ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আলোচনার তুঙ্গে নেইমার

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২৪ জুলাই ২০১৯

আলোচনার তুঙ্গে নেইমার

আবারও বার্সিলোনায় ফিরছেন নেইমার? এই প্রশ্নে উত্তাল বিশ্ব ক্লাব ফুটবলে। তার ইঙ্গিতও মিলছে। দলের সাবেক তারকা ফরোয়ার্ডকে ফিরিয়ে আনার জন্য বার্সাও মরিয়া। প্যারিস সেইন্ট জার্মেই থেকে নেইমারকে ফিরিয়ে আনার জন্য একরকম তাজ্জব অফার করেছে কাতালান ক্লাবটি। হ্যাঁ, তাজ্জবই বটে! ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের সঙ্গে দুই তুখোড় খেলোয়াড়ের বিনিময়ে নেইমারকে কিনতে চাইছে বার্সা। সেজন্য পিএসজিকে মোট ছয় খেলোয়াড়ের তালিকা দেওয়া হয়েছে বাছাইয়ের জন্য। যে তালিকায় রয়েছেন ফিলিপ কুতিনহো, উসমান ডেম্বেলে, ইভান রাকিটিচ, স্যামুয়েল উমিতিতি, নেলসন সেমেডো এবং ম্যালকম। এই ছয় জনের মধ্যে থেকে যে কোন দু’জনকে বেছে নিতে পারবে পিএসজি। বিনিময়ে ছেড়ে দিতে হবে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারকে। গত সপ্তাহে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর চেয়ারম্যান নাসের আল খেলাফি বলেছিলেন, ‘নেইমারকে পিএসজিতে আসতে কেউ বাধ্য করেনি। ফুটবলারদের সবার থেকেই আমরা পেশাদারী মনোভাব আশা করি। এখানে কেউই আনন্দ করতে আসেনি।’ অনেক দিন ধরেই পিএসজি ছাড়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল নেইমারের। সর্বশেষ লেকিপ জানিয়েছে, খেলাফির সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং ইউরোপে পিএসজির ব্যর্থতা মিলিয়ে ক্লাব ছাড়তে রীতিমতো উঠেপড়ে লেগেছেন নেইমার। এতদিন রিয়াল মাদ্রিদের কথ শোনা গেলেও এখন শোনা যাচ্ছে, বার্সাতেই ফিরতে চাইছেন নেইমার। বার্সাও তাদের সাবেক ফরোয়ার্ডকে দলে নিতে একরকম মরিয়া। বাঁ-প্রান্তে ডেম্বেলে বা ফিলিপ কুতিনিহোদের কেউই নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। লুইস সুয়্যারেজ এবং লিওনেল মেসির সঙ্গে আবারও নেইমারকে একসঙ্গে দেখতে চায় বার্সা। তবে কাতালানদের প্রস্তাবে এখনও কিছু জানায়নি ফ্রেঞ্চ লীগ ওয়ানের চ্যাম্পিয়নরা। তবে আগামী মৌসুমে পিএসজির জার্সিতে নেইমারকে দেখার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না ক্লাবটির অভিজ্ঞ কোচ থমাস টাচেলও। গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসা খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, ইতোমধ্যেই নাকি ব্রাজিলিয়ান তারকার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলেছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। সেজন্য প্যারিস জায়ান্টরাও নেইমারের বিকল্প খুঁজতে উঠে পড়ে লেগেছে। হ্যাঁ, আরএমসির এক প্রতিবেদন বলছে- নেইমারের বিকল্প হিসেবে একদম পারফেক্ট খেলোয়াড় নাকি পাওলো দিবালা। সেজন্য জুভেন্টাসের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের প্রতি ব্যাপক আগ্রহী পিএসজির পরিচালক লিওনার্দো। ২০১৭ সালে ইতালিয়ান সিরিএ লীগের জায়ান্ট ক্লাব জুভেন্টাসে যোগ দেন দিবালা। তবে ওল্ড লেডিদের জার্সিতে গত মৌসুমটা মোটেও ভাল কাটেনি আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের। এই সময়ে ৪২ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করে প্রতিপক্ষের জালে মাত্র ১০ গোল করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। যে কারণেই দিবালার মূল্য কিছুটা কমে যায় জুভেন্টাসে। তবে জুভেন্টাসে কমলেও আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে পেতে মরিয়া ইন্টার মিলান, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবগুলো। কিন্তু এই দুই ক্লাবের প্রস্তাবই প্রত্যাখান করে দিয়েছেন দিবালা। তাহলে পিএসজির প্রস্তাব কী রাখবেন তিনি? ফুটবল ভক্তদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার। সান্তোস থেকে বড় স্বপ্ন নিয়েও ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু ২০১৭ সালে স্প্যানিশ লা লিগা ছেড়ে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতেই যোগ দেন এই ব্রাজিলিয়ান। এর ফলে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত দল বদলের নায়ক বনে যান তিনি। এরপর প্যারিসে যে সময়টা খুব ভাল কেটেছে নেইমারের তা বলা যাবে না মোটেও। বরং ইনজুরি আর বিতর্ক ছিল তার নিত্যসঙ্গী। কিন্তু তারপরও বর্তমান বিশ্ব ক্লাব ফুটবলের সবগুলো বড় দলই তাকে পেতে আগ্রহী। রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাঁকে পি এস জি কিনে নেওয়ার আগেও তাকে দলে ভেড়াতে চেয়েছে বার্সিলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। সেজন্য বিভিন্ন সময়ই ব্রাজিলিয়ান আইকনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছে রিয়াল। শুধু রিয়াল মাদ্রিদ কেন? তাঁকে কেনার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের জায়ান্ট ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও। কিন্তু শেষ মিনিটের সিদ্ধান্তে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড নয় বরং ন্যু ক্যাম্পেই থেকে যান নেইমার। কিন্তু কেন? নেইমারের মধ্যে কী রয়েছে? এর পেছনে কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো; বর্তমানে এমন ফুটবলারের সংখ্যা খুবই কম, যাদেরকে তাঁর সমর্থকরা মেসি কিংবা রোনাল্ডোর সঙ্গে তুলনা করেন। তবে কোন উইঙ্গার যদি নিজের সেরা পারফরম্যান্স উপহার দেয় তখনই তাকে নেইমারের সঙ্গে সাথে সাথেই তুলনা করা হয়। কিলিয়ান এমবাপে এবং এডেন হ্যাজার্ড, উভয়কেই নেইমারের সঙ্গে তুলনা করা হয়। শুধু মাঠের লড়াইয়ে যে তা নয়, মাঠের বাইরেও নেইমার অনেকের আদর্শ। নেইমারের বয়স ২৭এ ফুটবল বোদ্ধাদের ধারণা, আরও ৫ বছরেরও বেশি সময় বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের ক্লাবগুলোতে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন তিনি। এটা ভাবতেই বিস্ময়কর মনে হয় যে, নেইমারের এখনও সেরাটা দেওয়ার সময় আসেনি। বয়সের তুলনায় এখন তিনি মেসি ও রোনাল্ডোর চেয়ে ছোট। আর পারফরম্যান্সের বিচারে তো ইতোমধ্যেই তাদের ছাপিয়ে গেছেন এই ব্রাজিলিয়ান! পিএসজির আগে দেখুন না তিন বছর বার্সিলোনার জার্সিতেও কী অসাধারণ পারফরম্যান্সই না উপহার দিয়েছেন তিনি! এ তো গেল ক্লাবের কথা। নেইমারের কাঁধে তো পুরো ব্রাজিল দলেরই ভার। এই বয়সেই ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা গোলদাতাদের তালিকায় উঠে এসেছেন তিনি। তবে দক্ষিণ আমেরিকার কিংবদন্তি ফুটবলের ট্যাগ লাগাতে হলে অবশ্যই তাকে বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে হবে। নেইমারের আরেকটি গুন ফুটবলবোদ্ধাদের অনেকেরই জানা। সেটা হলো বড় ম্যাচের নায়ক। বার্সিলোনার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? প্রথম লেগে বার্সিলোনা ৪-০ গোলে পিছিয়ে ছিল। সমর্থকরা তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ, সেই ম্যাচ জেতা তো কল্পনাও করেননি কেউ! অথচ অসম্ভবকে সম্ভব করেন নেইমার। সেই ম্যাচে নিজে দুটো গোল করেন এবং পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে দুটো গোল করিয়েছিলেন তিনি। তাও মাত্র ৭ মিনিটের ব্যবধানে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এ যাবত কালের ইতিহাসে যে সবচেয়ে সেরা কামব্যাকের গল্প রচিত হয় এই ম্যাচেই!
×