ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উদীচীর আয়োজনে রবীন্দ্র নজরুল সুকান্তজয়ন্তী

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২৭ জুলাই ২০১৯

 উদীচীর আয়োজনে রবীন্দ্র নজরুল সুকান্তজয়ন্তী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা সাহিত্যের তিন মহীরুহ -বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং সাম্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য। যারা অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদী চেতনার আধার, মৌলবাদবিরোধী লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। এক আয়োজনে তিন মহীরুহের জয়ন্তী উদযাপন করল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। শুক্রবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদযাপন করা হয় এই তিন মহান সাহিত্যিকের নানা সৃষ্টি, তুলে ধরা হয় বর্তমান সময়ে তাদের রচনাবলীর প্রাসঙ্গিকতা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন উদীচী গুলশান শাখার নৃত্যশিল্পীরা। এর পর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি নিবাস দের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক দীপ্তি রানী দত্ত। সফিউদ্দিন আহমদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সুকান্ত এই তিন মহাপুরুষই বাঙালীর মানস গঠনে অপরিহার্য ভূমিকা রেখেছেন। তাদের রচনা সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, সাম্রাজ্যবাদসহ সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং সাম্যবাদী সমাজ গঠনের সংগ্রামে আলোকবর্তিকা হিসেবে আমাদের পথনির্দেশ করে চলেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকর্ম নিয়ে আলোচনায় দীপ্তি রানী দত্ত বলেন, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এই উপমহাদেশের সত্যিকার আধুনিক শিল্পের পথিকৃৎ। ভারতবর্ষের শিল্পশিক্ষার রাজনীতির উত্থানপর্বের শেষ সময়ে শুরু হয় রবীন্দ্রনাথের শিল্পচর্চার। তার রচনায় একদিকে যেমন উঠে এসেছে স্বদেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভালবাসা ও মমত্ব বোধ তেমনি উঠে এসেছে সমাজের নানা সঙ্কটের নির্মোহ চিত্র এবং এ থেকে উত্তরণের উপায়। কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আলোচনায় বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, বহুমাত্রিক প্রতিভার উজ্জ্বল উদাহরণ ছিলেন নজরুল। কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ছড়া, ব্যক্তিগত রচনা, চিঠিপত্র, সঙ্গীত- সকল ক্ষেত্রেই নিজের অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনিই প্রথম শিল্পী যিনি রাজনীতিকে শিল্পে রূপান্তরিত করেছেন। সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে ওপর আলোচনায় অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী বলেন, এই মহান কবির মৃত্যুর কয়েক দশক পেরিয়ে গেলেও তার কাক্সিক্ষত শোষণহীন, সাম্যবাদী সমাজ এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। শোষকশ্রেণী তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে ব্যর্থ করে দিতে। তাই শোষকের সকল শৃঙ্খল ভেঙ্গে, মুক্তির পথ তৈরি করতে চাই গণজাগরণ। শোষণের বিরুদ্ধে শোষিতকে সচেতন করা এবং সংগ্রামে শামিল করাই সাম্যবাদীদের প্রধান কর্তব্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়ার্ধে কথায় ও কবিতায়, সঙ্গীত, নৃত্যে মহান তিন কবির অনবদ্য সৃষ্টিসমূহ মঞ্চায়ন করেন উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা। এ পর্বে নানা পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ, মিরপুর, গেন্ডারিয়া, কাফরুল, উত্তরা, সাভার, তুরাগ, গুলশান, বাড্ডা, কল্যাণপুর এবং তেজগাঁও শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীরা।
×