ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলেধরার গুজব

রেণু হত্যায় রিয়া খাতুন নামে এক নারী আটক

প্রকাশিত: ১০:১১, ২৬ জুলাই ২০১৯

 রেণু হত্যায় রিয়া খাতুন নামে  এক নারী  আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাড্ডায় ছেলেধরার গুজব রটিয়ে তসলিমা বেগম রেণুকে (৪৩) পৈশাচিক কায়দায় হত্যার অভিযোগে রিয়া খাতুন নামে এক নারীকে আটক করেছে বাড্ডা থানা পুলিশ। এদিকে এ হত্যার ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতারের পর ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রিয়া খাতুনকে আটক করে পুলিশ। ডিসি জানান, ওই ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা। তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিয়ার কথার সঙ্গে ভিডিও ফুটেজ ও হৃদয়ের কথার মিল খোঁজা হচ্ছে। রিয়ার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে। এদিকে বাড্ডা থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়াছিন গাজী জানান, বিকেল তিনটার দিকে রিয়াকে ওই স্কুল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। ঘটনার সঙ্গে তার মিল খোঁজা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে রেণুকে পিটিয়ে হত্যার এ হত্যাকা-ের প্রধান অভিযুক্ত ইব্রাহিম হোসেন হৃদয়কে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতারের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য মিলেছে। মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেফতারের পর বুধবার আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। হৃদয় পুলিশকে জানায়, সেসহ ১০ থেকে ১৫ জন লোক স্কুলটির দ্বিতীয় তলার প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে টেনেহিঁচড়ে রেণুকে নিচে নামিয়ে আনেন। এরপর তাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। তার আগে রেণুকে ছেলেধরা প্রথমে যে জানিয়েছেন তার মধ্যে কয়েকজন নারী ছিল। সেই নারীদের দেখলে হৃদয় চিনতে পারবে। হৃদয়ের দেয়া তথ্যমতে রিয়াকে আটক করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সেদিন ওড়না পরিহিত অবস্থা ওই নারীও রেণুকে টানা-হেঁচড়া করে। ওই নারীর ডাকে সাড়া দিয়েই সেদিন নারকীয় তা-ব চালানো হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছে হৃদয়। এদিকে বুধবার রাতে বাড্ডার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতারকৃত ৫ জনকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করলে আদালত প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ডকৃতরা হচ্ছে, মুরাদ (২২), সোহেল রানা (৩০), বিল্লাল হোসেন (২৮), আসাদুল ইসলাম (২২) ও রাজু আহমেদ (২৩)। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা লিয়াকত আলী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাড্ডার পুলিশ পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের খুঁজে বের করতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে গ্রেফতারকৃত ৫ আসামিদের আদালতে হাজির করেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী মাইদুল ইসলাম, রেজাউল হক রিপনসহ আরও অনেকে রিমান্ডের দাবিতে শুনানি করেন। আসামি মুরাদ ও বিল্লালের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। অন্য ৩ আসামির কোন আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে বিচারক মোঃ তোফাজ্জল হোসেন তাদের তিন দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এ পর্যন্ত রেণু হত্যা মামলায় ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। এর মধ্যে ১১ জনকে রিমান্ডে পাঠালেন আদালত। এক আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক জানান, গণপিটুনির ভিডিও ফুটেজ দেখে এই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাদের তিনদিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। রেণু হত্যা মামলায় এই নিয়ে মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হল বলে জানিয়েছে পুলিশ। উল্লেখ্য, গত শনিবার সকালে উত্তর-পূর্ব বাড্ডার বাড্ডা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেধরা সন্দেহে তাসলিমা বেগম রেণুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্কুলটিতে নিজের চার বছরের মেয়েকে ভর্তি করানোর জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন রেণু। তিনি রাজধানীর মহাখালীতে চার বছরের মেয়ে ও মাকে নিয়ে থাকতেন। দুই বছর আগে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। তার ১১ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে। ছেলেটি বাড্ডায় বাবার সঙ্গে থাকে। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই নিহত রেণুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বাড্ডা থানায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
×