ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ শুভ জন্মাষ্টমী

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২৩ আগস্ট ২০১৯

 আজ শুভ জন্মাষ্টমী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রবক্তা ও প্রাণপুরুষ মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ জন্মতিথি, শুভ জন্মাষ্টমী। দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সনাতন ধর্মানুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতেই এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শান্তিহীন পৃথিবীতে শান্তি আনতেই শান্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয়গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদগীতার উদগাতা শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগের বিশৃঙ্খল ও অবক্ষয়িত মূল্যবোধের সময়ে পৃথিবীতে মানবপ্রেমের অমিত বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনই সেই বাণীর মূল বিষয়। তাই তিনি ভক্ত ও বিশ্বাসীদের কাছে প্রেমাবতার। ধর্মানুসারে, ঈশ্বরতত্ত্বের মহান প্রতীক হলেন শ্রীকৃষ্ণ। বেদে তিনি ঋষিকৃষ্ণ, দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষিকৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদবকৃষ্ণ, দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীভগবদগীতায় অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ, ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ। ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় খ্রিস্টপূর্ব ৯০০-১০০০ সালে সনাতম ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। তার জন্মের সময় এই বিশ্বব্রহ্মা- পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। তাই মানব জাতিকে রক্ষার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ মানব জাতির কাছে জীবন ধারণের অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন। শ্রীকৃষ্ণের বাণী সমগ্র বিশ্বকে আলোড়িত করছে হাজার হাজার বছর ধরে। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা হলো- সংঘর্ষ ও অন্যায়কে পরাভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই পবিত্র দিনে সকল অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অন্তর আত্মাকে জাগ্রত করার শপথ নিতে হবে। দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতায় আজ শুক্রবার উদযাপন করা হচ্ছে মহাবতার শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাদের সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ জাতীয় সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হবে এবং বেতার-টেলিভিশনে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। আজ বিকেলে ঢাকার ঐতিহাসিক ঢাকেশ্বরী মেলাঙ্গন থেকে বের করা হবে বর্ণাঢ্য-মনোলোভা পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী মিছিল। শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদযাপনে বিশ্বের হিন্দু সম্প্রদায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। সারাদেশে অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে, গীতাযজ্ঞ, জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা, কৃষ্ণপূজা, আলোচনা সভা, কীর্তন, আরতি, প্রসাদ বিতরণ, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ও কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গীতিনৃত্য, নাটক প্রভৃতি। মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির দুইদিনের কেন্দ্রীয় জš§াষ্টমী উৎসব আজ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে শুরু হচ্ছে। আজ সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, বিকেল ৩টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির সংলগ্ন পলাশীর মোড় থেকে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা এবং রাতে কৃষ্ণপূজা অনুষ্ঠিত হবে। শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধন করবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বিশেষ অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় এমপি হাজী মোঃ সেলিম এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টায় ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে আলোচনা সভা ও সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন উপস্থিত থাকবেন। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা আজ থেকে স্বামীবাগ আশ্রমে অনুষ্ঠিত হবে। রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রমে বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দির থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। এছাড়া রাজধানীর মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, স্বামী ভোলানন্দ গিরি আশ্রম, প্রভু জগবন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ, রাধামাধব জিও দেব বিগ্রহ মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, রাধা গোবিন্দ জিও ঠাকুর মন্দির, শিব মন্দির, রামসীতা মন্দির ও মাধব গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন মন্দির, পূজামন্ডপ ও ধর্মীয় সংগঠন জš§াষ্টমী উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। পৃথক বিবৃতিতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিত্রয় মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত বীরউত্তম, ঊষাতন তালুকদার ও হিউবার্ট গোমেজ, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মন্ডল, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতিত্রয় পংকজ সাহা, রাহুল বড়ুয়া ও রবার্ট নিক্সন ঘোষ এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাপস বল জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
×