
ছবি: সংগৃহীত
লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামির ক্লাব বিশ্বকাপে নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন এবার দুঃস্বপ্নে রূপ নিল। সাবেক ক্লাব প্যারিস সেন্ট-জার্মেই (পিএসজি)-এর বিপক্ষে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হলো আর্জেন্টাইন মহাতারকার দলকে। মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়ামে রোববার রাতে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে মেসি, সার্জিও বুসকেটস এবং জর্ডি আলবার মতো তারকারা মাঠে থাকলেও পিএসজির আক্রমণের সামনে ইন্টার মায়ামি দাঁড়াতেই পারেনি।
খেলা শুরুর মাত্র ছয় মিনিটেই গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে ইন্টার মায়ামি। এরপর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা একে একে আরও তিনবার জাল কাঁপিয়ে ম্যাচের প্রথমার্ধেই নিজেদের জয় নিশ্চিত করে নেয়। পিএসজির হয়ে জোয়াও নেভেস ছয় মিনিটের মাথায় হেডে প্রথম গোলটি করেন। এরপর ৩৯ মিনিটে তারই দ্বিতীয় গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে ইন্টার মায়ামির ডিফেন্ডার টমাস অ্যাভিলেসের আত্মঘাতী গোল পিএসজিকে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেয়। আর প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে চতুর্থ গোলটি করেন আশরাফ হাকিমি।
এই ম্যাচটি ছিল মেসির জন্য অত্যন্ত আবেগঘন, কারণ ২০২৩ সালে যে পিএসজি থেকে তাকে বিতর্কিতভাবে বিদায় নিতে হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেই তিনি এই প্রথম মাঠে নামেন। অনেকেই এটিকে মেসির 'রিভেঞ্জ ম্যাচ' হিসেবে দেখছিলেন, কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। ইন্টার মায়ামির পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক, যেখানে খেলোয়াড়রা কেবল পিএসজির পেছনে ছুটে বেড়িয়েছেন এবং গোল বাঁচাতে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন।
ম্যাচের পর পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে বলেন, "আমরা প্রায় নিখুঁত একটি ম্যাচ খেলেছি। অনেক সুযোগ তৈরি করেছি, যদিও আরও উন্নতির জায়গা আছে।"
দ্বিতীয়ার্ধে মেসি কিছুটা সচল হলেও ম্যাচের গতিপ্রবাহে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তার একটি হেড ফিরিয়ে দেন পিএসজি গোলরক্ষক দোন্নারুম্মা, আর শেষদিকে তার ফ্রি-কিক সরাসরি দেয়ালের বাধা পেরোতে পারেনি। গ্যালারিতে 'মেসি! মেসি!' স্লোগান ভেসে এলেও তা ইন্টার মায়ামির জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি।
ইন্টার মায়ামির সবচেয়ে কাছাকাছি সুযোগটি পেয়েছিলেন লুইস সুয়ারেজ। কিন্তু পোস্টের কাছ থেকে শট না নিয়ে তিনি বল মিস করে বসেন। এই হতাশা এতটাই ছিল যে, সুয়ারেজ রাগে পানির বোতল লাথি মারেন – এই একটি দৃশ্যই যেন ইন্টার মায়ামির রাতের করুণ হাল দেখিয়ে দেয়।
ম্যাচ শেষে ইন্টার মায়ামির কোচ হ্যাভিয়ের মাচেরানো বলেন, "আমি আমার খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত। আজ স্পষ্ট বোঝা গেছে দুই দলের পার্থক্য, তবে ফুটবল আমাদের সুযোগ দিয়েছিল বিশ্বের সেরা দলের মুখোমুখি হওয়ার।"
এই জয়ের ফলে পিএসজি ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে ফ্লামেঙ্গো ও বায়ার্ন মিউনিখের মধ্যকার বিজয়ী দল। আর মেসির জন্য, এটি আরেকটি বড় মঞ্চে অপূর্ণতার গল্প হয়ে থাকল, এবং মায়ামির জন্য, মূল্যবান অভিজ্ঞতার বাইরে আর কিছু নয়।
সাব্বির