ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় ঈদ আমেজে মঞ্চস্থ ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’

প্রকাশিত: ১১:২৩, ১৮ আগস্ট ২০১৯

শিল্পকলায় ঈদ আমেজে মঞ্চস্থ ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ হয়েও যেন হয়নি শেষ। তাই এখনও বইছে ঈদের আমেজ। রয়ে গেছে উৎসবের রেশ। নানা অনুষঙ্গের মাঝে শহরবাসী খুঁজে নিচ্ছেন বিনোদন। এমন আবহের মাঝে শুক্রবার থেকে সচল হয়েছে ঢাকার নাট্যাঙ্গন। আর যারা মঞ্চনাটক দেখতে পছন্দ করেন তারা সুযোগটির সদ্ব্যবহার করছেন। সেই সব দর্শকরা শনিবার সন্ধ্যায় দেখার সুযোগ পেয়েছে সম্প্রতি মঞ্চে আসা নতুন একটি নাটক। এদিন শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে তিন নর-নারীর মনোদৈহিক টানাপোড়েনের গল্প ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’। এটি ছিল প্রযোজনাটির তৃতীয় প্রদর্শনী। বুদ্ধদেব বসুর লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত নাটকটি মঞ্চে এনেছে বিকল্প নাট্যচর্চার তাগিদে গড়া নতুন নাট্যদল আপস্টেজ। প্রযোজনাটির নাট্যরূপ দেয়ার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন তরুণ নির্দেশক সাইফ সুমন। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক সাইফ সুমন বলেন, দ্রুত বদলে যাচ্ছে মানুষ ও সমাজ। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা, খামাখা ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কিন্তু মানবিকতা, সামাজিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন কি হচ্ছে! মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্রের বাহ্যিক পরিবর্তন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু অন্তর্গত পরিবর্তন? এক্ষেত্রে সমাজের সবচেয়ে জটিল স্তরের বাসিন্দা মধ্যবিত্ত শ্রেণী। সেই মধ্যবিত্ত দাম্পত্য সম্পর্কের মানসিক ও জৈবিক টানাপোড়েন এবং তাদের অব্যক্ত মনোকথনই এই নাটকের উপজীব্য। শরীর-মনের কাহিনীই এই নাটকের আখ্যান। যে কথাগুলো বলা দরকার অথচ বলা হয় নাÑ সে কথাগুলোই প্রকাশের চেষ্টা করেছি নাটকের মাধ্যমে। এ কারণেই এটি প্রাপ্তমনস্কদের নাটক। বলা যায় উপন্যাসের প্রতি অনুগত থেকেও এর মূল সুর থেকে বেরিয়ে এসেছি। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি বুদ্ধদেব বসুর আলোচিত-সমালোচিত একটি উপন্যাসÑ যা অশ্লীল ও সমাজ বিরোধী আখ্যায় আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছিল। এমনকি পা-ুলিপি পর্যন্ত ধ্বংসের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ১৯৬৯-৭৩ পর্যন্ত মামলা চালিয়ে উচ্চ আদালতে গিয়ে খারিজ হয় অভিযোগ। কোন কালেই মানুষ প্রচলিত ধারণার বাইরের কিছুকে সহজভাবে নিতে পারেনি। এখনও কতটুকুই বা পারে! রাত ভরে বৃষ্টি নাটকটি বিয়ে ও সংসার নামক যৌথ প্রতিষ্ঠানের জটিল পাকচক্রে আবদ্ধ তিন নর-নারীর মনোদৈহিক টানাপোড়েনের গল্প। মধ্যবিত্ত সমাজজীবনে স্বামী-স্ত্রী বা বিবাহিত নারী পুরুষের দাম্পত্য সম্পর্কের নানা সূক্ষাতিসূক্ষ জটিলতা, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সংশয়ী প্রকাশও বটে। মনিমালা, অংশু ও তাদের বন্ধু জয়Ñ এখানে শুধুই তিনটি চরিত্র নয়। প্রচলিত যৌন নৈতিকতার প্রথাগত মূল্যবোধের সঙ্গে ক্রমাগত লড়ে চলা মানুষও তারা। যদিও চরম এবং অন্তর্গূঢ় এই জটিল সম্পর্কের শেষে তাদের উপলব্ধিটি হচ্ছেÑ ভালবাসা জরুরী, স্বামী-স্ত্রী জরুরী, বেঁচে থাকাটা জরুরী। নাটতে মনিমালা চরিত্রে রূপ দিয়েছেন কাজী রুকসানা রুমা। অংশ ও জয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রশান্ত হালদার ও সাথী রঞ্জন দে। অসিত কুমারের সঙ্গীত পরিকল্পনায় আলোক পরিকল্পনা করেছেন অম্লান বিশ্বাস। বিভিন্ন দলের সদস্য নিয়ে গড়া আপস্টেজ দলটির প্রধান সম্পাদক প্রশান্ত হালদার বলেন, আপস্টেজ একটি নাটকের দল বা প্ল্যাটফর্ম বটে, তবে রেপাটরিও নয়, গ্রুপ থিয়েটারভিত্তিক দলও নয়Ñ এটি একটি বিকল্প প্রয়াস। এমন বিকল্প থিয়েটার বা অলটারনেটিভ থিয়েটারই হয়তো ভবিষ্যতের কোন এক কালে মূল হয়ে দাঁড়াবে। বিভিন্ন নাট্যদলের ছয় সদস্য মিলে গড়ে উঠেছে এই নতুন নাট্যদল।
×