ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচিত্র হাইব্রিড প্রাণী

প্রকাশিত: ১২:২৬, ৩০ আগস্ট ২০১৯

বিচিত্র হাইব্রিড প্রাণী

রং-বেরং, ভিন্ন আকার-আকৃতি ও ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অসংখ্য প্রাণী রয়েছে আমাদের এই সুবিশাল প্রাণী রাজ্য। এর মধ্যে রয়েছে কিছু হাইব্রিড বা সঙ্কর প্রাণীও। যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির দুটি প্রাণীর মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে এ পৃথিবীতে। এমনই কিছু অজানা প্রাণী নিয়ে আজকের আয়োজন। লিখেছেন- মুনতাসির সিয়াম লাইগার পুরুষ সিংহ বা লায়ন ও স্ত্রী বাঘ তথা টাইগারের সঙ্করায়নে উৎপন্ন প্রাণী লাইগার। এরা দেখতে বিশাল আকৃতির সিংহের মতো, যাদের শরীরে বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগগুলো হালকাভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। সাইবেরিয়ান বাঘকে বিশুদ্ধ প্রজাতি হিসেবে সবচেয়ে বড় প্রজাতির বাঘ ধরা হয়। তবে লাইগার হচ্ছে সবচেয়ে বড় আকৃতির বিড়াল প্রজাতির প্রাণী। পুরুষ লাইগার আকারে ৩-৩.৬ মিটার লম্বা ও ওজনে ৩০০-৪৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, পুরুষ সিংহের শরীরে এক বিশেষ গ্রোথ প্রোমোটিং জিন থাকে, যা বাঘের শরীরে থাকে না। ফলে লাইগার বাড়তেই থাকে। বিশাল আকৃতির এই প্রাণী দৈনিক ৩০ পাউন্ডের মতো কাঁচা মাংস খেয়ে থাকে। লাইগার হাইব্রিড প্রাণী বিধায় এরা ব্রিড করে না। সাধারণ সিংহ বা সিংহীর চেয়ে লাইগার অনেক বেশি খেলা প্রিয় ও সামাজিক প্রাণী। সিংহ সাঁতার কাটতে না পারলেও বাঘের মতো এরা সাঁতার কাটতে পারে। দ্য জ ইওক এবং গরুর ডিএনএ সংমিশ্রণে উৎপন্ন প্রাণী জ। যেটি মূলত পুরুষ হাইব্রিড প্রাণীটিকে নির্দেশ করে। স্ত্রী হাইব্রিড প্রাণীটিকে বলা হয় জম। জ বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে অনুর্বর হলেও জমের প্রজনন ক্ষমতা রয়েছে। মূলত অধিক পরিমাণে দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম এই সংকরায়ন ঘটানো হয়েছিল। বর্তমানে এই প্রজাতির সংখ্যা লক্ষাধিক। তুলনামূলকভাবে ইওক এবং গরুর চেয়ে এরা আকারে বেশ বড় হয়। কাজেই শুধু এদের দুধই নয়, পাশাপাশি এদের থেকে প্রচুর মাংসের জোগানও পাওয়া যায়। অন্যদিকে, বিশাল আকৃতির দেহের জন্য এরা ইওক ও গরুর চেয়েও অধিক শক্তিশালী হয়ে থাকে। পিজলি বিয়ার গ্রিজলি বিয়ার এবং পোলার বিয়ারের সঙ্করায়নের মাধ্যমে উৎপন্ন প্রাণী পিজলি বিয়ার। এরা গ্রোলার বিয়ার নামেও পরিচিত। সাধারণত প্রাকৃতিক ভাবেই এই হাইব্রিড প্রাণীটির উদ্ভব ঘটেছে। পরিবেশ ও আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে পোলার বিয়াররা বাসস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে ক্রমাগত। আরও দক্ষিণের দিকে সরে গিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। যেখানে গিয়ে শ্বেত ভালুকদের সঙ্গে প্রণয় ঘটে ধূসর বর্ণের ভালুকদের। ফলে জন্ম হয় এই হাইব্রিড প্রাণী পিজলি বিয়ারের। এখনও পর্যন্ত আটটি পিজলি বিয়ার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেকটি একই স্ত্রী পোলার বিয়ার কর্তৃক উৎপন্ন। টাইগন পুরুষ বাঘ বা টাইগার এবং স্ত্রী সিংহ বা সিংহী তথা লায়নের সংকরায়নে উৎপন্ন প্রাণী টাইগন। লাইগারের তুলনায় এদের জনপ্রিয়তা বেশ কম। এরা দেখতে অনেকটা বাঘের মতো হলেও দেহের রং সিংহের মতো। এদের গায়ে বাঘের মতো ডোরাকাটা দাগ থাকলেও অপেক্ষাকৃত হালকা হয় বাঘের চেয়ে। পাশাপাশি ছোট বয়সে এদের গায়ে সিংহের মতো স্পট দেখা যায়, যেগুলো তারা তাদের মা সিংহীর কাছ থেকে পায়। টাইগন আকারে খুব ছোট হয়। এক বিশেষ জিনগত কারণে টাইগন বাঘ বা সিংহের তুলনায় ছোট হয়। এদের ওজন প্রায় ১০০-১৮০ কিলোগ্রামের মতো হয়ে থাকে। সিংহীদের শরীরে গ্রোথ আটকানোর এক ধরনের বিশেষ জিন থাকলেও বাঘের মধ্যে সেই জিনের বৈশিষ্ট্যটি নেই। যার ফলে হাইব্রিড প্রাণী টাইগন বামন আকৃতির হয়ে যায়। লাইগারের মতো টাইগনও সাধারণভাবে অনুর্বর হয়ে থাকে। তবে স্ত্রী টাইগনরা পুরুষ বাঘ বা সিংহের সঙ্গে মিলিত হয়ে টিটিগন ও লিটিগন নামের ভিন্ন দুটি হাইব্রিড প্রাণীর জন্ম দিতে সক্ষম। কামা দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম আন্দিজের একটি প্রাণীর নাম কামা। ১৯৯৮ সালের ১৪ জানুয়ারি দুবাইয়ের ক্যামের রিপ্রোডাকশন সেন্টারে উট এবং লামার ডিএনএ সংমিশ্রণে প্রথমবারের মতো উৎপন্ন করা হয়েছিল এই প্রাণীটিকে। এখন পর্যন্ত যার সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। এই প্রজাতিটিকে কৃত্রিম প্রজনের মাধ্যমে উৎপন্নের পেছনে উদ্দেশ্য ছিল মূলত লামার একটি নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করা। যার থেকে অধিক মাত্রায় পশমের জোগান পাওয়া যাবে। হাইব্রিড বা সংকর প্রাণী হলেও এরা প্রজনন ঘটাতে সক্ষম। পুরুষ কামা এবং স্ত্রী লামার সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রাকৃতিকভাবে এই প্রজাতিটি প্রজনন ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। উটের মতো এরাও গুল্মজাতীয় খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে। আবার একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে পারে কামা। যার জন্য একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এরা অল্প জল বা জল না পান করেও সহজেই টিকে থাকতে পারে। ম্যুলার্ড মূলত দুটি ভিন্ন প্রজাতির হাঁসের মধ্যে কৃত্রিম পদ্ধতিতে সঙ্করায়ন ঘটিয়ে উৎপন্ন করা হয় ম্যুলার্ড। পিকিং হাঁস এবং মস্কোভি হাঁসের ডিএনএর সমন্বয়ে যাদের জন্ম। প্রাকৃতিকভাবে এদের বংশ বিস্তার ঘটানো সম্ভব হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমেই এদের গর্ভধারণ করানো হয়। রসিকতা করে বলা যেতে পারে যে, এদের জন্মই হয় মূলত খাদ্য দ্রব্য বা ফুড রেসিপি হওয়ার জন্য। যার জন্য মাংসের যোগান দিতে বাণিজ্যিকভাবে খামারে ম্যুলার্ডের উৎপাদন করা হয়।
×