতই বলো তোমরা, আমার হবে না সুমতি!!’ ** শাড়ি ইব্রাহীম রাসেল শৈশবে খুব আকাশ ধরতে ইচ্ছে করতো যখন মাঠে যেতাম, মনে হতো ঐতো ওপারেই আকাশ; দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হতাম আকাশটা আমায় দেখে হাসতো একদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি মায়ের শরীরে জড়ানো দীর্ঘ আকাশ বাবার দেয়া মায়ের সেই আকাশি রঙের শাড়িটাই আমার মাঠের ওপারের আকাশ। যেদিন প্রচ- জ্বরে আমার হাঁড়কাঁপুনি মা তার আকাশ রাঙা শাড়ির আঁচলে জড়ালেন সেদিন অনুভব করেছি মায়ের শাড়ির আঁচল সন্তানের জন্য কতটা দাওয়াই! একদিন তোমার জন্য শাড়ি কিনতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ল লাল-সবুজে আঁচল এখনো যখন মাঝে মাঝে সেই শাড়িটা পরো মনে হয় দেশটাকে জড়িয়ে আছো আর আমি দেশের বুকেই ঘুমাই....
×