ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জয় দিয়েই শুরুর প্রত্যাশা তামিমদের

প্রকাশিত: ১০:৪০, ২৫ জুলাই ২০১৯

জয় দিয়েই শুরুর প্রত্যাশা তামিমদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শ্রীলঙ্কার আবহাওয়ার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। কখনও বৃষ্টি, আবার কখনও রোদে পুড়ে ছারখার অবস্থা! শুক্রবার বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু হবে। সিরিজের প্রথমদিন, প্রথম ম্যাচ বৃষ্টির তোপে পড়ার সম্ভাবনা থাকছে। যদিও এখন কড়া রোদ আছে। কিন্তু ম্যাচের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ম্যাচের দিন বৃষ্টি থাকুক আর রোদ, ডেথ বোলিংয়ে বাংলাদেশের দুর্বলতা রয়ে গেছে। আর তাই শেষ মুহূর্তে দলে পেসার শফিউল ইসলামকে নেয়া হয়েছে। ইন্টারনেট দুনিয়ায় আবহাওয়া ওয়েবসাইটগুলো ঘেটে যা বোঝা যাচ্ছে সকালে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায়। দিবারাত্রিতে হবে ম্যাচ। যখন ম্যাচ শুরু হবে তখন খানিক মেঘ জমা থাকলেও বৃষ্টি থাকবে না। তবে বিকেলের দিকে ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই আবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। রাতে আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত আবার বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। বৃষ্টি আর রোদের খেলা হবে তা বোঝাই যাচ্ছে। তবে ম্যাচে এর প্রভাব অনেক বেশি পড়বে না তাও ইঙ্গিত মিলছে। আবার ওয়েবসাইটগুলোর তথ্য অনুযায়ী বৃষ্টি শেষ পর্যন্ত না হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। শ্রীলঙ্কার আবহাওয়া বলে কথা। যে আবহাওয়া নিয়ে ভবিষ্যত বাণী করা অনেকাংশেই কঠিন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ম্যাচ ছিল। কিন্তু তা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। দুই দলই সমান ১ পয়েন্ট করে পায়। এই ১ পয়েন্ট পেয়ে শ্রীলঙ্কার ভালই লাভ হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট তালিকার ছয় নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করেছে। বাংলাদেশ সেখানে এক পয়েন্ট কম পেয়ে আট নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করেছে। বাংলাদেশ যে পয়েন্ট তালিকার এত নিচে থেকেছে, সেটিতে তলানিতে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করাও ধরা হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান যে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলে বিশ্বকাপ খেলেছে। যে আটটি দল বিশ্বকাপে সরাসরি খেলেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশই সবার নিচে থেকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। এমনভাবে বিদায় নেয়ায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন ব্যর্থতাতেই ডুবে থেকেছে। অথচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটিতে বাংলাদেশের জয়ের আশা ছিল। যদি বাংলাদেশ প্রত্যাশামতো জিততে পারত তাহলে পয়েন্ট তালিকার ছয় নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করতে পারত। তখন বিশ্বকাপ নৈপুণ্য উজ্জ্বলই দেখাত। কিন্তু তা হয়নি। এবার বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা পরস্পরের বিপক্ষে খেলবে ওয়ানডে সিরিজ। সিরিজ হবে শ্রীলঙ্কায়। এ জন্য দুই দলই নিজেদের সেরা দল তৈরি করার চেষ্টা করেছে। তবে এই সিরিজ থেকেই শ্রীলঙ্কা ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের জন্য পথ চলতে চায়। আর তাই ২২ সদস্যের দলও ঘোষণা করেছে। আছেন সম্ভাব্য সবাই। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি শেষ হতেই আবার লাসিথ মালিঙ্গার ওয়ানডে ক্রিকেট ক্যারিয়ারও শেষ হবে। তিনি ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলবেন। এই ম্যাচটি তাই শ্রীলঙ্কানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মালিঙ্গাকে জয় উপহার দিয়েই ম্যাচটি শেষ করতে চায় শ্রীলঙ্কা। তাতে করে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়েও থাকা হবে। নিজ দেশে হবে সিরিজ। উইকেট ভালভাবেই চেনা আছে। এই সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজে শুভ সূচনাও করতে চায় শ্রীলঙ্কা। আবার র‌্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে চায়। যদিও ফল যাই হোক র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের এক ধাপ নিচে অষ্টম স্থানেই থাকবে শ্রীলঙ্কা। এরপরও শুরুটা ভাল হলে সবারই জানা শেষটাও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লঙ্কানরা তাই করে দেখাতে চায়। এ সিরিজটিতে শ্রীলঙ্কা এগিয়েই থাকছে। নিজেদের মাটিতে খেলা। আবার সেরা দলই বাছাই করা হয়েছে। সম্ভাব্য সেরা একাদশ নিয়েও নামবে শ্রীলঙ্কা। সেই তুলনায় বাংলাদেশ দল সিরিজে খেলতে নামার আগেই দুর্বল হয়ে থাকছে। প্রস্তুতি ম্যাচে যদিও ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয়া গেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেননি। বাংলাদেশ দলেও আবার নিয়মিত ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নেই। ইনজুরিতে শেষ মুহূর্তে ছিটকে পড়েছেন। যিনি দলকে, দলের ক্রিকেটারদের সবসময় যে কোন পরিস্থিতিতে উজ্জীবিত করতে পারেন। তিনি নেই। বিশ্বকাপ মাতানো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও এই সিরিজে খেলবেন না। তিনি ছুটি নিয়েছেন। আবার নেই এই মুহূর্তে দেশের সেরা পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। তিনিও ইনজুরিতে ছিটকে পড়েছেন। লিটন কুমার দাসও বিয়ের জন্য ছুটি নিয়েছেন। ব্যাট হাতে তাই তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৯১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলা মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান রুম্মন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজদেরই যা করার করতে হবে। সাকিব একাদশে থাকা মানে দুইজনের কাজ একজন করা। কিন্তু তা হচ্ছে না। তাই ব্যাটিংয়ে যেমন একজন ব্যাটসম্যান, বোলিংয়ে তেমন একজন স্পেশালিস্ট স্পিনার নিয়ে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। বোলিংয়ে তাই মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, সৌম্য সরকার, তাইজুল ইসলাম, মিরাজ, মোসাদ্দেকই ভরসা। আবার বিশ্বকাপে বোলিং করতে না পারলেও প্রস্তুতি ম্যাচে ৩ ওভার বোলিং করেছেন মাহমুদুল্লাহ। তিনিও প্রয়োজনে কয়েক ওভার বোলিং করতে পারবেন। তবে এখন শফিউল দলে যুক্ত হয়ে যাওয়ায় প্রায় নিশ্চিতই হয়ে যাচ্ছে ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর আবার ওয়ানডে খেলার সৌভাগ্য ধরা দিতে পারে তার। বাংলাদেশ দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন বুধবার কলম্বোতে সেই ইঙ্গিতই দিয়ে রেখেছেন। ডেথ বোলিংয়ে শফিউলকেই বিবেচনায় এনেছেন। আর তাইতো ১৪ সদস্যের দল শেষ মুহূর্তে শফিউলকে দিয়ে ১৫ সদস্যে পরিণত হয়ে গেছে। সুজন জানিয়েছেন, ‘যেরকম গরম, আর আমাদের ম্যাচটা যেহেতু কাছাকাছি ২৬-২৮, একটা জায়গাও খালি ছিল, ১৫ জন আমরা নেইনি তখনই, আমার মনে হয় একটা ফাস্ট বোলার আসলে দলে দরকার। এমন উইকেটে শফিউল অনেক অভিজ্ঞ। ডেথ বোলিংয়ে আগে থেকে একটা চিন্তা তো আছেই। আশা করছি ডেথ বোলিংয়ে সে ভাল করবে। বিপিএলেও সে ভাল করে থাকে, সে ফিট থাকলে একটা বিকল্প তৈরি থাকল।’ আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ইতিহাস বলছে এ স্টেডিয়ামে স্পিনাররাই বেশি সাফল্য পেয়েছেন। শ্রীলঙ্কার সাবেক কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরলিধরন যেমন এই স্টেডিয়ামে ৭৫ উইকেট নিয়ে আছেন উইকেট শিকারে শীর্ষে। তেমনি দ্বিতীয় স্থানটিও এক স্পিনারের (সনথ জয়সুরিয়া-৬০ উইকেট)। শ্রীলঙ্কার বাইরের বোলারদের মধ্যে ভারতের সাবেক স্পিনার হরভজন সিং সবচেয়ে বেশি ৩৩ উইকেট নিয়েছেন। তার মানে উপমহাদেশের চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী উইকেটে স্পিনারদের প্রাধান্য থাকছে। আর এখানে সাকিব না থাকায় হাল ধরবেন কে? তাইজুলকে নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে ৬ ওভারে ৪২ রান দিয়ে হতাশ করেছেন। মিরাজ ৪ ওভারে ২৫ রান, মোসাদ্দেক ৬ ওভারে ২৫ রান এবং মাহমুদুল্লাহ ৩ ওভারে ১৫ রান দিয়েছেন। প্রস্তুতি ম্যাচে স্পিনাররা একটি উইকেটও শিকার করতে পারেননি। বাংলাদেশ দল স্পিনে পিছিয়েই থাকছে। তবে প্রস্তুতি ম্যাচ আর মূল ম্যাচতো এক নয়। সেখানে চাপটাও অন্যরকম। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের চাপ প্রয়োগ করে তাইজুল, মিরাজ, মোসাদ্দেক, মাহমুদুল্লাহরা স্পিন ঘূর্ণি দেখিয়েও দিতে পারেন। বাংলাদেশ স্পিনাররা ঝলক দেখাতে পারবেন কিনা শুক্রবারই তা বোঝা হয়ে যাবে। তবে শ্রীলঙ্কার আবহাওয়ায় বৃষ্টি যে ম্যাচে খানিক হলেও প্রভাব দেখাতে পারে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এ মুহূর্তে অবশ্য প্রচুর গরম। আর তাতে করে শফিউলকে দলেও নেয়া হয়েছে। শুক্রবার বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই ডেথ বোলিংয়ে বিবেচনায় শফিউলকে একাদশেও দেখা যেতে পারে। ওয়ানডেতে ৫৬ ম্যাচে ৬৩ উইকেট নেয়া শফিউল যে ম্যাচেই সুযোগ পান নিজেকে মেলে ধরতে পারলেই হলো। বিপিএলে জৌলুস ছড়িয়েছেন। এবার যেহেতু সুযোগ মিলেছে, জাতীয় দলেও বোলিং ঝলক দেখিয়ে দিতে পারলেই হলো। তাতে দলেরই উপকার হবে। শুক্রবার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই যদি বাংলাদেশ জিতে যায়। সিরিজেও এগিয়ে যাবে।
×