ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশকে শিরোপার দাবিদার করতে চান ডোমিঙ্গো

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ১৯ আগস্ট ২০১৯

বাংলাদেশকে শিরোপার দাবিদার করতে চান ডোমিঙ্গো

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নতুন কোচ ঘোষণার একদিন হয়ে গেছে। কোচ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকান রাসেল ডোমিঙ্গোর নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তিনি বুধবার থেকে জাতীয় দলের দায়িত্বও বুঝে নেবেন। এর আগে ডোমিঙ্গোর পরিকল্পনা আসলে কী? তা ডোমিঙ্গোর মুখ থেকে জানতেই যেন যোগাযোগের অন্ত নেই। ডোমিঙ্গোও নিজের পরিকল্পনা জানাচ্ছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, বাংলাদেশ দলকে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে শিরোপার দাবিদার করে তুলতে চান এই কোচ। বাংলাদেশকে ‘পরাশক্তি’ হিসেবেও গড়ে তুলতে চান। শনিবার প্রধান কোচ হিসেবে ডোমিঙ্গোর নাম ঘোষণা করার সঙ্গে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েও দেন দল নিয়ে ডোমিঙ্গোর ভাবনা। তিনি জানান, ও’ (ডোমিঙ্গো) বলেছিল, ‘বাংলাদেশে এসে যত বড় দেশই হোক না কেন তারজন্য জেতা কঠিন। সামনে বিশ্বকাপ হবে ভারতে। বাংলাদেশেরও শিরোপার অন্যতম দাবিদার হওয়া উচিত। ভারতের পর উপমহাদেশে বাংলাদেশই সবচেয়ে বড় শক্তি।’ এই ধরনের চিন্তা তার। আমরাও বিশ্বাস করি, আগামী (ওয়ানডে) বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অন্যতম দাবিদার হওয়া উচিত।’ বিসিবির মেইল বার্তায় ডোমিঙ্গো এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে যে নতুন তারকা ক্রিকেটার তৈরি করতে চান তাও জানান। বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আমার জন্য অনেক বড় এক সম্মান। গভীর আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অগ্রগতি অনুসরণ করেছি আমি এবং যে লক্ষ্য পূরণের সামর্থ্য তাদের আছে, সেটিতে সহায়তা করার সুযোগ পেয়ে আমি দারুণ রোমাঞ্চিত।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘দলের এখনকার ক্রিকেটারদের উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সহায়তা করতে চাই আমি। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিভার ভা ার থেকে নতুন উজ্জ্বল তারকাদের উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে চাই।’ বাংলাদেশকে সত্যিকার পাওয়ার হাউসও বানাতে চান ডোমিঙ্গো। ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে আরও বিস্তারিত জানান তিনি। জাতীয় দলে কখনই না খেললেও কোচ হিসেবে সুনাম কুড়ানো ৪৪ বছর বয়সী এ প্রোটিয়া কোচ বলেন, ‘অনুর্ধ-১৫ থেকে শুরু করে একটা জাতীয় দলের সব পর্যায়ের ক্রিকেটে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে আমার। সুতরাং আমার মনে হয় সবগুলো শাখা-প্রশাখায় একটা সংযোগ ঘটাতে পারব। জাতীয় দল অবশ্যই অগ্রাধিকারে থাকবে। তবে এর নিচের দলগুলোতে কি হচ্ছে সেদিকেও নজর রাখা জরুরী। কারণ এই দলগুলো থেকেই ভবিষ্যতের খেলোয়াড়রা উঠে আসবে। কোথায় জাত খেলোয়াড়দের খুঁজে পাওয়া যাবে সেটা যদি বুঝে ওঠা যায় সেদিকেই এগিয়ে যাওয়া ভাল।’ তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দিয়ে, তারকা বানানোর চেষ্টা করে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সামনে চাপ তৈরি করতে চান। একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে চান ডোমিঙ্গো, ‘বাংলাদেশ দলে দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে। তবে তরুণদের দিকটাও বিবেচনায় নেয়া উচিত। তাতে সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর কিছুটা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। সঙ্গে এই তরুণদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার সুযোগও করে দিতে হবে। কারণ একটা সময় এরাই তো দলটাকে চালাবে।’ তিনি শুধু জাতীয় দল নয়, বয়সভিত্তিক দল, হাই পারফর্র্মেন্স দলের সঙ্গেও একটা যোগসূত্র তৈরি করতে চান, ‘হাই পারফর্মেন্স দলের কোচের সঙ্গে কাজ করাও জরুরী। জানতে হবে সেই দলের সেরা খেলোয়াড় কারা। অনুর্ধ-১৯ দলটা চারবার ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে। ভারতকে বেশ চাপে রেখেছে। অবশ্যই সে দলে দারুণ কিছু প্রতিভা আছে। তাদের খুঁজে এনে জাতীয় দলের খুব কাছাকাছি রেখে যতœ নেয়া উচিত।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের ভিত্তিটা আরও বড় করা জরুরী। খেলোয়াড়দের যতœ নেয়া প্রয়োজন। তাতে আগামী ৫-৬ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট একটা ভীষণ ইতিবাচক ফল পাবে আশাকরি।’ এবার বিশ্বকাপে আশানুরূপ নৈপুণ্য দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ দল। ১০ দলের মধ্যে অষ্টম স্থান পেয়েছে। ডোমিঙ্গোর তত্ত্বাবধানে ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ ও ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ডোমিঙ্গোর খুব ভাল করেই জানা আছে, কিভাবে বৈশ্বিক আসরে ভাল করতে হয়। আর তাই ডোমিঙ্গো বলেন, ‘বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা দেখে বেশ আনন্দ পেয়েছি। অনেকগুলো ম্যাচ ছিল খুব কাছাকাছি। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটা রানআউট মিস হওয়াটা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিল। সেটা না হলে বাংলাদেশ হয়তো সেমিফাইনাল খেলত। হারের ব্যবধানগুলো খুব ছোট ছোট ছিল। যেগুলো মানসিক শক্তি দিয়ে কাটিয়ে ওঠা যেত। বিশ্বকাপ শেষ, ভাবতে হবে পরের আসর নিয়ে। সেই আসরে কি করে ভাল করতে হয় সেটাই এখন মুখ্য।’ দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে কখনও কাজ করেননি ডোমিঙ্গো। এবার উপমহাদেশের মাটিতে প্রথমবার কাজ করবেন। তবে ডোমিঙ্গোর আশপাশে নিজ দেশের কোচিং স্টাফই থাকছে। ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিল ম্যাকেঞ্জি আগে থেকেই আছেন। পেস বোলিং কোচ হিসেবে স্বদেশী পেসার চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট নিয়োগ পেয়েছেন। ফিল্ডিং কোচ হিসেবে রায়ান কুকও আছেন। তাই ডোমিঙ্গোর তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৫ সেপ্টেম্বর একমাত্র টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচ দিয়েই ডোমিঙ্গোর দুই বছরের মাঠের লড়াইয়ে সাফল্য পাওয়ার যাত্রা শুরু হয়ে যাবে। এর আগে দলের সঙ্গে ১৫দিন কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। ডোমিঙ্গোর বাংলাদেশেও তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এখন দুই বছরের যে চুক্তি হয়েছে, তাতে পরিকল্পনা মতো কাজ করা গেলেই হলো। ডোমিঙ্গোর সামনে বৈশ্বিক আসর বলতে থাকছে ২০২০ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি২০ বিশ্বকাপ। এ আসরে আশানুরূপ নৈপুণ্য মিললে সঙ্গে যে ম্যাচ বা সিরিজগুলো খেলবে বাংলাদেশ, তাতে সাফল্য মিললে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত ডোমিঙ্গোকেই কোচ হিসেবে রাখা হবে। কোচেরও সেই দিকেই দৃষ্টি আছে। বলেছেন, ‘সবকিছু খাপে খাপে মিলে গেলে বাংলাদেশ একদিন ক্রিকেটের সত্যিকারের পাওয়ার হাউস হয়ে উঠবে। আর এই বিষয়টাই আমাকে বেশ শিহরিত করে।’ সত্যিকারের পরাশক্তি দল হয়ে উঠতে হলে তো বিশ্বকাপে সেরা সাফল্যই পেতে হবে। ডোমিঙ্গোও সেই সাফল্য এনে দিতে চান। বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে শিরোপার দাবিদার করেই তুলতে চান। পরাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
×